৩০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি: মামলার ভয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন ব্যবসায়ী

দুই বছর ধরে মালয়েশিয়া পালিয়ে রয়েছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী শাহ আলম। এক সময় ভোগ্য পণ্য ব্যবসায় থাকা মেসার্স আলম অ্যান্ড কোং-এর এই স্বত্বাধিকারীর কাছে আটটি ব্যাংকের বর্তমান খেলাপি পাওনা প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
পাওনাদার ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যবসার পরিধি ও সুনামের চেয়েও রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ পেয়েছেন শাহ আলম। ব্যাংকের টাকায় ব্যবসা করে সম্পদের পরিধি বেড়েছে বছর-বছর। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ঋণের সেই টাকা ফেরত না দিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।
পাওনাদার ব্যাংক ও আদালতের তথ্যমতে, প্রায় ৩০০ কোটি পাওনার বিপরীতে ব্যবসায়ী শাহ আলমের বিরুদ্ধে আটটি ব্যাংক এ পর্যন্ত ৫৪টি মামলা দায়ের করেছে। এরমধ্যে ৪৭টি এনআই অ্যাক্টে দায়ের করা মামলা। বাকি ৭টি মামলা করা হয়েছে অর্থঋণ আদালতে। এরমধ্যে গত বছরের বিভিন্ন সময়ে রায় হওয়া এনআই অ্যাক্টের ৬ মামলায় ৬ বছরের সাজা হয়েছে শাহ আলমের। এছাড়া অর্থঋণের ৪ মামলায়ও রায় হয়েছে।
১০ বছর আগে থেকেই বিভিন্ন পাওনাদার ব্যাংক শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের শুরু করে। কিন্তু মামলাগুলোতে উচ্চ আদালতের স্থিতি অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন সময় ক্ষেপন করেন তিনি। পরবর্তীকালে মামলাগুলোর স্থিতি অবস্থা উঠে গেলে ২০১৯ সালের শুরু থেকে একের পর এক রায় হতে শুরু করে। কিন্তু এসব মামলায় রায় হওয়ার আগেই দেশত্যাগ করেন এই ব্যবসায়ী।
পাওনাদার ব্যাংক ও পারিবারিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ২০১৮ সালের শেষ দিকে সপরিবারে মালয়েশিয়া পালিয়ে যান আলম অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী শাহ আলম। মালয়েশিয়া থেকে ট্রিটমেন্ট নিতে মাঝখানে ভারতে যান এই খেলাপি। এরপর করোনার আগে মালয়েশিয়া থেকে সপরিবারে ইন্দোশিয়া ভ্রমণে যান। এমনকি করোনার সময় শাহ আলম ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম ইন্দোনেশিয়ায় আটকা পড়েন। পরে লকডাউন শেষ হলে ইন্দোনেশিয়া থেকে তারা মালয়েশিয়া ফেরেন।
সর্বশেষ অক্টোবরের মাঝামাঝিতে তার স্ত্রী দেশে ফিরলেও পুত্র ও পুত্রবধূর সঙ্গে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে অবস্থান করছেন শাহ আলম। উল্লেখ্য, শাহ আলমের মেজ ছেলে মনি ভারতীয় বংশদ্ভূত এক মালয়েশিয়ান নাগরিককে বিয়ে করে আগে থেকে সেদেশে অবস্থান করছেন।
এই বিষয়ে খুলশি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামান ও থানার ওয়ারেন্ট অফিসার আনোয়ার হোসাইন জানান, ব্যবসায়ী শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় সাজা হওয়ার পর কয়েকবার দক্ষিণ খুলশিতে তার বাসায় গিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরেছে, তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন।
শাহ আলমের অবর্তমানে ব্যবসা দেখাশোনা করছেন তার বড় ছেলে পারভেজ আলম হীরা। পারভেজ আলমের স্ত্রী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি সংরক্ষিত আসনে মনোনীত সংসদ সদস্য।
এ ব্যাপারে কথা বলতে পারভেজ আলমের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে গত তিন ধরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আলম অ্যান্ড কোং-এর স্বত্বাধিকারী শাহ আলমের পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া সম্পদের মধ্যে ছিল চট্টগ্রামের সদরঘাট রুটের 'হোটেল হিরো সিটি' এবং হোটেলের নিচতলায় এয়ার বাংলা ট্রাভেল। এছাড়া দীর্ঘদিন বিএসআরএম'র এজেন্ট ছিল আলম অ্যান্ড কোং।
