যে কারণে কাজে আসছে না এসএমই খাতের অনেক সৃজনশীল ধারণা
বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) নতুন নতুন ব্যবসা চালুর সম্ভাবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। প্রয়োজনীয় রিসোর্স থাকলেও ঘাটতি আছে তথ্যের প্রবাহে। নেতৃত্বের গুণাবলী, প্রশিক্ষিত জনবল, কানেকটিভিটি আর শিক্ষার কারিকুলামে দুর্বলতার কারণে কাজে আসছে না সৃজনশীল ধারণাগুলো।
এসএমই ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৌশলপত্রের খসড়া প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এভাবেই দেশের এসএমই খাত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে তারা বলেন, তথ্য না থাকায় নতুন ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় থাকেন। তাছাড়া অফিস স্পেস ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা তাদের প্রয়োজন হয়। এসব সমস্যা সমাধানে ইনকিউবেশন সেন্টার পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
সেকেন্ড স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজড এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এসএমইডিপি-২) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে এ কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এসএমইডিপি-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অবদান আরও সম্প্রসারিত করার কোনো বিকল্প নেই।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমানের পরিচালনায় কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান।
মাসুদুর রহমান বলেন, উদ্যোক্তাদের সহায়তায় এবং এসএমই নীতিমালা ২০১৯ বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা করবে। দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন সেন্টার অব এক্সেলেন্স হিসেবেও কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে খসড়া কৌশলপত্র তুলে ধরেন এডিবির পরামর্শক এবং আন্তর্জাতিক ইনকিউবেশন সেন্টার বিশেষজ্ঞ হিউলিয়া টেটিক। তিনি এসএমই ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে দেশব্যাপী ইউকিউবেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় একটি জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের ধারণা দেন।
তিনি বলেন, এ কমিটির আওতায় শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিসিক, নাসিব, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বিটাক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালরের প্রতিনিধিরা কাজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, এই কমিটি উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টারকে কার্যকর করতে জাতীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
নতুন উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন প্রাপ্তিতে সহায়তা ও কর সুবিধা নিশ্চিত করা, কর ব্যবস্থা সহজীকরণ, নগদ সহায়তা এবং সফল উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার কাজ করবে জাতীয় সমন্বয় কমিটি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিচিত চৌধুরী বলেন, এডিবির অর্থায়নে সফলভাবেই স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজড এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের দুই পর্ব বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ বেশ গুরুত্ব দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তদারক করেছে বলেও তিনি জানান।
শিল্পায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির পর্যাপ্ত ব্যবহার না হলে করোনা ভাইরাস থেকে অর্থনীতির সুরক্ষায় সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হতো না।
কর্মশালায় মোঃ মফিজুর রহমান জানান, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরি চালু করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এমন সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, এসএমইডিপি-২ প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার পরিচালিত হবে।
এসব বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরিতে পরামর্শ ও সহায়তার পাশাপাশি অফিস স্পেস ব্যবহার এবং কারিগরি সহায়তা পাবেন উদ্যোক্তারা।