আরব-অনারবের অবরোধ
যুগে যুগে যুদ্ধের কারণে হাতবদল ঘটেছে নানা শহরের। পৃথিবীর ইতিহাস লড়াইয়ের ইতিহাস। যুদ্ধের ইতিহাস। অন্যসব জাতির মতো এইসব উত্থান পতনের বড় অংশ মুসলমানরাও। কখনো মুসলমানরা অবরুদ্ধ হয়েছে আবার কখনো নিজেরাই অবরুদ্ধ করে রেখেছে কোনো শহর, দিনের পর দিন। এইসব অবরোধ প্রায়ই ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘেঁটে মুসলমানদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অবরোধের কথা এ লেখায় সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
জেরুসালেম অবরোধ ও ওমরের চুক্তি
আরব অঞ্চলে রিদ্দার যুদ্ধের পর ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর বাইজেন্টাইনদের দিকে মনোযোগ দেন। ৬৩৪ সালে আবু বকরের মৃত্যুরপরও সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বাইজেন্টাইনদের সঙ্গে নানা ফ্রন্টে খেলাফতে রাশেদার যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। সেই ধারা থেকেই দ্বিতীয় খলিফা ওমরের সেনাবাহিনী ৬৩৬ সালের নভেম্বরে আবু উবায়দাহর নেতৃত্বে জেরুসালেম অবরোধ করে। ছয় মাস ধরে অবরোধ অব্যাহত থাকলে হেরাক্লিয়াসের পক্ষ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে পেট্রিয়ার্ক সফ্রোনিয়াস আত্মসমর্পণে রাজি হন। পেট্রিয়ার্ক শর্ত দেন খলিফার উপস্থিতিতে তিনি আত্মসমর্পণে রাজি আছেন।
৬৩৭ সালের এপ্রিলের শুরুতে খলিফা ওমর জেরুসালেমে আসেন। উভয়ের মাঝে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইতিহাসে এ চুক্তি 'উমর চুক্তি' নামে পরিচিতি পায়। খলিফা উমর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মুসলিমদের পক্ষে সাক্ষী হন খালিদ বিন ওয়ালিদ, আমর ইবনুল আস, আবদুর রহমান বিন আউফ ও মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান। এ সময় পেট্রিয়ার্ক তার কথামতো জেরুসালেমকে মুসলিমদের কাছে সমর্পণ করেন। করের বিনিময়ে অমুসলিমদের নিরাপত্তাও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এ চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের উপর আরব মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টান, ইহুদি ও মুসলমানদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত এ শহর একাদশ শতকে প্রথম ক্রুসেডে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
রক্তপাতহীন এমন অবরোধের নজির ইতিহাসে খুব কম।
বারবার অবরুদ্ধ মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র-মক্কা নগরী
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ। নবি মুহাম্মদ (স.)এর জন্মের বছর। ইয়েমেনের খ্রিষ্টান রাজা আবরাহার চল্লিশ হাজার সেনা নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংস করার জন্য রওনা দেন। আবরাহা একটা ক্যাথেড্রাল নির্মাণ করেছিলেন। তার প্রত্যাশা ছিল মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে প্রার্থনা করবে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈকিভাবে তিনি লাভবান হবেন। কিন্তু দেখা গেল প্রার্থনার জন্য হাজার বছরের পুরনো কাবার কাছেই যাচ্ছে মানুষ। অর্থ-বাণিজ্য ও রাজনৈতিকভাবে মক্কার আরবদের এই উন্নতি আবরাহার ভালো লাগে না। হজ্জ্বের মৌসুমে মক্কায় তার ক্যাথেড্রালের প্রচার করার জন্য একজন প্রচারককে পাঠালে কেউ একজন তীর মেরে তাকে হত্যা করে ফেলে। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন আবরাহা। কাবাঘর গুড়িয়ে দেওয়ার খায়েশে বিশাল হস্তি বাহিনী নিয়ে আবরাহা মক্কায় রওনা দেন। বাধা না দিলে কোনো মানুষের ক্ষতি আবরাহা করবেন না, শুধু কাবা ধ্বংসের জন্যই তিনি এসেছেন এমন একটি ঘোষণা দিলে শহরের বাসিন্দারা শহর ছেড়ে বাইরে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেন।
