সকল জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ঘোষণা তালেবানের
সকল জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সম্প্রতি আফগান ক্ষমতা দখলকারী দল তালেবান। এ মাসের শুরুতেই দলটি পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সরকারকে উচ্ছেদ করে কাবুল দখল করে। তবে, বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বিস্ফোরক হামলার পরপরই আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
তালেবান সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, দেশের সব জাতিগোষ্ঠী ও আদিবাসী নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে আফগান তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই মুহূর্তে প্রায় এক ডজন নাম নতুন সরকারের অংশ হিসেবে বিবেচনাধীন আছে।
তবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
আফগানিস্তানের রাজনীতি এবং দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে সে দেশের জাতিগত বৈচিত্র্য। প্রায় ৪ কোটি জনসংখ্যার দেশে পুশতুনরা প্রধান জাতিগোষ্ঠী। দেশের মোট জনসংখ্যার মোটামুটি ৪২ শতাংশই পশতুন। সুন্নি প্রধান পশতুভাষী এই সম্প্রদায় সেই ১৮ শতক থেকে আফগান রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
তালেবান সূত্র থেকে আরও জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন "আমির-উল-মুমিনিন" (বিশ্বাসীদের নেতা) থাকবেন। তিনিই মূলত আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত পরিচালনা করবেন।
এছাড়া, পরবর্তী সরকার গঠন এবং মন্ত্রীদের মনোনীত করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব পরিষদও আহ্বান করা হয়েছে।
প্রধান মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ ও তথ্য বিভাগ। এছাড়া রাজধানী কাবুলকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ বিভাগও খোলা হবে বলে জানা গেছে।
সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার এই মুহূর্তে রাজধানী কাবুলে অবস্থান করছেন। এবং তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহম্মদ ওমরের ছেলে কান্দাহার থেকে কাবুলে যাত্রা করেছেন বলেও জানা গেছে।
সরকার গঠনে তালেবান গোষ্ঠী তাজিক এবং উজবেক জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
তালেবান সূত্র থেকে আরও জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই এবং আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিল অব ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের সাবেক প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ সহ পুরনো সরকারের কিছু সদস্যকে নতুন সরকার দলে জায়গা দেওয়ার জন্য জোর দিচ্ছে।
অন্যদিকে, তালেবানের আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০২০ সালে স্বাক্ষরিত দোহা চুক্তি অনুযায়ীই তালেবান গোষ্ঠী সরকার গঠন ও দেশ শাসন করতে করতে চায়। তারা আফগান ভূমিকে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হতে দেবে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় 'আইএসআইএস-কে' রাজধানী কাবুলে বিমানবন্দরের বাইরে এক বিস্ফোরক হামলা চালায়। তাতে মারা যায় ২৮ জন তালেবান ও ১৩ জন মার্কিন সেনা সহ মোট ১১০ জন।
নারী অধিকারের ব্যাপারে সূত্র জানিয়েছে, নারীরা আগের মতোই সরকারের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার সুযোগ পাবে; বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে।
স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি ঠেকাতে বিশেষ আদালত গঠন করা হবে বলেও জানা যায়।
এছাড়া, দেশে প্রবেশের চেকপয়েন্টগুলো থেকে পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে তালেবান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একক শুল্ক প্রযোজ্য করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র।
- সূত্র: আল জাজিরা