যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধ হয়ে যেতে পারে চীনা ধনকুবেরদের
চীনের শাসকগোষ্ঠী সমাজতন্ত্রী দলের সকল নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সরকারের এ নিষেধাজ্ঞায় মারাত্মক প্রভাবিত হতে পারেন শীর্ষ ধনীসহ চীনের অন্যতম ব্যবসায়ী নেতারা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার একটি খসরা প্রস্তুত করা হয়েছে, বলে সর্বপ্রথম জানায় দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন সরকারের চারজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বরাতে প্রস্তবনার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিকটি। তবে পত্রিকাটি জানিয়েছে, খসরা প্রস্তাবনাটি ট্রাম্প চাইলে নাকচও করে দিতে পারেন। তারপর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আরেকটি প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংবাদ সূত্র সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্তে নিলে তার আওতায় পড়বেন চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির ৯ কোটি নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্য। এদের মধ্যে চীনের শীর্ষ ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারাও থাকবেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে আর ব্যবসার কাজে প্রবেশ করতে পারবেন না।
পার্টি সদস্যপদ থাকায় আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা, ডালিয়ান ওয়ান্ডা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং জিয়ালিং এবং বিওয়াইডি প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং চ্যাংফু; সকলেই পড়বেন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে।
এদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চীনের শীর্ষ ধনীর স্থান অধিকার করে রেখেছিলেন জ্যাক মা। কিছুদিন আগেই অবশ্য তাকে ছাড়িয়ে শীর্ষ ধনীর মুকুট চলে যায় প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেট- এর প্রতিষ্ঠাতা মা হুয়াতেং- এর দখলে। এরপরও, ব্লুমবার্গের হিসাবে প্রায় ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলারের মালিক জ্যাক মা, এখন চীনের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী।
ইতোপূর্বে, চীনা সমাজতন্ত্রী দলের মুখপত্র পিপলস ডেইলি পত্রিকায় জ্যাক মা দলের একজন সত্রিয় সদস্য বলে জানানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেলে এক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে মারাত্মক বিপদে পড়বেন বিশ্বের ২১তম শীর্ষ এ ধনকুবের।
অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম মুভি থিয়েটার চেইন এএমসি'র মালিক হচ্ছে ডালিয়ান ওয়ান্ডা গ্রুপ। তাদের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র। আবার বিওয়াডি হচ্ছে চীনের শীর্ষ বৈদ্যুতিক মোটকার উৎপাদক। বিশ্বের সেরা বিনিয়োগকারী খ্যাত মার্কিন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের পুঁজি লগ্নি প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে- বিওয়াডি'র অন্যতম প্রধান শেয়ারহোল্ডার। দুই দেশের ব্যবসায়ী সমাজের এমন ওতপ্রোত বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে; ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় কর্পোরেট জগতে যে একটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, তা বলাই বাহুল্য।
চীনা ধনীরা কেন শাসকদলের সদস্য তার ব্যাখ্যা দেন চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকং'য়ের সহকারি অধ্যাপক উইলি ল্যাম।
ল্যাম জানান, 'চীনের সকল শীর্ষ ধনী এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই শাসকদলের সদস্য।'
যথেষ্ট প্রভাব এবং অর্থ-বিত্তের অধিকারীদের দলটির সদস্য হওয়ার প্রবণতা বেশি বলেও জানান তিনি।
এক্ষেত্রে কোনো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী দলীয় আদর্শে বিশ্বাস করেন কিনা তা মুখ্য নয় বরং প্রফেসর ল্যামের মতে, শাসকদলের সদস্যপদ থাকলে ব্যবসায়ে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় সহজেই। যেমন; ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শিথিলতা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার সুবিধা পান দলের সদস্যপদ থাকা ধনীরা।