২০০০ সালের দিকে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্য ব্যবসা শুরু করেন শাহ আলম। এরপর ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ভোগ্যপণ্য ব্যবসা ও আমদানিতে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। ওই সময় ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় বেশিরভাগ ব্যাংক সহজে ঋণ বিতরণ করে। এছাড়া ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে বেশির ভাগ ঋণ ভাগিয়ে নিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। কিন্তু ঋণের টাকায় ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বাড়লেও পরিশোধ করেনি ব্যাংকের টাকা। ফলে এই প্রতিষ্ঠানের কাছে আট ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।
ব্যাংক এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জোনাল হেড (চট্টগ্রাম) এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, 'পারিবারিকভাবে ব্যবসায় যুক্ত হলেও শাহ আলম খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। যার ফলে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সহজে ঋণ সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসার জন্য ঋণ নিলেও সেই টাকা বিনিয়োগ করে তিনি জমি কিনেছেন। এভাবে ব্যাংকের টাকা আটকে যাওয়ায় পাওনাদার ব্যাংকগুলো টাকা উদ্ধারে একের পর এক মামলা দায়ের শুরু করে।'
পূবালী ব্যাংক
এক সময় পূবালী ব্যাংক সদরঘাট শাখার বড় গ্রাহক ছিল আলম অ্যান্ড কোং। তখন রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম'র এজেন্ট হিসেবে ভালো ব্যবসা করত প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে শাখার সবচেয়ে বড় খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, 'আলম অ্যান্ড কোং-এর আদি প্রতিষ্ঠান হোটেল হিরো সিটি। আবাসিক হোটেলটি আমাদের ব্যাংকের (সদরঘাট শাখা) পাশেই অবস্থিত। ফলে দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর থেকেই ব্যবসা করে আসছি প্রতিষ্ঠানটির সাথে। প্রথম দিকে আবাসিক হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি বিএসআরএম-এর রডের ব্যবসার এজেন্ট ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এক পর্যায়ে ব্যবসা বিস্তার করে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যে। প্রথমদিকে লোকাল ট্রেডিং করলেও পরবর্তীকালে আমদানি ব্যবসা শুরু করে। এ সময় বড় ধরনের ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০১১-১২ সালে বড় অংকের ঋণ নিয়ে আমদানি ব্যবসা করলেও সেই ঋণ এখনো ফেরত আসেনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ৫২ কোটি টাকা।'
ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের বিরুদ্ধে এনআই এ্যাক্টে ২৭টি মামলা দায়ের করেছে পূবালী ব্যাংক। ২০১৩-১৪ সালে দায়ের করা এসব মামলার মধ্যে গত বছরের ১১ এপ্রিলে একটির (১২৩/২০১৩) রায় হয়েছে। রায়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শাহ আলমকে এক বছরের সাজা ও চেকের সমপরিমান (১ কোটি ২৮ লাখ টাকা) অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। আরও একটি চেকের মামলা রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়া ২০১৫ সালে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলাটি এখন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধিন হোটেল হিরো সিটি, খুলশির বাড়ি এবং মাশরিফা ফুড প্রোডাক্টসের ভূমিসহ স্থাপনাগুলো ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণের মাত্র ৩০ শতাংশ আদায় হবে বলে মনে করছেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এনসিসি
২০১২ সালে গম আমদানিতে এনসিসি ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নেয় শাহ আলমের অপর প্রতিষ্ঠান আসাদ করপোরেশন। আমদানিকৃত গমে লোকসান দেওয়ার কথা বলে ঋণের সেই টাকা এখনো ফেরত দেননি তিনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার পাওনা ৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
ঋণের বিপরীতে দায়ের করা এনআই এ্যাক্টের দুটি মামলায় প্রত্যেকটিকে এক বছর করে সাজা হয়েছে শাহ আলমের। এছাড়া সমপরিমাণ অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
