বিমানভাড়া চড়ছে তো চড়ছেই
বিমানভাড়া ক্রমে বাড়তে থাকায় – ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা। এতে বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেতে ইচ্ছুক ছাত্রদের পাশাপাশি প্রবাসে কর্মসংস্থান প্রত্যাশী অভিবাসী কর্মী এবং ব্যবসার কাজে ভ্রমণকারীরাও প্রভাবিত হচ্ছেন।
বাচ্চু শেখের উদাহরণই দেওয়া যাক, বাংলাদেশি এই নাগরিক গত ২৮ জুলাই পড়াশোনার জন্য পরিবারের সাথে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রে যান। খুঁটিনাটি সব বিষয় পরিকল্পনা করেই বাচ্চু তা করেছিলেন, এরমধ্যে ছিল ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটের টিকেট কেনাও। প্রতিটি টিকেটের দাম ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
এত টাকাপয়সার জোগাড়যন্ত্র করা বাচ্চুর জন্য কম চাপ ছিল না। ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ব্যবস্থা করা ( তিনটি টিকেটের দাম, একটি তার শিশুর জন্য) এক বোঝাই ছিল তার পক্ষে। স্কলারশিপ পেয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান, কিন্তু দুঃখের বিষয় বিমানভাড়া স্কলারশিপের অন্তর্ভুক্ত না থাকায়– বাচ্চুকে অতিরিক্ত এই খরচ করতে হয়।
তারপরও সময়মতো টিকেট কেনায় নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে করেন বাচ্চু। কারণ, দেরি করলে দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে তার বাড়তি টাকা খরচ হতো। আর্থিক চাপ কমাতে এমন দূরদৃষ্টি কাজেই দেয়।
তার সাথে তুলনা দেওয়া যায় সুমন আলীর অভিজ্ঞতাকে। সম্প্রতি এই ব্যক্তিও পড়াশোনার জন্য গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ৮ আগস্টের ফ্লাইটের জন্য ৭ জুলাই তারিখে তিনি ২ লাখ ৮ হাজার টাকায় কেনেন কাতার এয়ারওয়েজের টিকেট, যা মহামারির আগের সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।
টিকেটের দামের প্রবণতা লক্ষ করলে দেখা যায়, শেষমুহূর্তে কিনলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রিমিয়াম দিতে হচ্ছে। যেমন এমিরেটস এয়ারলাইনসের ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটের ৩০ আগস্টের ফ্লাইটের টিকেট ২২ আগস্ট কিনলে– তার দাম পড়তো ৪ লাখ টাকারও উপরে। একইরুটে বিজনেস ক্লাসের টিকেটের গড়মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা।
অথচ এক বা দুই বছর আগেও এমনটা ছিল না। দেড় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যান নূর হোসেন, তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস রিও গ্রান্ডে ভ্যালিতে স্নাতক গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সময় এমিরেটস এয়ারলাইনের টিকেট কেনেন ৫২ হাজার টাকায়। আর তা কিনেছিলেন, যাত্রাকালের প্রায় এক মাস আগে।
পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন গন্তব্যে, বিশেষত বাংলাদেশিদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের তালিকায় শীর্ষে থাকা– কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের টিকেটের দামেও বর্তমানে এই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে এসব গন্তব্যে যারা শিক্ষার জন্য নয় বরং অন্যান্য কাজে যান, তাদের হয়তো এই বাড়তি ব্যয় বহনের মতো সম্পদ আছে।
তারপরেও এই ঘটনা বিদেশগামী তুলনামূলক অস্বচ্ছল বাংলাদেশিদের পক্ষে এক নিদারুণ বোঝা। বিশেষ করে, কর্মসংস্থানের জন্য যারা মধ্যপ্রাচ্যে যান। সৌদি আরবগামী অভিবাসী শ্রমিক আব্দুল মাজেদের ঘটনাই বলা যাক। ফ্লাই দুবাইয়ের মাধ্যমে কেনা চট্টগ্রাম থেকে দিয়ে মদিনাগামী ২২ আগস্ট তারিখের ট্রানজিট ফ্লাইটের জন্য তাকে বিমানভাড়া গুনতে হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা; যা সাধারণ মূল্যের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
বিমানভাড়ার এই অতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক বাংলাদেশি তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আবার ভেবে দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রায় দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এক বাংলাদেশি ছাত্র সম্প্রতি তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, টিকেটের দাম কমলে তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন।
দাম এভাবে বাড়ছে কেন
বিমানভাড়া অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির পেছনে – ছাত্র ও অভিবাসী শ্রমিকদের জোরালো চাহিদা প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। তাছাড়া, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন – গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক ডলারের দাম ৮৫ টাকা হলেও যা বর্তমানে ১১২ টাকা – টিকেটের উচ্চমূল্যের পেছনে ভূমিকা রাখছে।