কিন্তু মক্কার সীমানায় পৌঁছলে বহু চেষ্টার পরও আবরাহার হাতি আর এগোয় না। মক্কা অবরোধ সফল করতে মক্কাবাসীর উট কেড়ে নেন এই ইয়েমেনি শাসক। কিন্তু তারপরও, শেষ অবধি কাবাঘর ধ্বংস করতে পারেননি তিনি। মক্কায় প্রবেশের আগেই একদল আবাবিল পাখি আকাশ থেকে পাথর বৃষ্টি শুরু করলে ইথিওপিয়ান সেনাদের পালিয়ে বাঁচা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। যারা পালাতে ব্যর্থ হয়েছেন সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। স্বয়ং আবরাহাও গুরুতর আহত অবস্থায় পালাতে গিয়ে পথে মারা পড়েন।
আবরাহার অবরোধ থেকে আত্মরক্ষা করতে কুরাইশ নেতা আবদুল মুত্তালিবের নির্দেশে যারা শহরের বাইরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা আবার ফিরে আসেন।
মুসলমানদের হাতে অবরুদ্ধ মক্কা
খুলাফায়ে রাশেদা বা নবি মুহাম্মদের প্রথম চার খলিফার মৃত্যুর পরে রাজনৈতিক কারণে উমাইয়াদের পক্ষ থেকে দুইবার অবরোধের মুখে পড়ে মুসলমানদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত এই নগরী। মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর ইসলামি দুনিয়ার খলিফা হিসেবে সামনে আসেন তার পুত্র ইয়াজিদ (৬৪৬-৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দ)। মক্কা ও মদিনার বাসিন্দা এবং মহানবি সা. এর অনেক সহচর তাকে খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানান। তারই সূত্রে কারবালায় ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে শহিদ হন নবি-দৌহিত্র হজরত হুসাইন রা.। কারাবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর মক্কা-মদিনা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। কিন্তু অত্যন্ত নির্দয়ভাবে ইয়াজিদের বাহিনী মদিনায় আক্রমণ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
মদিনার পর ৬৮৩ সালে প্রথমবার মক্কা অবরোধ করে ইয়াজিদ বাহিনী। দুই মাস মক্কা অবরোধ করে রাখে তারা। সেবার এই আক্রমণের ফলে কাবাঘরও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাবাঘর আগুনের কারণে আংশিক পুড়ে যায়। হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরটি ভেঙে তিন টুকরো হয়ে যায়। (G. R Hawting (2000)The First Dynasty of Islam: The Umayyad Caliphate AD 661-750)
ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল মদিনার নিয়ন্ত্রণের পর মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়রের (৬২৪-৬৯২ খ্রিষ্টাব্দ) নেতৃত্বে যে 'বিদ্রোহ' দানা বাঁধছিল তা শক্ত হাতে দমন করা। এই অবরোধ চলাকালেই ঘোড়া থেকে পড়ে খলিফা ইয়াজিদের মৃত্যুর খবর এলে তার বাহিনী অবরোধ তুলে নিয়ে সিরিয়ায় ফিরে যায়।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছর ইমাম হুসাইনকে হত্যা, দ্বিতীয় বছর মদিনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এবং তৃতীয় বছর মক্কায় আক্রমণ ও কাবাঘরকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কারণে ইসলামের রাজনৈতিক ইতিহাসে ইয়াজিদ নিন্দিত ও ঘৃণ্য চরিত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
উমাইয়াদের দ্বারা দ্বিতীয়বার অবরুদ্ধ মক্কা
