সর্বশেষ এয়ারবাসের অতিকায় এ৩৮০ বিমানটি কিনে নিলো এমিরেটস
সর্বশেষ নির্মিত এয়ারবাস এ৩৮০ বিমানটি আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুবাই ভিত্তিক এমিরেটসের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এয়ারবাস এ৩৮০ বিমানের প্রায় অর্ধেকের মালিক এমিরেটস। সর্বশেষ এই বিমানটি অনেক বছর পর্যন্তই সচল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ৩৮০ এর অবশিষ্ট বিমানগুলো সচল থাকলেও এর দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত।
তবে, মহামারি চলাকালীন সময়ে অন্যান্য বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স এ৩৮০ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি কিছু বিমান ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান এ৩৮০। স্ট্যান্ডার্ড কনফিগারেশনে এটি ৫৪৫ জন যাত্রী বহন করে। তবে, ডকুমেন্ট অনুযায়ী, এটি সর্বাধিক ৮৫৩ জন যাত্রী বহন করতে পারে।
ডাবল-ডেকার বিমানটির রয়েছে চারটি ইঞ্জিন, একটি ৮০-মিটার দীর্ঘ পাখা এবং সর্বোচ্চ ৫৬০ টন ধারণক্ষমতা।
সাবেক এ৩৮০ ক্যাপ্টেন অ্যালেক্স সেরির মতে, ধারণক্ষমতা এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও এই বিমান উড্ডয়ন বেশ সহজ। "এয়ারবাস এ৩৮০ কে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি চালাতে গেলে একে এ৩২০ এর মতো ছোট আকারের বিমান মনে হয়। সত্যিই একে ৬০০-টন ওজনের বিমান মনে হয় না।"
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এয়ারবাস তৈরির প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হয়। তখন এমন একটি বিমান তৈরির পরিকল্পনা ছিল তা দৈত্যাকার বোয়িং ৭৪৭-কে ছাড়িয়ে যাবে। এমনকি, এ৩৮০-কে ইউরোপীয় শিল্প দক্ষতার প্রতীক হিসবেও বিবেচনা করা হয়েছিল।
সেসময় অনুমান করা হয়েছিল, শহরের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিশ্বজুড়ে প্রধান বিমানবন্দরগুলোতেও দেখা যাবে যানজট। এতে করে আকারে বড় বিমানের ব্যবহার বাড়বে, যাতে করে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে একসাথে বেশি যাত্রী বহন করা যায়।
বাণিজ্যিক ব্যর্থতা
২০০৭ সালে এ৩৮০-র প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হয়। তবে, সেসময়ই বোয়িং ৭৭৭ এবং ড্রিমলাইনার ৭৮৭ বাজারজাত করে কোম্পানিটি।
বোয়িং ৭৮৭ তৈরিতে উন্নত ইঞ্জিন প্রযুক্তির পাশাপাশি অ্যারোডাইনামিকসে সর্বাধিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, আগের মডেলগুলোর তুলনায় বেশ দক্ষ ছিল এটি। এমনকি এই বিমান চালাতে তুলনামূলক কম জ্বালানী ব্যবহৃত হওয়ায় বেশ সস্তাও ছিল এটি।
ফলে বিপুল সংখ্যক লোককে পরিবহনের জন্য দৈত্যাকার বিমানের পরিবর্তে, সরাসরি রুটে ছোট বিমান ব্যবহার শুরু হয়। চার ইঞ্জিনের এ৩৮০ কেনা এবং চালানো ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সই এর ব্যবহার কমিয়ে দেয়।
এভিয়েশন কনসালটেন্সি অ্যাসেন্ড বাই সিরিয়ামের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিটার মরিস বলেন, "এ৩৮০-র প্রযুক্তি মূলত ১৯৮০-র দশকের।"
এ৩৮০-র এ পর্যন্ত মোট ২৫১টি বিমান তৈরি করা হয়েছে। বাজারে দৈত্যাকার বিমানের চাহিদা কম থাকায় এই প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত ২৫ বিলিয়ন ডলারও আয় করতে পারেনি এয়ারবাস।
তবুও এয়ারবাস এক্সিকিউটিভ ফিলিপ মুহনের মতে, প্রকল্পটি তাদের সংস্থার জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা নিয়ে এসেছে। "এটি এমন একটি বিমান যা কোম্পানিটিকে প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ, শিল্প দৃষ্টিকোণ এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও একীভূত করার অনুমতি দেয়," বলেন তিনি।
এয়ারবাসের জন্য এটি একটি বাণিজ্যিক ব্যর্থতা হলেও সুপারজাম্বো স্পষ্টতই তার প্রাথমিক গ্রাহকের মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে।
দুবাইয়ের বেসকে কেন্দ্র করে উচ্চ-ঘনত্ব এবং দূরপাল্লার রুটের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এয়ারবাসকে ব্যবহার করেছে এমিরেটস। বিশ্বের বৃহত্তম এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে একটি হতে তাদেরকে সাহায্য করেছিল এই বিমানটিই।
পিটার মরিস বলেন, "এ৩৮০ ছাড়া এমিরেটস কখনই সেই স্তরে পৌঁছাতে পারত না।"
তবে, ভবিষ্যতে অব্যবহৃত বিমানগুলোর কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে সাতটি এ৩৮০ স্ক্র্যাপইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে বাকি বিমানগুলোর ভাগ্যেও হয়তো একই পরিণতি লেখা আছে।
বিমান ইতিহাসবিদ শিয়া ওকলি মনে করেন সুপারজাম্বো ইতোমধ্যেই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। "আমার মনে হয় না এ৩৮০ এর চেয়ে বড় কোনো বিমান আদৌ তৈরি হবে," বলেন তিনি।
- সূত্র- বিবিসি