অর্থনীতিতে তারল্য সঞ্চারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদহার কর্তন
২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ বুধবার ঘোষিত এ মুদ্রানীতির আলোকে রেপো, রিভার্স রেপো এবং ব্যাংক রেটে নির্ধারিত সুদহার কমানো হয়েছে। স্বল্পব্যয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে তহবিল সঞ্চার এবং বাজারে প্রচলিত সুদহারের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাকের নির্ধারিত সুদহারকে যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
চলতি অর্থবছরের জন্য সর্বশেষ মুদ্রা নীতি বিবৃতিতে (এমপিএস) আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের মূল লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রসারণমূলক ও প্রশংসনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে।
''অর্থবছরের জন্য আর্থিক নীতিগত অবস্থান এবং আর্থিক কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো; কোভিড -১৯ মহামারির প্রতিকূলতা থেকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষমতা পুনর্বাসনের পাশাপাশি জনগণের সাধারণ জীবিকা পুনরুদ্ধারসহ পণ্যমূল্য স্থিতিশীলতা এবং মান-সম্মত প্রবৃদ্ধির দ্বৈত লক্ষ্য বজায় রাখা'' বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতিমালার অবস্থান এবং তহবিলের অতিরিক্ত চাহিদার প্রস্তুতিকে সমর্থন করে এই মুদ্রানীতি ঘোষণার আওতায়- রেপো হারকে ৫.২৫ শতাংশ থেকে রাতারাতি ৪.৭৫ শতাংশে এবং রিভার্স রেপো হারকে ৪.৭৫ শতাংশ থেকে ৪.০০ শতাংশে হ্রাস করার প্রস্তাব দিচ্ছে। যার মূল লক্ষ্য, ব্যাংকগুলির জন্য কম ব্যয়বহুল তহবিলের যোগান নিশ্চিত করা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের সুদ হারের করিডোরকে যৌক্তিক করে তোলা (রেপো এবং বিপরীত রেপো হারের মধ্যে ব্যবধান)।
তহবিল সঙ্কট দেখা দিলে, বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্ধারিত যে সুদহারে অর্থ সংগ্রহ করে, তাই হচ্ছে রেপো রেট। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এ মূল সুদহারটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত ঋণের সুদহার নির্দেশ করে রিভার্স রেপো রেট।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত সুদহার দেশে ১৭ বছর পর পরিবর্তন করা হলো। এর আগে সর্বশেষ পরিবর্তন করা হয়েছিল ২০০৩ সালে। ওই সময় থেকে চলে আসা ৫ শতাংশ নির্দিষ্ট সুদহারকে বর্তমান বিবেচনার আওতায় ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এসব পরিবর্তন করা হবে।
কোভিড -১৯ মহামারিতে দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মুদ্রানীতি পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করবে না বলেই বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
রেপোর সুদ কমলে ব্যাংকগুলো কম খরচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল পাবে। তাতে তারা কম সুদে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিতে পারবে।
অন্যদিকে রিভার্স রেপোর সুদ হার কমানোর অর্থ হলো, ব্যাংকগুলোকে চাপ দেওয়া, যাতে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে মুনাফা না তুলে ব্যবসা ও উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ায়।
মুদ্রানীতি বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১ অর্থবছরে ভোক্তাপর্যায়ে ৫ দশমিক শূন্য ৪ থেকে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির অনুমান করছে। ২০২২ অর্থবছরে ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক শূন্য শূন্য থেকে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত হওয়ার আভাস দিয়েছে দেশের শীর্ষ আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি।
তবে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির সীমা পূর্ববর্তী লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত মুদ্রানীতিতেও (২০১৯-২০) বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছিল। কিন্তু, মহামারির ধাক্কায় এই প্রবৃদ্ধি এ যাবতকালের সর্বনিম্ন; ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে পর্যায়ে নেমে এসেছে।
মূল লেখা: Bangladesh Bank aims to pump more money into economy, cuts rates