প্রকৃতিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে কি হেরে যাবে মানব প্রজাতি?
মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম মানুষ বিবর্তিত হয় ৬০ লক্ষ বছর আগে। এই ৬০ লক্ষ বছরে প্রকৃতির সঙ্গে টিকে থাকতে পেরেছে শুধু হোমো স্যাপিয়েন্সরাই। আজ থেকে ২/৩ লক্ষ বছর আগে তাদের আবির্ভাব হয়। অর্থাৎ আমরা ছাড়াও হোমো গোত্রের বহু প্রজাতি একসময় ঘুরে-ফিরে বেড়াত পৃথিবীর বুকে। অভিযোজন আর বিবর্তনে হোমা সেপিয়েন্সরা টিকে থাকতে পারলেও, বাকিরা পারেনি।
তার অন্যতম কারণ হল জলবায়ুগত পরিবর্তন। কখনও খুব গরম, কখনও তীব্র শীত। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি মানুষের অন্য প্রজাতির সদস্যরা। ফলে সভ্যতার ক্রমঅগ্রগতির পথ ধরে আর বিবর্তনের হাত ধরে বহু যুগ পেরিয়ে শুধু আমরাই টিকে আছি।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন এমন বিলুপ্তির পথে যেতে পারি আমরা আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সরাও। যদিও তা অনেকটাই সুদূর কল্পনা।
১৫ অক্টোবর ওয়ান আর্থ জার্নালে এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। যেখানে গবেষকদের দল জানায়, বিলুপ্ত প্রজাতিগুলির জীবাশ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে এক সময়ে পৃথিবীর বুকে যারা জীবনধারণ করত, জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে তারা ধীরে ধীরে একসময় হারিয়ে গেছে। বিগত পাঁচ মিলিয়ন বছর ধরে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, প্রাণীদের জীবাশ্ম এবং অন্যান্য তথ্য অধ্যয়ন করেন বিজ্ঞানীরা। দেখেন, হোমো প্রজাতির অর্থাৎ হোমো হাবিলিস, হোমো ইরগাস্টার, হোমো ইরেক্টাস, হোমো হাইডেলবার্জেনেসিস, হোমো নিয়ান্ডারথ্যালসরা ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে। কিন্ত শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে, জলবায়ুর পরিবর্তন সহ্য করতে না পেরে হারিয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে, ইতালির নাপোলি ফেদেরিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাসকোয়েল রাইয়া জানান, পাথরে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানো আর পাথরের সরঞ্জামের ব্যবহারের যুগ থেকে বর্তমানের এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগের যাত্রাপথ অনেকটাই দীর্ঘ। আর এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে বিবর্তন হতে হতে একে একে হারিয়ে গিয়েছে হোমোগোত্রের বাকি প্রজাতিরা। সাংস্কৃতিক, সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ুগত বৈচিত্র্য তাদের জীবনধারনের সংগ্রামকে দিন দিন আরও কঠিন করে দিয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে এই অভিযোজনকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। ঠাণ্ডা লাগলে উষ্ণতার সন্ধানে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা শেষমেশ সাফল্য পায়নি।
জীববিজ্ঞানীদের অনুমান, আধুনিক মানবজাতিকেও এই গবেষণা কোথাও যেন একটা অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে। কারণ যদি জলবায়ুর পরিবর্তন অতীতে হোমোগোত্রের অন্য প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ হতে পারে, তা হলে ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ুর খামখেয়ালি পরিবর্তন এক সময়ে হোমা সেপিয়েন্স মানুষের বিলুপ্তির কারণও হতে পারে!
সূত্র: নিউজ ১৮