ইয়াজিদের পর আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান (৬৪৪-৭০৫ খ্রিষ্টাব্দ) এর হুকুমে খেলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বী নিশ্চিহ্ন করার জন্য ৬৯২ সালে দ্বিতীয়বার মক্কা অবরোধ করা হয়। ইয়াজিদ মদিনাকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের শক্ত প্রতিরোধের কারণে মক্কার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ইয়াজিদের পর আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ান আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের। ক্ষমতায় এসেই আবদুল মালিক তার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সেনাপতি হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফকে মক্কায় পাঠান। ৬৮৯ সালে মক্কা অবরোধ করেও দামেস্কের বিদ্রোহ দমনের জন্য হাজ্জাজকে ডেকে পাঠালে তখনকার মতো অবরোধ তুলে নিতে হয়। ৬৯০ সালে চেষ্টা করেও কোনো কার্যকর অবরোধ তৈরি করতে পারেননি। ৬৯১ সালে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের ভাই বসরার গভর্নর মুসআব ইবনে জুবায়েরকে পরাজিত করে মক্কার দিকে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার ফুরসত পান হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ।
৬৯২ সালে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ (৬৬১-৭১৪ খ্রিষ্টাব্দ) ১২ হাজার দুর্ধর্ষ সিরিয়ানযোদ্ধা নিয়ে তার জন্মভূমি তায়েফের ঘাঁটি গাড়েন। আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের নির্দেশ ছিল আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়রের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখার চেষ্টা করা। কিন্তু কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার গ্লানি হাজ্জাজকে মরিয়া করে তুলেছিল।
২৫ মার্চ ৬৯২ সালে হাজ্জাজ মক্কা অবরোধ শুরু করেন। তারিক ইবনে আমরের নেতৃত্বে আরেকটি সেনাদল এক মাস পরে এসে হাজ্জাজের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। শহরের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দিলে সমস্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যন্ত কঠোরভাবে হাজ্জাজ লাগাতার ছয় মাস অবরুদ্ধ করে রাখেন মক্কাবাসীকে। এতে শহরে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। চরম খাদ্যাভাবে মানুষ মারা যেতে থাকে।
শহরের পার্শ্ববর্তী কুবেজ পাহাড় থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে হাজ্জাজ বাহিনী। এর ভেতর হজ্জ্বের মৌসুম শুরু হলেও গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকে। বয়োঃবৃদ্ধ বিখ্যাত সাহাবি ও ফকিহ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর হজ্জ্ব চলাবস্থায় অন্তত গোলাবর্ষণ না করতে অনুরোধ করলে সাময়িকভাবে গোলা নিক্ষেপ বন্ধ করা হয়। শহরে প্রবেশ করে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ কাবাঘর তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করতে চাইলে ইবনে জুবায়ের বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাজ্জাজ কাবাঘরে পাথর নিক্ষেপের নির্দেশ দেন বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মত। পাথর নিক্ষেপের কারণে পবিত্র কাবাগৃহের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এক পর্যায়ে অবরোধকারীরা শহরে প্রবেশ করে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের ও তার অনুসারীদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানালে মহানবির প্রিয় এই সাহাবি ও তার পুত্রদেরকে কাবার পাশেইনির্দয়ভাবে হত্যা করে হাজ্জাজের বাহিনী।
আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের মাথা কেটে খলিফা আবদুল মলিক ইবনে মারওয়ানের কাছে পৌঁছে দেন হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ। দেহটিকে ক্রুশবিদ্ধ করে হাজ্জাজ ও তার সৈন্যরা উল্লাস করেন।
মক্কা অবরোধ, কাবাঘর ধ্বংস, আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের শিরোচ্ছেদ ও দেহকেক্রুশবিদ্ধকরার কারণে ইতিহাসে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ একজন নির্দয় ও নিষ্ঠুর শাসক হিসেবে আজও পরিচিত।
১৯৭৯ সালের ভয়ঙ্কর অবরোধ
ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী মহাপ্রলয়ের আগে মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দিতে দু'জন ব্যক্তির আগমন ঘটবে। এর একজন হলেন হজরত ঈসা আ.। খ্রিষ্টজগত যাকে যিশু নামে চেনে। তিনি পূণরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন। তার আগে আসবেন ইমাম মাহদি। তার নাম হবে মুহাম্মদ। হজ্জ্বের তাওয়াফরত অবস্থায় মুসলমানরা তাকে আবিষ্কার করে নিজেদের নেতা বানিয়ে নেবে।
এই বিশ্বাসটিকে কাজে লাগিয়ে সৌদি আরবের নাজদের বাসিন্দা জুহাইমিন আল ওতাইবি একদল বিপথগামী তরুণ-তরুণীকে নিয়ে ১৯৭৯ সালে কাবা অবরোধ করে বসেন। ওতাইবি তার শ্যালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-কাহতানিকে ইমাম মাহদি সাজিয়ে এই বিপদজনক অবরোধ করেন হিজরি নববর্ষের ১ম দিন। তাদের এমন আজগুবি দাবি আর কর্মকাণ্ডে হৈ চৈ পড়ে যায়।
জুহাইমিন আল ওতাইবি মনে করতেন সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠী লুঠেরা ও ভণ্ড। তাদের হটিয়ে নতুন শাসন কায়েমের স্বপ্ন দেখতেন এই যুবক। এ নিয়ে প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলার মাত্র এক বছর আগেই তিনি ছাড়া পেয়েছেন। জেলেই পরিচয় হয় মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-কাহতানির সঙ্গে। কাহতানিকে ইমাম মাহদি বলে বুঝিয়ে নেতা হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হন ওতাইবি। এর মাঝে কাহতানির বোনকে বিয়ে করে সম্পর্কটা আরো শক্তিশালী করে নেন। ওতাইবি বুঝতে পারেন সৌদ পরিবারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হলে একটি শক্তিশালী চিন্তা ও একদল যোদ্ধার প্রয়োজন। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ওতাইবি তাই ইসলামের ইমাম মাহদির ধারণাকে কাজে লাগিয়ে সহজেই একদল তরুণ-তরুণীকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হন। সবাইকে সামরিক প্রশিক্ষণও দেন নিজে। সৌদ পরিবারের বিরোধী কিছু ধনাঢ্য পরিবারের আর্থিক সহযোগিতায় এই সশস্ত্র দলটি খুব দ্রুতই শক্তিশালী হয়ে উঠে।
১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর ফজরের নামাজের প্রস্তুতিরত ইমামকে হঠাৎ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে মাইক কেড়ে নেয়। জুহামিন আল ওতাইবি মাইক নিয়েই সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দেওয়া শুরু করেন। হাদিস শুনিয়ে কাহতানিকে ইমাম মাহদি বলে পরিচয় করিয়ে দেন। হারাম শরিফ এলাকায় তখন প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ নামাজের জন্য প্রস্তুত। তাদের অধিকাংশ ওতাইবির কথার কিছুই বুঝতে পারলেন না। একে তো ওতাইবি আরবিতে বক্তৃতা করছিলেন তার উপর তার ভাষায় ছিল নাজদের আঞ্চলিক উচ্চারণ। অন্যদিকে কাবা চত্বরের একটা বড় সংখ্যক মানুষই ছিল অনারবি। কিন্তু গুলির শব্দ আর হৈ চৈ-হাঙ্গামার কারণে সবাই ভয় পাচ্ছিলেন। ইসলাম ধর্মের নির্দেশনা মতে, কাবা এলাকায় রক্তপাত ও যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম বা নিষিদ্ধ। ফলে সবার কাছে এই ঘটনা ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত।
নারী-পুরুষ মিলিয়ে এই দলটির সদস্য সংখ্যা ছিল চার থেকে পাঁচ শ। অনেককে ওরা ছেড়ে দিলেও কাউকে কাউকে জিম্মি করে রাখে। প্রশিক্ষিত স্নাইপারদল পজিশন নিয়ে গম্বুজ ও মিনারের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলি করে মারতে থাকে। সৌদি প্রিন্স ফাহাদ ও ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান দেশের বাইরে থাকায় এই মিশনের দায়িত্ব বর্তায় কিং খালিদ ও প্রিন্স সুলতানের উপর। সৌদি আর্মি, ন্যাশনাল গার্ড এবং পাকিস্তান আর্মির একটি স্পেশাল ফোর্স অভিযানে অংশ নেয়। শেষমেশ দুই সপ্তাহ অবরুদ্ধ থাকার পর কাবা চত্বর পুরোপুরি মুক্ত হয়। কথিত ইমাম মাহদি ঘটনাস্থলেই মারা যান। আড়াই শ'র বেশি নিহত এবং সাড়ে পাঁচ শ'র বেশি মানুষ এ ঘটনায় আহত হয়। সাতষট্টিজন অনুসারীসহ জুহাইমিন আল-ওতাইবিকে জীবিত গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে জনসম্মুখে তাদের সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের কনস্টান্টিনোপল অবরোধ
যে শহরের দুর্ভেদ্য দেয়ালে ধাক্কা মেরে টলাতে পারেনি বহু অভিজ্ঞ যোদ্ধা, যে শহরকে মনে করা হতো অজেয়, হাজার বছরের পুরনো সেই শহরকে শেষ পর্যন্ত জয় করলেন মাত্র ২১ বছরের এক তরুণ তুর্কি। ১৪৫১ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি পিতা অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের মৃত্যুর পর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে ক্ষমতায় বসা দ্বিতীয় মুহাম্মদ হলেন সেই বিজেতা তরুণ। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর থেকে ইতিহাস যাকে চেনে সুলতান মুহাম্মদ 'আল-ফাতিহ' (বিজেতা) নামে।
ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে কনস্টান্টিনোপলের (বর্তমান ইস্তাম্বুল) ভৌগলিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব সীমাহীন। মূলত এ কারণেই এই শহরটি দখলের বারবার চেষ্টা করেছেন অনেক শাসকেরা। আরবরা একাধিকবার দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আরবদের লক্ষ ছিল এ শহরের মধ্য দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করে ধর্ম প্রচার, বাণিজ্য ও সাম্রাজ্য বিস্তার করা। শুধু আরব বা মুসলমানরাই নয়, শহরটি দখলের চেষ্টা করেছে খোদ খ্রিষ্টধর্মযোদ্ধারাও। ১২০২-১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চতুর্থ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট।এ সময় তার নেতৃত্বে এই শহরটিও দখল করা হয়। ক্রুসেডাররা কনস্টান্টিনোপলকে ঘিরে একটি স্বতন্ত্র ল্যাটিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।
আরবদের পর মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব আসে অটোমান তুর্কিদের হাতে। তুর্কিদের কাছে বলকানদের পরাজয় ও ইউরোপের একটা বড় অংশ অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে এলে বাইজেন্টাইনের রাজধানী দখল করা অটোমান সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। বলকানদের ষড়যন্ত্র এবং কনস্টান্টিনোপলকে তুর্কিদের বিরুদ্ধে এক ধরনের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের কারণে প্রায় সব শাসকদের মনোযোগ ছিল এ শহরের উপর। অন্যদিকে 'সৌভাগ্যবান সেনাপতির হাতে' এ শহরের বিজয় হবে এ কথা উল্লেখ করে নবি মুহাম্মদ সা. এর ভবিষ্যৎবাণী আছে এই বিশ্বাস মুসলিম নেতাদের আরো বেশি উদ্বুদ্ব করে। ফলে সুলতান ওসমান, বায়েজিদ ও মুরাদ এ শহর জয় করার আাপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সবাই হয়েছেন ব্যর্থ।
শেষ পর্যন্ত ১৪৫৩ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ২৯ মে পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ ও দুঃসাহসী যুদ্ধের পর ২১ বছরের তরুণ শাসক সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ কনস্টান্টিনোপল জয় করেন।
সুরক্ষিত শহর
খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে কনস্টান্টিনোপল শহর গড়ে ওঠে। এর অনেক পর সম্রাট প্রথম কনস্টান্টাইন শহরটিকে আধুনিক ধাঁচে নতুনভাবে সাজিয়ে জনপ্রিয় করে তুলেন। রোমান সম্রাট ৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেন। প্রায় ত্রিভুজ আকৃতির এ শহর ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক কারণেই ছিল অনেকটা সুরক্ষিত। তিন দিক থেকে জলে ঘেরা। উত্তরে গোল্ডেন হর্ন, শহরে প্রবেশের জলপথ। পূর্বে বসফরাস প্রণালী। দক্ষিণে মার্মার সাগর। গোল্ডেন হর্নের জলপথ দিয়ে চতুর্থ ক্রুসেডাররা শহর দখল করেছিল। এরপর থেকে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য এ পথে বসানো হয়েছে শক্তিশালী বিশেষ চেইন। এই চেইনকে এড়িয়ে কোনো জাহাজের পক্ষে শহরে প্রবেশ করা অসম্ভব। চেইন টেনে শত্রু জাহাজের তলা ফাটিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া যায় খুব সহজেই। ফলে এ দিক থেকে শহর একদম নিরাপদ।
যুদ্ধ জাহাজ জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য কনস্টান্টিনোপলের হাতে ছিল 'গ্রিক ফায়ার' নামে বিশেষ এক অস্ত্র। যা দিয়ে অগ্নি নিক্ষেপ করে অনায়াসে সবকিছু জ্বালিয়ে ছাই করে দেওয়া যায়। শহরের ২০ কি.মি. সীমানা জুড়ে রয়েছে পঞ্চম শতকের থিওডোসিয়ান নিরাপত্তা বেষ্টনী। ৪০ ফুট উঁচু ও ৬০ ফুট পুরুত্বের দুর্ভেদ্য দেয়াল। গোলা বর্ষণ, গরম পানি ও মরিচ নিক্ষেপের জন্য ৫০ মিটার পর পর একটি করে টাওয়ার। জলসীমায় প্রতিরক্ষার জন্য রয়েছে জেনোয়া, ভেনিস, আনকোনা, আরাগান, ফ্রান্স ও বাইজেন্টাইনদের ২৬টি যুদ্ধ জাহাজ।
শহরের অভ্যন্তরে রয়েছে বাইজেন্টাইনসহ ভেনিসিয়ান ও জেনোসীয় ভাড়াটে সৈন্য মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার সেনা সদস্য। এদের সঙ্গে ইতালির জেনোয়া থেকে সাত শ যোদ্ধা নিয়ে যোগ দেন দুর্ধর্ষ সৈনিক জিওভান্নো জিসটিনিয়ানি। নিরাপত্তা প্রাচীরের রক্ষক ও যোদ্ধা হিসেবে তার বিশেষ খ্যাতি ছিল। তাকে দেয়াল প্রতিরক্ষার প্রধান সেনাপতি হিসেবেই নিয়োগ দেন সম্রাট। ৫০ হাজারের মতো বেসামরিক নাগরিক ছিল শহরের বাসিন্দা হিসেবে।
অবরুদ্ধ ৫৩ দিন
তরুণ অটোমান সুলতানকে অল্প বয়সী আর অভিজ্ঞতাহীন বালক ভেবে শুরুতে ভুল করেন বাইজেন্টাইন সম্রাট একাদশ কনস্টান্টাইন। শীঘ্রই সম্রাটের ভুল ভাঙে। সালতানাতের ক্ষমতা গ্রহণের পরই মুহাম্মদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রধান বাণিজ্যপথ নিজের কব্জায় নিয়ে নেন। বসফরাস প্রণালীর ইউরোপ-তীরে 'রুমেলি হিসারি' নামে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। বসফরাসের এশিয়া-তীরে এর আগে 'আনাদুলু হিসারি' নামে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন সুলতান বায়েজিদ ইলদিরিম। এ দুটি দুর্গের মাধ্যমে এবার যুদ্ধের আগেই বসফরাসে অটোমানদের আধিপত্যের বিস্তার ঘটে।
মুহাম্মদ তার সেনাবাহিনীর দিকে নজর দেন। গড়ে তুলেন দুর্ধর্ষ জেনিসারি বাহিনী। শক্তিশালী দাস ও সাধারণ সৈনিকদের সমন্বয়ে তৈরি করেন এ পদাতিক বাহিনী। সমুদ্রপথে লড়াই করার জন্য গড়ে তুলেন একটি বিশাল অটোমান নৌবাহিনী। হাঙ্গেরির বিখ্যাত প্রকৌশলী আরবানের সাহায্যে তৈরি করেন 'ব্যাসিলিকা' কামান। ত্রিশ জোড়া ষাঁড় ও তিন শ সৈনিককে বহন করতে হতো এই বৃহৎ কামান। ২৭২ কেজি ওজনের একটি গোলা প্রায় এক মাইল দূরে তীব্রগতিতে ছুঁড়ে মারতে পারত এ কামান। কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীন থেওডোসিয়ান দেয়াল ভাঙার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত কামান আর একটিও ছিল না কোথাও। এটি ছিল যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো একটি অস্ত্র।