গত বছরের ১৯ জুন ও ৩০ সেপ্টেম্বর পৃথক দুটি মামলার রায় হয়।
এছাড়া ব্যাংকের ২০১৮ সালে দায়ের করা অর্থঋণ (৫১১/২০১৮) মামলায়ও সাজা হয়েছে শাহ আলমের। গত ১১ নভেম্বর ওই মামলার রায় হয়। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে শাহ আলমের ১১ কাঠা জমিসহ তিনটি ভবন বন্ধক রয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক ২০-২৫ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ব্যাংক এশিয়া
শাহ আলমের অপর প্রতিষ্ঠান আলম এন্টারপ্রাইজের কাছে ব্যাংক এশিয়া খাতুনগঞ্জ শাখার পাওনা প্রায় ২৯ কোটি টাকা। ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে আলম এন্টারপ্রাইজ। এরমধ্যে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ঋণগুলো আটকে গেছে। গম ও চিনি আমদানির জন্য এই ঋণ সুবিধা নিয়েছিল আলম এন্টারপ্রাইজ।
ঋণের বিপরীতে ২০১৬ সালের দিকে এনআই অ্যাক্টে ব্যাংকের দায়ের করা ৩টি মামলা বর্তমানে সাক্ষী শেষে জেরা পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া পাওনা আদায়ে ব্যাংকটি অর্থঋণ আদালতেও মামলা দায়েরের প্রস্তুনি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঋণের বিপরীতে মেহেদীবাগের আরামবাগ এলাকায় ৫ গন্ডা জমিসহ একটি ৪ তলা ভবন বন্ধক রয়েছে, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে সেটির নিলাম আহ্বান করা হলেও কোনো দরদাতা পাওয়া যায়নি।
প্রিমিয়ার ব্যাংক
মালিক পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্কের খাতিরে প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ সুবিধা পেয়েছেন মেসার্স আইমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম। কিন্তু ২০১০ সালে নেওয়া সেই ঋণের টাকা শোধ করেননি দীর্ঘ ১০ বছরেও। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রিমিয়ার ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার পাওনা প্রায় ৯০ কোটি টাকা।
পাওনা আদায়ে ২০১২ সালে শাহ আলমের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্ট মামলা দায়ের করে ব্যাংক। মামলাটি উচ্চ আদালতের স্থিতি আদেশ শেষে বর্তমানে সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া ২০১৪ সালে দায়ের করা অর্থঋণ মামলাটি ২৪৫/২০১৪ জেরা শেষে বর্তমানে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।
ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির সিকিউরিটির পরিমাণ খুবই কম বলে উল্লেখ করেন ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইভিপি ও খাতুনগঞ্জ শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (বর্তমান জুবলী রোড শাখার ব্যবস্থাপক) নুরুল আবছার বলেন, 'তৎকালীণ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের ম্যানেজ করে ঋণ ভাগিয়ে নিয়েছেন শাহ আলম। আমি খাতুনগঞ্জ শাখায় দায়িত্ব পালনকালে অনেক চেষ্টা করেছি এই টাকা উদ্ধারের। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধের মানসিকতা নেই। তাই আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি। এখন বিভিন্ন ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় সাজা হতে শুরু হলে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান।'
ওয়ান ব্যাংক
২০০৫ সালে ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় ব্যবসা শুরু করে শাহ আলমের প্রতিষ্ঠান শাওন অ্যান্ড সন্স। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণ সুবিধা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১০ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা (৬৩/২০১০) দায়ের করে ব্যাংক।
অর্থঋণে রায়ের পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে জারি মামলা করা হয়। বর্তমানে মামলাটি জারি মামলায় রয়েছে।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী- প্রতিষ্ঠানটির কাছে ওয়ান ব্যাংকের বর্তমান পাওনা ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টে ৬টি মামলা দায়ের করেছে পাওনাদার ব্যাংক। মামলাগুলোর মধ্যে দুটিতে উচ্চ আদালতের স্থিতিবস্থা রয়েছে। তিনটি চার্জ গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি একটি রয়েছে সাক্ষীর অপেক্ষায়।
