‘আমরা জানি না কোথায় যাব’: রাফায় ইসরায়েলি অভিযানের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত ফিলিস্তিনিরা
গাজার রাফার পশ্চিমাঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া লক্ষাধিক মানুষকে সাময়িকভাবে সেখান থেকে 'হিউম্যানিটেরিয়ান জোন'-এ সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরায়েল যে এ শহরটি আক্রমণ করতে যাচ্ছে, এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সেটি আরও স্পষ্ট হলো।
এদিকে ইসরায়েলি অভিযানের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত ফিলিস্তিনিরা। তারা জানেন না পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন। কোন জায়গাটিই বা তাদের জন্য নিরাপদ হবে।
স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকাল ৯টায় রাফার পশ্চিমাঞ্চলে আকাশ থেকে লিফলেট বিতরণ করে সেখানকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এছাড়াও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে, ফোন করে এবং সম্প্রচারমাধ্যমেও রাফাহর বাসিন্দাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
গত বছর গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরুর পর প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ রাফায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের বসবাসের অবস্থাও খুব শোচনীয়।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েল নিরাপত্তার জন্য বরাবরই বেসামরিক ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র কিংবা নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে বলছে। কিন্তু এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে দেখা গেছে, ইসরায়েল যেটিকে গাজাবাসীর জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে বলেছে, সেখানেও তারা বিমান হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা রাফায় সৈন্য না পাঠাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। তারা বলছে, এ অভিযানের ফলে বহু বেসামরিক নাগরিকের প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে এবং তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন।
তা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বরাবরই এসব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তিনি বলছেন, ইসরায়েলের নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে হবে এবং হামাসকে নির্মূল করতে হবে।
রাফাহ শহর নিয়ে নেতানিয়াহুর এ অবস্থান যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং হামাসের হাতে জিম্মিদের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছিল যে রাফাহ শহরে অভিযানের আগে তারা আল-মাওয়াসির কাছে একটি হিউম্যানিটেরিয়ান জোন স্থাপন করবে। সেখানে বেসামরিক লোকেরা আশ্রয় নিতে পারবেন।
সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী জানায় যে তারা হিউম্যানিটেরিয়ান জোন স্থাপন করেছে এবং সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা, তাঁবু, খাদ্য ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র নাদাভ শোশানি সোমবার জানান, রাফার বাসিন্দাদের ব্যাপক পরিসরে সরে যেতে বলা হচ্ছে না। তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য চলে যেতে বলা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় জিম্মিদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত গাজার সবখানে হামাসের পিছু ধাওয়া করবে আইডিএফ।
'আমরা জানি না কোথায় যাব'
ইসরায়েলের নির্দেশনার পর আরেকটি জোরপূর্বক উচ্ছেদের মুখে পড়তে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। এ নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিজেদের ভয়ের কথা জানিয়েছেন রাফাহর বাসিন্দারা।
রাফাহর উত্তরে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন আবু মুহি। তিনি বলেন, 'তারা (ইসরায়েলি বাহিনী) রাফাহর পূর্ব এলাকার এবং পশ্চিম রাফাহর কিছু কিছু এলাকার বাসিন্দাদের চলে যেতে বলেছে…আমরা জানি না কী করতে হবে। যদিও আমি ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু করা এলাকার বাইরে রয়েছি, তারপরও আমি পরিবার নিয়ে দেইর আল-বালাহতে চলে যাব।'
রাফাহর শরণার্থী আবু রায়েদ বলেন, 'প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে এবং আমরা জানি না কোথায় যেতে হবে। এ দিন যে আসতে পারে তা নিয়ে আমি আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমাকে এখন দেখতে হবে পরিবার নিয়ে কোথায় যেতে পারি।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক