সরকারি ক্রয়ে বড় বরাদ্দ এসএমইর জন্য রাখতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) প্রসার, বাজার সম্প্রসারণ ও উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি কেনাকাটায় এই খাত থেকে ২৫ শতাংশ পণ্য ও সেবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এজন্য সরকারের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস ২০০৮ (পিপিআর ২০০৮) সংশোধন করতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পিপিআর ২০০৮-এ এসএমই পণ্য কেনার বিশেষ কোনো প্রভিশন না থাকায় সরকারের কেনাকাটায় এসএমই উদ্যোক্তাদের অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে।
২০১৯ সালে সরকার যে এসএমই নীতিমালা ঘোষণা করে, তাতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বা সেবা এসএমইগুলোর কাছ থেকে কিনতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির কথা বলা হয়।
এর আলোকেই সরকারি কেনাকাটায় ন্যূনতম ২৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা এসএমইগুলোর কাছ থেকে নিতে পিপিআর ২০০৮ সংশোধন করতে গত অক্টোবরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ ধরনের শিল্পের সংখ্যা প্রায় ৭৮ লাখ এবং জিডিপিতে এই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। এসএমই নীতিমালায় ২০২৪ সালের মধ্যে জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৩২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, সরকারি কেনাকাটায় এসএমইগুলোর জন্য কোটা থাকলে উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা হবে, পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে। সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে।
এতে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতেও এসএমই উদ্যোক্তারা মনোযোগী হবেন বলে তিনি মনে করেন।
আইএমইডির সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শোহেলের রহমান চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'চিঠিটি এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছেনি। তবে আমরা নিজ উদ্যোগেই সরকারি কেনাকাটায় এসএমই, নারী উদ্যোক্তা ও স্ট্রার্টআপদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। এজন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান সংশোধনের চিন্তা ভাবনা চলছে।'
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম জানান, তিনি ছুটিতে রয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবগত নন। একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (এসএমই ও বিটাক) ফেরদৌসী বেগম বলেন, 'চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা আইএমইডিকে পিপিআর ২০০৮ সংশোধনের জন্য চিঠি দিয়েছি।'
সরকারি ক্রয়ে এসএসই খাতের পণ্য ও সেবা অর্ন্তভুক্ত করতে গত অক্টোবরে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় এসএমই ফাউন্ডেশন। সেই চিঠির আলোকেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে পিপিআর সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সরকারি ক্রয়ে এসএমইর পণ্য ও সেবার জন্য জন্য ২৫ শতাংশের কোটা থাকলে এর আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে, এটা এসএমই উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বিশাল ভূমিকা রাখবে। দেশে আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থান হবে বিপুল সংখ্যক মানুষের।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সহায়তা দিতে বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি কেনাকাটায় এ ধরনের কোটা থাকে। এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এটা ২৫ এবং চীনে ৩০ শতাংশ।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন সরকারি ক্রয়ে এসএমইগুলোর জন্য কোটা রাখার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি। প্রতিবেশি ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি কেনাকাটায় এসএমইদের জন্য নির্দিষ্ট কোটা থাকে।'
২৫ শতাংশ কোটা রাখা হলে সে অনুযায়ী পণ্য বা সেবা সরবরাহ করার সক্ষমতা দেশের এসএমইগুলোর আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আইনে কোটা নির্দিষ্ট করা হলে গুণগত মানের পণ্য ও সেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা এসএমইগুলোর এমনিতেই তৈরি হয়ে যাবে। আমি তো কোনো সমস্যা দেখছি না।'
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, কোভিড সরকারি শাটডাউনের দুই মাসেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষতি হয়ে ৯২ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে এই খাতের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে জোরাল ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।