পাওনার বিপরীতে ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির জঙ্গল লতিফপুর এলাকার ৮০ শতক জমি বন্ধক রয়েছে। অর্থঋণ মামলা দায়েরের আগে জমিটি নিলামে তুলেও উপযুক্ত দরদাতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। ২০১১ সালের ব্যাংকের ভ্যালুয়েশন অনুযায়ী জমিটির মূল্য এক কোটি টাকা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক
চট্টগ্রাম অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের নামে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেন শাহ আলম। দীর্ঘদিনেও ব্যাংক ঋণ শোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শাহ আলমের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে এনআই অ্যাক্ট ও অর্থঋণ মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এরমধ্যে এনআই অ্যাক্টে দায়ের করা মামলায় (৬০৭/২০১৭) শাহ আলমের বিরুদ্ধে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় গত বছরের ১৬ অক্টোবর ঘোষিত রায়ে। এছাড়া অর্থঋণ মামলাটি (৪৬২/২০১৭) সাক্ষীদের জবানবন্দী শেষে জেরার পর্যায়ে রয়েছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি টাকা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
২০১২ সালে লোকাল এলসি ও ভোগ্যপণ্যে সোশাল ইসলামী ব্যাংক জিইসি শাখা ঋণ সুবিধা নেয় আলম অ্যান্ড কোং। অন্যান্য ব্যাংকের মতো এই ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণও শোধ করেননি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শাহ আলম। এই পাওনা উদ্ধারে ২০১৫ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংক। অর্থঋণ আদালত থেকে রায় হওয়ার পর মামলাটি জারি মামলা হিসেবে রয়েছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের মোট পাওনা ১৩ কোটি টাকা।
ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির ১১৯ জমি বন্ধক রয়েছে ব্যাংকের কাছে। এরমধ্যে ১৬ শতক নগরীর বউ বাজার এলাকার। বাকি ১০৩ শতক জমি জঙ্গল লতিফপুর এলাকার হলেও জমিগুলো চিহ্নিত করা নেই ব্যাংকের কাছে।
ইস্টার্ন ব্যাংক
মেসার্স পারভেজ এন্টারপ্রাইজ নামে ইর্স্টান ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় দীর্ঘদিন ব্যবসা করেন শাহ আলম। শেষে ২০০৮ সালে ভোগ্য পণ্য আমদানির জন্য বড় অংকের ঋণ নিলেও এখনো শোধ করেননি সেই টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঋণ আদায়ে ২০১০ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।
অর্থঋণ আদালতের রায়ের পর মামলাটি বর্তমানে জারিতে রয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২০১৩-২০১৬ সালের বিভিন্ন সময়ে এন আই অ্যাক্টে ৭টি মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এরমধ্যে ৬১২/২০১৪ নম্বর মামলায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এবং ৩৭২৮/২০১৪ নম্বর মামলায় গত অক্টোবরে সাজা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শাহ আলমের বিরুদ্ধে।
আলম অ্যান্ড কোং-এর প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- হোটেল হিরো সিটি, আলম এন্টারপ্রাইজ, আলম অ্যান্ড কোং, এইচ আহমেদ অ্যান্ড সন্স, শাওন অ্যান্ড সন্স, মাশরিফা ফুড প্রোডাক্টস, মামিয়া ড্রিংকিং ওয়াটার, মামিয়া ফ্লাওয়ার মিল। এরমধ্যে চট্টগ্রামে মামিয়া ড্রিংকিং ওয়াটারের ভালো চাহিদা ও বেচাবিক্রি রয়েছে।
এক সময় তারা চার ভাই মিলে পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরবর্তীকালে ব্যাংকের ঋণ আটকে গেলে ভাইদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে সন্তানদের নিয়ে ব্যবসা করছেন আলম অ্যান্ড কোং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম।
তার অন্য তিন ভাই দিদারুল আলম, মোহাম্মদ সোলায়মান ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ আলাদা আলাদা ব্যবসা করছেন।