উড়োজাহাজে সীমিত আসনের সাথে উচ্চ চাহিদার এই সাংঘর্ষিক অবস্থা আরো জটিল রূপ নিয়েছে– টিকেট সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে, যারা কালোবাজারি দরে টিকেট বিক্রি করছে। তার সাথে ডলারের বিপরীতে টাকার দুর্বল অবস্থান, এয়ারলাইনসগুলোর পরিচালন ও জ্বালানি ব্যয় বাড়ার ঘটনাও– এই সংকটকে উস্কে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে ব্যবসা করা অন্তত ছয়টি প্রথম সারির বিদেশি এয়ারলাইনসের একটি জেনারেল সেলস এজেন্ট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাম না প্রকাশের শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'বিভিন্ন কারণেই আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস ভ্রমণের পিক মওসুম। কিন্তু, উচ্চ এই চাহিদার বিপরীতে ফ্লাইটের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। উচ্চ বিমানভাড়ার যা মূল কারণ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেশি একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এয়ারলাইনসগুলোকে বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের জন্য বেশি দাম দিতে হয়, কারণ বৈশ্বিকভাবে কমলেও পদ্মা অয়েল এ জ্বালানির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমায় না। তাছাড়া, এখানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কস্ট-সহ বিভিন্ন ট্যাক্সের পরিমাণও বেশি।'
'প্রতিযোগিতা বেশি থাকলে বিমানভাড়া কমে। বাংলাদেশ বিমান-সহ স্থানীয় এয়ারলাইনগুলো যদি টিকেটের দাম কমায়, তাহলে বাধ্য হয়ে বিদেশি এয়ারলাইনগুলোও টিকেটের দাম নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হবে'- যোগ করেন তিনি।
তবে তারা প্রতিযোগিতামূলক দামে টিকেট বিক্রি করছেন না– এমনটা মনে করেন না বাংলাদেশ বিমানের কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ বিমানের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'প্রতিটি এয়ারলাইনের নিজস্ব বিজনেস পলিসি আছে। তারা নিজেদের পরিচালন ব্যয়, রুট এবং পিক সিজন, লিন সিজন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে টিকেটের দাম নির্ধারণ করে। এই প্রক্রিয়া ম্যানুপুলেট করে বিমান বেশি ভাড়া নিচ্ছে তা বলা যাবে না।'
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কানাডা ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশি ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় দুটি গন্তব্য।
বর্তমানে সপ্তাহে দুইবার ঢাকা-টরেন্টো রুটে ২৯০ আসনের ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ-বিমান। আর সিলেট-লন্ডন রুটে সপ্তাহে চারদিন ২৭০ আসনের ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, 'এখন চাহিদা এতই যে আমরা সিট দিতে পারছি না। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও নতুন সেশনের শুরুর সময় হওয়ায় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ দু'টি রুটে আমরা টিকেটের বিপুল চাহিদা লক্ষ করছি।'
অন্যান্য এয়ারলাইনের মতো বাংলাদেশ বিমান যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয় না বলেও দাবি করেন তিনি।
কিন্তু, এই প্রতিবেদক অনলাইনে বাংলাদেশ বিমানের ওয়েবসাইটে খোঁজ নিয়ে দেখেন, আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের জন্য ঢাকা-টরেন্টো রুটে টিকেটের দাম ৩ লাখ টাকার বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন বলেন, বিপুল চাহিদা থাকায় বিমান ঢাকা-টরেন্টো রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে আগ্রহী। কিন্তু, কানাডার কর্তৃপক্ষ তার অনুমতি দিচ্ছে না।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের (এসআইএ) জেনারেল ম্যানেজার বাংলাদেশ- টিমোথি কুয়াং টিবিএসকে বলেন, 'সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস বাজার-ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণের কৌশল অনুসরণ করে। আমাদের বিমানভাড়া চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। যার ফলে এটি গতিশীল এবং পরিবর্তনযোগ্য।'
'সম্প্রতি আমরা ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ থেকে উত্তর গোলার্ধের অপারেটিং সিজনের জন্য আমাদের নেটওয়ার্কজুড়ে সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছি। ফলে তখন থেকে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের মধ্যে এসআইএ'র (ফ্লাইট) সেবা সপ্তাহে ৯ বার পাওয়া যাবে, যা এখন সপ্তাহে ৭ বার পাওয়া যাচ্ছে'- যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় এয়ারলাইনগুলো যা বলছে
মধ্যপ্রাচ্যে বেশি শ্রমিক যায় এমন চারটি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, 'কোনো যাত্রী যদি শেষমুহূর্তে এসে টিকেট কাটেন, তাহলে টিকেটের দাম খুব বেশি বলেই তার মনে হবে। কিন্তু, একমাস আগে টিকেট কিনলে এতোটা চাপ অনুভব করবেন না।'
জেট ফুয়েলের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, 'জ্বালানির দাম কমেছে। কিন্তু, আসলেই কতোটা কমেছে আমাদের সেই অনুপাত বিবেচনা করতে হবে। আগের প্রতি ইউনিট ১৩০ টাকা থেকে কমে এখন ১০০ টাকায় নেমেছে।
