পুরনো ফোন ফেলবেন না! কীভাবে পুনর্ব্যবহার করবেন আপনার প্রযুক্তি
প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান এবং জনস্বাস্থ্য সবক্ষেত্রেই ঝুঁকি হয়ে উঠেছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-ওয়েস্ট। দিনে দিনে এ সমস্যা আরও বড় হচ্ছে। পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন মানুষ আরও ২১% বেশি ই-বর্জ্য তৈরি করছে।
নিজ পছন্দের মুঠোফোনটির কথাই ভাবুন। বড়জোর এক বছর, তারপর সেটাও পুরোনো হয়ে যাবে বাজারে আসা অত্যাধুনিক পণ্যের বদৌলতে। বেশিরভাগ সময় এক বছরও অপেক্ষা করতে হয় না।
তাই নতুন কোনো পণ্য বাজারে আসলেই পুরনোটি ফেলে দেওয়ার আগে, সেটি পুনঃব্যবহার করা যায় কিনা- তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
জানলে বিস্মিতই হবেন যে, আপনার কয়েক বছর পুরোনো হার্ডওয়ারটিও ব্যবহার উপযোগী হতে পারে। এবং এমন সবক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব যা সত্যিই চমৎকার। পুরোনো যন্ত্রটি এখন তার আসল কাজ না করতে পারলেও, অন্যভাবে তা ব্যবহারের অনেক সুযোগ আছে।
নিজ পছন্দের এমন কিছু আইডিয়া দিয়েছেন দ্য ওয়ারের প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক ডেভিড নিল্ড। এর সঙ্গে নিজের কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে আপনিও তৈরি করতে একেবারে নতুন কিছু।
পুরোনো ফোনটি নিরাপত্তা ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার:
স্মার্টফোনটি বেশি পুরোনো হয়ে গেলেও, তা ফেলে দেবেন না। জরাজীর্ণ হলেও তাতে অনেক প্রযুক্তি থাকতে পারে, যা আপনি ভিন্ন কাজে লাগাতে পারেন। এমনই একটি কাজ হচ্ছে, সেটিকে নিরাপত্তা ক্যামেরা হিসেবে ব্যবসার করা।
পুরোনো ফোনটিতে শুধু ভিডিও ধারণ এবং সম্প্রচারের প্রযুক্তি কাজ করলেই যথেষ্ট। এবার তা নিজের ঘরে লাগিয়ে- পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসে ইন্টারনেট সংযোগের কল্যাণে দেখতে পারবেন, কে বা কারা আপনার ডেরায় অনধিকার চর্চা করতে আসছে।
ফোনটি ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহারের জন্য আপনার দরকার হবে ট্রাইপড বা এ ধরনের কোনো ধারক। একটু বেশি সৃজনশীল হলে; বইয়ের তাকেও তা লুকিয়ে রাখতে পারেন।
সঙ্গে কিছু সফটওয়্যারও দরকার হবে। মেনিথিং ও আলফ্রেড এ ধরনের সফটওয়্যার, যা অ্যানড্রয়েড এবং আইওএস দুই ধরনের প্লাটফর্মেই ডাউনলোড করা সম্ভব। এদুটি সবচেয়ে ভালো হলেও, এমন আরও অনেক অ্যাপ আছে। নির্দেশনা মেনে সেগুলো ইনস্টল করাও এমন জটিল কিছু নয়।
শুধু মুঠোফোন নয়, ট্যাবলেট ধাঁচের গ্যাজেটও এভাবে ব্যবহার করা যাবে। তবে একটু বেশি বড় হওয়ায় সেগুলো গোপন জায়গায় রাখা হয়তো একটু কঠিন হবে।
এখন আবার অধিকাংশ ফোন বা ট্যাবলেট ওয়াটারপ্রুফ। তাই চাইলে বাড়ির বাইরেও লাগানো যেতে পারে। ডিভাইস স্থাপনের পর, সেটি যেন সবসময় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় থাকে, ব্যস সেটি নিশ্চিত করলেই যথেষ্ট।
ফোন বা ট্যাবলেট দিয়ে বানিয়ে ফেলুন সম্প্রচার মাধ্যম আর রিমোট:
