টিকা নিলে ব্রিটিশ নাগরিকদের দেওয়া হবে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যুক্তরাজ্যে শুরু হওয়া ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচীতে টিকাগ্রহণ শেষ হলে নাগরিকদের পরীক্ষামূলকভাবে একটি 'পাসপোর্ট' দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে দেশটির সরকার।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক খবরে বলা হয়েছে, এটি এমন একটি ফ্রি অ্যাপ যা দিয়ে ব্যবহারকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রমাণ করতে পারবেন, তারা প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে টিকা গ্রহণ করেছেন কিনা- অথবা যদি আদৌ কোন টিকা না পেয়ে থাকেন সেটিও দেখা যাবে সেখানে।
বায়োমেট্রিক্স ফার্ম আইপ্রোভ এবং সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম এমভিন তৈরি করবে এই পাসপোর্টটি।
যদিও যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু করার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই, তবে সরকারের নিজস্ব বিজ্ঞান ও গবেষণা তহবিল সংস্থা 'ইনোভেট ইউকে' ইতোমধ্যে এই প্রকল্পে ৭৫ হাজার পাউন্ড খরচ করে ফেলেছে।
এমভিনের পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক জোশী বলেন, তাদের কোম্পানি ট্রায়ালের ফলাফল প্রদর্শনের জন্য পাসপোর্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছে, তারা পরে টিকাকরণ পাসপোর্টের জন্য আরো তহবিল সংগ্রহ করবে।
সরকার সমর্থিত এই ট্রায়াল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জনস্বাস্থ্যের দুই পরিচালক তত্ত্বাবধান করবে এবং আশা করা হচ্ছে এই ট্রায়াল তৃতীয় জাতীয় লকডাউনের মধ্য দিয়েও মার্চ পর্যন্ত চলবে।
আশা করা হচ্ছে এই পরীক্ষার ফলে দেখা যাবে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) প্রথম বা দ্বিতীয়ধাপে টিকাপ্রাপ্ত লোকের সংখ্যার উপর নজর রাখতে সাহায্য করার জন্য পাসপোর্টগুলোকে কীভাবে ব্যবহার করতে পারে।
বায়োমেট্রিক্স ফার্ম আইপ্রোভ এর প্রধান অ্যান্ড্রু বাড বলেন, আমরা একটি অসাধারণ প্রযুক্তির কথা বলছি যা বহন করা যেতে পারে এবং সহজেই এনএইচএস এর সাথে একীভূত করা যেতে পারে।'
উভয় কোম্পানির দাবি, যদি ভ্যাকসিন পাসপোর্টের সফলতা প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রকল্পটি সারা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে চালু করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া হচ্ছে, তারা সংক্রমণের হার, হাসপাতালে ভর্তি এবং কম মৃত্যুর হার প্রমাণ করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন। যদি এটি সফল হয়, তাহলে সময়ের সাথে সাথে বর্তমান বিধিনিষেধের পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।
সরকারের কেউ কেউ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বাস্তবায়নের বিরোধিতা করেছেন। মাইকেল গোভ বলেছেন যে তারা এই পরিকল্পনার অংশ নয়, অন্যদিকে বরিস জনসন সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচীর প্রধান নাদিম জাহ্নবি বলেছেন, তারা এই প্রযুক্তির দিকে তাকিয়ে আছেন।
জাহ্নবি পরবর্তীতে কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার হলের এক বিতর্কে বলেন যে 'টিকা পাসপোর্টের জন্য কোন পরিকল্পনা নেই' এবং তিনি বলেন যে 'টিকা বাধ্যতামূলক করা বৈষম্যমূলক এবং সম্পূর্ণ ভুল'।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককও গত সপ্তাহে পাসপোর্ট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অস্বীকার করে বলেন, 'এটা এমন কোন বিষয় নয় যা নিয়ে আমরা ভাববো।'
এই নীতি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে যে পাসপোর্টগুলো সেই সব ব্যক্তিদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবহার করতে পারে যাদের টিকা নেওয়া উচিৎ নয়।(যেমন- গর্ভবতী নারী) ।
অন্যরা আশংকা করছে যে, টিকা না পাওয়া ব্রিটেনবাসীদের গৃহবন্দী করে রাখা হতে পারে যতক্ষণ না তারা টিকা পায়
টিকা সার্টিফিকেট চালু করার ধারণা ইতোমধ্যে ইউরোপে জুড়ে ঘুরছে।
গ্রীক মন্ত্রীরা পরামর্শ দিয়েছেন ইইউ দেশগুলোতে ভ্রমণ এবং শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য একটি 'প্রমিত' টিকা পাসপোর্ট গ্রহণ করার।
ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইনকে লেখা এক চিঠিতে গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস পরামর্শ দিয়েছেন, 'যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের বাধাহীন ভ্রমণ সুবিধা চালু করা উচিত। সকল সদস্য রাষ্ট্রে কীভাবে টিকাকরণের সার্টিফিকেট গঠন করা উচিত সে বিষয়ে একটি সম্মলিত বোঝাপড়া তৈরি হওয়া জরুরী।'
এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, স্পেন, ডেনমার্ক এবং বেলজিয়ামের সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা এই ধরনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করবে- যদিও এই ধারণা ইতোমধ্যে গোপনীয়তা এবং তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এদিকে বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের টিকা কর্মসূচীর গতি নিয়ে এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) প্রধানের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন। টিকাদান প্রক্রিয়ার গতি কমে যাওয়ার জন্য তিনি 'অতিরিক্ত আমলাতন্ত্র' কে দোষারোপ করেছেন।