কতজন ছাত্র ও অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন
বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা ও বৃত্তির কারণে বাংলাদেশী ছাত্রদের মধ্যে বেশ দ্রুতগতিতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার আগ্রহ বাড়ছে।
গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ২০২২ সালের ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ অনুসারে, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে তা ৩ হাজার ৩১৪ জন হলেও, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে তা পৌঁছেছে ১০ হাজার ৫৯৭ জনে।
ইউনেস্কোর তথ্য-উপাত্তের বরাত দিয়ে এটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী অভিবাসনে একটি নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। ২০১৫ সালে মোট ২৪ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমান। ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা চারগুণ হয়।
ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৭০ থেকে ৯০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। এসব শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালটেশন অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ (এফএসিডি-ক্যাব)-এর কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে পরামর্শ চান।
পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে কানাডার আবেদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশটিতে উচ্চশিক্ষার আবেদনের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে ২১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আবেদন ৩০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি সংস্থা ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (আইআরসিসি)।
একইভাবে, গত চার মাস ধরে বিদেশগামী কর্মীদের সংখ্যাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)-এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ জন বাংলাদেশি বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। এর আগে জুনে এক লাখ ১৪ হাজার ১৭৫ জন, মে মাসে এক লাখ এক হাজার ৫৫৮ জন এবং এপ্রিলে ৭৮ হাজার ৮৩৩ জন বাংলাদেশির বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। চাকরির গন্তব্যের দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। মোট বাইরে যাওয়া কর্মীদের ৩৬ শতাংশই গিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে। অন্যদিকে মালয়েশিয়া ও ওমানে যথাক্রমে ২৯ শতাংশ ও ১২ শতাংশ কর্মী চাকরি পেয়েছেন।
কালোবাজারে গ্রুপ টিকিট বিক্রির অভিযোগ
এয়ারলাইন এবং ট্রাভেল এজেন্টদের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি, দাম বাড়িয়ে তোলা ইত্যাদি অভিযোগ উঠেছে বলে এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মূলত যারা ট্রাভেল এজেন্ট ও জনশক্তি এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন, তারাই এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে জানান তারা।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সাধারণত দল হিসেবে কর্মীদের বিদেশে পাঠায়। এর জন্য এগুলো 'গ্রুপ ফেয়ার' পায়। অ্যাসোসিয়েশন অভ ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশ (আটব)-এর সাধারণ সম্পাদক আবদুল সালাম আরেফ এয়ারলাইনগুলোর টিকিট বিক্রি ও বিপণন পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে আরেফ বলেন, 'কিছু এয়ারলাইনস আছে যেগুলো যাত্রীর নাম উল্লেখ না করে টিকিট বিক্রি করে। আর এভাবে তারা টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, বিশেষ করে কম দামি টিকিটগুলোর ক্ষেত্রে।'
তিনি আরও বলেন, এয়ারলাইনগুলো তাদের ইচ্ছামতো টিকিটের দাম বাড়ায় এবং এসবের কোনো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই। যদিও টিকিটের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দামের ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাজারে আরও এয়ারলাইনকে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া উচিত।
বেবিচক চেয়ারম্যান যা বলছেন
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী বিমানভাড়া বেশি।
'আমরা টিকিটের দাম সম্পর্কে এয়ারলাইনগুলোর কাছে জানতে চেয়েছি। তারা এর জন্য জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধিকে দায়ী করছে,' তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেন, ভ্রমণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও সক্ষমতা বাড়েনি।
বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে টিকিটের কম দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মফিদুর রহমান বলেন, ভারত সরকার ভর্তুকি দেয় বলে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে জ্বালানি খরচ কম।