গত কয়েক বছরে আমরা অনেক ধরনের ভিডিও স্ট্রিমিং দেখছি। ক্যামেরার নিপুণ কারসাজি আর চমৎকার দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা দেখা যায় সেখানে। চাইলে আপনিও একজন বিখ্যাত মিডিয়া স্ট্রিমার হয়ে উঠতে পারেন। পুরনো ডিভাইসগুলো ওয়্যারলেস প্রযুক্তির সাহায্যে ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করা হলে, আপনার ভিডিওতে যোগ হতে পারে নতুন নতুন কোণ। পছন্দের কৌণিক অবস্থানে শুধু সেগুলো স্থাপনের কৌশল বের করাটাই হবে আপনার নিজস্ব সৃজনশীলতা।
আবার অ্যাপলের এরায়প্লে এবং গুগলের ক্রোমকাস্ট সার্ভিসের সঙ্গীত শুনতে স্পিকার হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে ট্যাবলেট বা মুঠোফোন।
একাধিক ফোন থাকলে তা রিমোট হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। নিজের অ্যাপল টিভি চালাতে রিমোটের চাইতে ভালো কাজ দেবে আপনার পুরোনো আইফোনটি-ই।
এতে আপনার নতুন ফোনটি যেমন চাপমুক্ত থাকবে, তেমনি বাড়বে ব্যাটারির আয়ু।
ল্যাপটপ হয়ে উঠতে পারে মিডিয়া সেন্টার:
পছন্দের ভিডিও, ছবি বা গান সংরক্ষণে আপনার পুরনো ল্যাপটপটি হতে পারে আদর্শ। সেখান থেকেই পুরো বাড়িতে লাগানো স্ক্রিন বা স্পিকারে সম্প্রচারিত করতে পারেন, পছন্দের গান বা ভিডিও। ফলে আপনার নতুন ল্যাপটপে অনেক জায়গা বেঁচে যাবে।
ল্যাপটপকে মিডিয়া সেন্টার বানাতে সবচেয়ে উপযুক্ত সফটওয়্যার প্লেক্স ও কোডি। আর চাইলে এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে বাড়ির বাইরের মিডিয়া ডিভাইস।
আবার পুরনো ফাইল সংরক্ষণে ব্যবহার করা হলে, নতুন ল্যাপটপ থেকে তা রিমোট অ্যাক্সেসের সাহায্যে তা সময়মত বিশ্লেষণ করতে পারবেন। উইন্ডোজ এবং ম্যাকওএস দুটি অপারেটিং প্লাটফর্মই দেয়- হোম নেটওয়ার্ক পরিচালনার সহজ উপায়। নেটওয়ার্কে যুক্ত সকল হার্ডড্রাইভ এর ফলে অফিসের মতোই সহজে বাড়িতে বসেও অ্যাক্সেস করা যায়।
পুরোনো ডিজিটাল ক্যামেরা হতে পারে ভালো ওয়েবক্যাম:
ধরুন কিছুদিন আগেই একটি উন্নত মানের নতুন ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনেছেন। সেটার খরচ কিছুটা ওঠাতে হয়তো পুরোনোটি বিক্রিই করে দেবেন। তবে যদি পুরনোটি রাখতে হয়, তবে ফেলে রাখবেন না। তার উপযুক্ত ব্যবহার করুন ওয়েবক্যাম হিসেবে।
প্রচলিত ওয়েবক্যামের চাইতে ভালো মানের ছবি ও ভিডিও দেবে আপনার পুরোনো ডিজিটাল ক্যামেরাটি। এখন বেশিরভাগ ল্যাপটপে বিল্টইনক্যাম থাকলেও, তা ডিএসএলআর- এর মতো ঝকঝকে চিত্র সম্প্রচার করতে পারে না।
অফিসের কাজে জুম কল করার সময় ডিজিটাল ক্যামেরা আপনার উপস্থাপনাকে করবে আরও আকর্ষণীয়।
ক্যামেরা নির্মাতারাও এখন ভিডিও চ্যাট বা সম্প্রচারের কথা মাথায় রেখে এখন তৈরি করছে বিশেষায়িত সফটওয়্যার। এজন্য বিশেষ টুলস দিচ্ছে; সনি, ক্যানন, ফুজিফিল্ম এবং অন্যান্য উৎপাদকেরা। 'গো প্রো' এজন্য 'আউট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড' নামের একটি প্রোগ্রামও লঞ্চ করেছে।
- সূত্র: দ্য ওয়্যার