টানা ১০ মাস কমার পর এপ্রিলে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে
টাকায় ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় টানা ১০ মাস কমার পর অবশেষে গত এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এপ্রিলের শেষে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, গত মার্চ মাসের তুলনায় ৬০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে, তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ৬৯০ মিলিয়ন ডলার কমেছে।
২০২২ সাল থেকেই স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কমা শুরু হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ছিল ১৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর এর পরমিাণ দুই বছরে প্রায় ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে। যার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, এক মাস আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর ৭ টাকা বাড়ানোর পর থেকে ডলারের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। তাই ব্যাংক ও গ্রাহকেরা অল্প হলেও ডেফার্ড এলসি বাড়াচ্ছেন। পাশাপাশি কিছু শর্ট টার্ম লোনও নিচ্ছেন। ফলে এপ্রিলে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কিছুটা বেড়েছে।
আইএমএফের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বৃদ্ধি অবশ্যই ইতিবাচক।'
তিনি বলেন, 'মূলত টাকায় ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ঋণ বাড়ছে। কয়েক মাস আগে যখন টাকায় ঋণের সুদের হার ক্যাপ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল, তখন ডলারে ঋণের বিপরীতে সুদের হারের চেয়ে টাকায় ঋণের সুদের হার কম ছিল। ক্যাপ তুলে দেওয়ার ফলে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'টাকার সুদের হার বাড়ায় ডলারের আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের দর স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। তবে, যেহেতু এখানে ডলারের বাজারদর কার্যকর হয় না, তাই খুব বেশি কেনা-বেচা হচ্ছে না।'
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানিয়েছেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো টাকায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৪-১৫ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। যেখানে আগে তা ৯ শতাংশে আটকে ছিল। অন্যদিকে ডলারে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে এরচেয়ে কম সুদ দিতে হচ্ছে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বেজ সুদের হার বলে পরিচিত এসওএফআর ৫ দশমিক ৩ শতাংশের কাছাকাছি। ডলারে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মার্জিন এবং বিভিন্ন প্রকার চার্জসহ আরও ৩-৪ শতাংশ খরচ হয়। অর্থাৎ, ডলারে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ দিতে হয়। সে হিসাবে টাকায় ঋণ নেওয়ার তুলনায় ডলারে ঋণ নেওয়া সস্তা।
তিনি বলেন, 'অবশ্য ডলারে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার টাকার অবমূল্যায়নের ঝুঁকি নিতে হয়। গত দুই বছরে আমাদের টাকার মান প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ, ডলারে ঋণ পরিশোধে একজন ঋণগ্রহীতাকে অনেক বেশি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। হয়ত তিনি যখন ঋণ নিয়েছিলেন তখন ৮৫ টাকায় ডলার পাওয়া যেতো। অথচ পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখেছেন ডলারের মান ১১০ টাকায় উঠে গেছে। তখন তাকে অনেক ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। তাই, নতুন করে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে '
আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'বেসরকারি খাত যদি স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ায় তাহলে তা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে (বিওপি) ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্বল্পমেয়াদী ঋণ বৃদ্ধির ফলে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে।'