ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ২১ বিনিয়োগকারী
মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ২১ জন বিনিয়োগকারী কারসাজির মাধ্যমে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিএনআইসিএল) শেয়ার দর ৯০ শতাংশ বাড়িয়েছেন। এই ২১ জনের মধ্যে রয়েছেন শেয়ারবাজার কারসাজি চক্রের অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরুর সহযোগীরা।
পাশাপাশি কারসাজিতে জড়িত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান মুহিউদ্দীন খান আলমগীর এবং টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তদন্তে আরও জানা গেছে, কারসাজিতে প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সও জড়িত ছিল।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত প্রতিবেদনে বিএনআইসিএল'র শেয়ার কারসাজির নেপথ্যে এই ২১ বিনিয়োগকারীর নাম উঠে এসেছে।
বিএসইসি'র তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ২১ বিনিয়োগকারী নিজেদের মধ্যে সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বিএনআইসিএল শেয়ারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্বিতে সহায়তা করেছেন।
সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ার দর বৃদ্ধিকে সিকিউরিটিজ আইনে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়।
যদিও বিএনআইসিএল'র শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে বিএসইসি সম্প্রতি আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, এ জি মাহমুদ, সাইফ উল্লাহ এবং ডিআইটি কো-অপরেটিভ লিমিটেডকে ২.৪০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। তবে এই চারজন বিএনআইসিএল'র শেয়ার লেনদেন করে মুনাফা করেছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
বিএসইসি জানায়, শেয়ারকারসাজিতে এই চার বিনিয়োগকারীর ভূমিকা বেশি। তাই তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদের অংশ কম হওয়ায় তাদেরকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
যেভাবে কারসাজি হয়
বিএসইসি'র তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানান যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনআইসিএল'র শেয়ার দর ১৭ টাকা থেকে দশগুণ বেড়ে ১৭০ টাকা হয়েছিল। তবে বিএসইসি শুধু ২৯ অক্টোবর থেকে ২৯ ডিসেম্বর সময়ের শেয়ার দর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত করেছে। আর এই সময় এর শেয়ার দর ৩৭.৩ টাকা থেকে ৯০ শতাংশ বেড়ে ৭১ টাকা হয়েছিল। অথচ ২ মার্চ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৫৭.১০ টাকা।
এই সময় কাজী সাদিয়া হাসান ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ থেকে, সাইফ উল্লাহ এবং এ জি মাহমুদ সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও এনএলআই সিকিউরিটিজ থেকে এবং ডিআইটি কো-অপরেটিভ এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট থেকে বিএনআইসিএল'র শেয়ারের মোট লেনদেনের একটি বড় অংশ নিজেদের মধ্যে লেনদেন করেছেন। সার্কিট ব্রেকারে হাই প্রাইস বিড করে তারা শেয়ারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে শেয়ার দর বাড়িয়েছেন।
এ সময় বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজে থাকা মুহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিও অ্যাকাউন্ট থেকে ৬.৭০ লাখ শেয়ার কেনা-বেচা এবং ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা সাকিব আল হাসানের বিও অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিও অ্যাকাউন্টে ১২ লাখ শেয়ার কেনা হলেও কোনো শেয়ার বিক্রি হয়নি।
এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে কারসাজি করে শেয়ার দর বৃদ্ধির অপরাধে শেয়ারবাজারে 'হাল্টেড মিজান' নামে পরিচিতি মিজানুর রহমানকে এক লাক টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। তিনি ফেসবুকে নিজস্ব পেজ খুলে কোম্পানির প্রাইস সেনসেটিভি ইনফরমেশন নিয়ে গুজব ছড়ান।
যদিও বিএসইসি'র শুনানিতে তিনি নিজেকে নির্দোশ দাবি করেছেন। শুনানিতে তিনি শেয়ার ব্যবসা বোঝেন না বলে বিএসইসি'কে জানান। তিনি আরো জানান, তার নামে কিছু কুচক্রী মহল ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে এইসব অপকর্ম করছে। এরজন্য তিনি থানায় জিডিও করেছেন।
এছাড়া, সময়মতো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে না পারায় অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ আরও তিনজন পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে বিএসইসি।