‘উত্তর প্রদেশের মুসলমানদের অস্বাভাবিক ভীতি প্রদশর্ন’
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ওপর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতা চালানোর অভিযোগ করেছে বিভিন্ন পক্ষ। এমন বাস্তবতায় গত ১৬ জানুয়ারি দিল্লিতে জনতার ট্রাইব্যুনাল বসেছিল। সে ট্রাইব্যুনালে বিচারকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন সাবেক কূটনীতিক দেব মুখার্জি, যিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও নেপালে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত।
সোমবার দ্য টেলিগ্রাফে একটি নিবন্ধ লিখেছেন দেব মুখার্জি, যাতে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া বিভিন্ন পক্ষের বেদনাদায়ক পরিস্থিতি উঠে এসেছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো-
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ)/ জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর)/ভারতীয় জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরআইসি) প্রক্রিয়া নিয়ে গত মাসজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে।
এ বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, যারা বিশেষায়িত বাহিনী স্টর্ম ট্রুপার এবং ক্ষেত্রবিশেষে অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত উর্দিপরা রক্ষীদের হাতেও হামলার শিকার হয়েছেন।
স্মরণযোগ্য ভূমিকা রাখা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় সামনের সারিতে ছিল জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া। তারপরই ছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।
অপকর্মের জন্য নিরাপত্তাকর্মীদের জবাবদিহিতায় আনা রুখতে নানা বিভ্রান্তির মধ্যেও এ শিক্ষালয়গুলোতে হামলা মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
এদিকে, শীতের রাত উপেক্ষা করেও ভারতজুড়ে সমমনা নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন দিল্লির শাহীনবাগের নারীরা।
আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, উত্তর প্রদেশের হতভাগ্য মুসলমানদের ওপর যে অস্বাভাবিক ভীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে খুবই কম নজর দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পতাকা ও সংবিধানকে সামনে রেখে চলা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে নাগরিক হিসেবে তাদের সমতার বার্তা গ্রহণে অপারগতা দেখিয়ে গেরুয়া পোশাকধারী মুখ্যমন্ত্রী (যোগী আদিত্যনাথ) উল্টো 'প্রতিশোধ' নেওয়ার কথা বলেছেন।
এটি খুব সম্ভবত পৃথিবীর যে কােনো প্রান্তের সাপেক্ষে ব্যতিক্রমী ঘটনা, যেখানে জনকল্যাণে নিয়োজিত ব্যক্তি তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের বদলে প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। এর কারণ ওই লোকজন তার দলের (বিজেপি) চাপিয়ে দেওয়া নীতির কাছে নতি স্বীকার করতে রাজি হননি।
জনতার বার্তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে পুলিশসহ যোগীর প্রশাসনের অধীন বিভিন্ন সংস্থা। তারা রাজ্যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে মুসলমানদের ওপর।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের আচরণে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সমর্থন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতির (দিলীপ ঘোষ)। তিনি খুশি যে, পুলিশ কুকুরের মতো করে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে।
ভারতের রাজধানী এলাকা ও উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ঘটে যাওয়া বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো উন্মোচিত করতে গত ১৬ জানুয়ারি দিল্লিতে 'জনতার ট্রাইব্যুনাল' হয়। এই ট্রাইব্যুনালে বিচারকদের মধ্যে ছিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক একাধিক বিচারপতি, দিল্লি হাইকোর্টের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা।
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য শুনে বিচারকমণ্ডলী তাদের গভীর উদ্বেগের পাশাপাশি আতঙ্কের কথা জানান। এটা বোঝা গেছে যে, শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র মারাত্মক বিদ্বেষ লালন করেছে এবং আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় (মুসলমান) ও সমাজকর্মীদের ওপর সহিংসতা চালিয়েছে।