তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধি ও ডলার রেটের ব্যবধান কমাতে আসছে নতুন মুদ্রানীতি
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাকি ছয় মাসের নতুন মুদ্রানীতি আগামী ১৫ জানুয়ারি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন খাতে তারল্য সাপ্লাই বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রেটকে স্থিতিশীল করতে এক্সপোর্ট প্রসিড ও রেমিট্যান্স রেট সমন্বয়ের জন্য মুদ্রানীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার (১ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার পূর্বে দ্বিতীয় সমন্বয় সভা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারে সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সকল নির্বাহী পরিচালক ও ডিপুটি গভর্নররা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এ সভায় কয়েকজন নির্বাহী পরিচালক মূল্যস্ফীতি কমাতে রেপো ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়াতে বলেছেন।
তবে সভার অধিক বক্তাই বলেছেন মূল্যস্ফীতি দেশের মনিটরিং ফেনোমেনার কারণে বাড়েনি। তারা বলেছেন ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সাপ্লাই চেইন ডিজরাপশনের কারণে এটি হয়েছে।
এ বিষয়ে গভর্নর বলেন,গত ২০ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল হয়েছে। সেখানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ৫.৬% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% নির্ধারণ করেছে। একইসঙ্গে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.৫% করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ঋণের প্রবৃদ্ধির তুলনায় আমানতের প্রবৃদ্ধি অনেক কম।
গত বছরের অক্টোবরে দেখা যায়, ব্যাংক আমানতের গ্রোথ হার হচ্ছে ৭.৩৫। যদিও একইসময়ে ব্যাংক ঋণের গ্রোথ হার হলো ১৪%।
এর ফলে দেশের ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য মাত্র তিন মাসে ৩৩,০০০ কোটি টাকা কমে সেপ্টেম্বরে ১.৭০ লাখ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক টিবিএসকে বলেন, "নতুন মুদ্রানীতিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাকে স্থিতিশীল করতে বিশেষ গুরুত্ব থাকবে। গভর্নর বলেছেন এখন এক্সপোর্ট প্রসিড রেট পাচ্ছে ১০১ টাকা ও রেমিট্যান্স রেট ১০৭ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি করছে ৯৯ টাকায়। মার্কেটের সঙ্গে এই রেট ক্রমান্বয়ে সমন্বয় হয়ে যাবে একইসঙ্গে আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে ডলারের রেট স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসবে।"
তিনি আরও বলেন, "গভর্নর সভায় বলেছেন, আমাদের রেমিট্যান্স ফ্লো বাড়ছে, এক্সপোর্ট আয় বাড়ছে। এছাড়া ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং অনেকটা কমে এসেছে। এখন ডলারে রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিড রেটে যেই ৬ টাকার ফারাক রয়েছে এটার স্পেড রেট ২ টাকার কাছাকাছি চলে আসবে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উইকলি সিলেকটেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস আপডেট তথ্য বলছে, ২০২১ সালে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৫.৮০ বিলিয়ন ডলার।
বিদায়ী ২০২২ এর এই সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩.৮৩ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কমেছে। যার কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তৈরি হয়েছে।
বৈঠক সুত্রে জানা যায়, ব্যাংকিং খাতের ঋণ বিতরণে বিভিন্ন অনিয়ম ও খেলাপি ঋণ কমাতে ও গভর্নেন্স বৃদ্ধিতে গভর্নর গুরুত্ব দিতে বলেছেন।
গভর্নর বলেন, "আমরা ইসলামি ব্যাংকের ঋণ অনিয়োমের বিষয়ে পরিদর্শনে টিম গঠন করেছি। সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকে অভজারভার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিশেষ করে দেশের ৫ ইসলামী ব্যাংককে দিনে ১০ কোটি বা তার বেশি পরিমাণ ঋণ দেওয়ার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি মূল্যের বড় ঋণ বিতরণ না করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।"
গভর্নর বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের অংশ। আমাকে গভর্নর করা হয়েছে দেশের ইকোনোমিকে ঠিক করতে আমি সেই অনুযায়ী কাজ করবো। বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে নান ধরণের চাপ আসে আমি মাথা নত করবো না। আমরা কাজ করেই যাবো।"
এর আগে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতি নির্ধারণ নিয়ে ৫ ডিসেম্বর দেশের কয়েকজন অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগামী ৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে রাজধানীর একটি হোটেলে এই মুদ্রানীতির সর্বশেষ বৈঠক করবেন।
কোভিডের আগে ছয় মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা হতো। কোভিডের কারণে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতি এক বছরের জন্য করা হয়।
তবে এবার আগের মতো বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাতে সম্মতি দিয়ে ছয় মাসের মুদ্রানীতি করার কথা বলেছিল। সেটির আলোকেই আগামী (জানুয়ারি-জুন) পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা হবে।