২ এপ্রিল প্রায় পঞ্চাশ হাজার সৈন্য নিয়ে শহরের কাছে তাবু ফেলেন সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ। আক্রমণের পূর্বে ইসলাম ধর্মের রীতি মেনে সুলতান সম্রাটের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাব মানলে ধর্মীয় স্থান, শহর ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে জানান। সম্রাটকে পেলোনিসের রাজত্ব ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে বলা হলেও সম্রাট আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে যুদ্ধকে বেছে নেন।
৬ এপ্রিল শুরু হয় যুদ্ধ। সুলতানের যোদ্ধারা শহর ঘিরে ফেলে। নৌবাহিনি গোল্ডেন হর্নের প্রবেশপথে অবস্থান নেয়। অবরোধ শুরু হয়। গর্জে উঠে আরবানের বিধ্বংসী ব্যাসিলিকা কামান। থিওডোসিয়ান দেয়াল কেঁপে উঠে। কামান থেকে একবার আঘাত আসার পর পরবর্তী গোলার আঘাত হানার মাঝখানে পাওয়া যেত তিন ঘণ্টা সময়। একই স্থানে দ্বিতীয়বার গোলা পড়ত না বেশির ভাগ সময়। এই সুযোগে দেয়ালের ক্ষতি সারিয়ে তুলতেন জিওভান্নির যোদ্ধারা।
লাগাতার দুই সপ্তাহ অবরোধের পর ১৮ এপ্রিল চারটি গোলা থিওডোসিয়ান দেয়ালের একই স্থানে আঘাত করলে বড় একটি গর্তের সৃষ্টি হয়। অটোমান সৈন্যরা সে গর্ত দিয়ে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাইজেন্টাইনদের বিশেষ অস্ত্র 'গ্রিক ফায়ার' এর মুখে পড়ে। গ্রিক ফায়ারের আগুন সৈন্যদের গায়ে লেগে যায়। সেদিন মারা যায় দুই হাজার অটোমান সেনা। শহরে প্রবেশ করা সম্ভব হয় না।
জাহাজধ্বংসী চেইনের কারণে গোল্ডেন হর্নে অবস্থানরত নৌবহরও শহরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। জেনোয়া থেকে বাইজেন্টাইনদের সাহায্য করতে আসা কিছু জাহাজ বরং অটোমানদের পাশ কাটিয়ে শহরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
পাহাড়ের উপর দিয়ে অটোমান জাহাজের গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ
২১ এপ্রিলে সুলতান মুহাম্মদ এক অদ্ভুত ও দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রতিরক্ষা চেইন ডিঙিয়ে কোনোভাবেই গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করা না গেলে সুলতান পাহাড়ি উপত্যকার উপর দিয়ে জাহাজগুলো টেনে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ফেলা হলো গাছের গুড়ি। তার উপর গরু ও মহিষের চর্বির প্রলেপ দিয়ে রাতের অন্ধকারে ৭০ টি জাহাজ টেনে গোল্ডেন হর্নে নিয়ে যাওয়া হলো। এবার পুরোপুরি অটোমানদের অনুকুলে চলে এলো যুদ্ধ। কিন্তু তখনও থিওডোসিয়ান দেয়াল ভাঙতে না পারায় শহরের ভেতর সেনা প্রবেশ সম্ভব হচ্ছিল না।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সুড়ঙ্গ খুঁড়ে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করা হবে। কিন্তু এর ভেতর কয়েকজন অটোমান যোদ্ধাকে আটক করতে সক্ষম হয় বাইজেন্টাইন সেনারা। আটককৃতদের নির্যাতন করে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পরিকল্পনা জেনে যায় ১৬ মে নাগাদ। পাল্টা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এবার 'গ্রিক ফায়ার' দিয়ে উল্টো অটোমানদের আক্রমণ করা হয়। সুলতানের এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সিদ্ধান্ত হয় কামান আক্রমণ আরো জোরদার করার।
২৯ মে কামানের তিনটি গোলা একই জায়গায় আঘাত করলে থিওডোসিয়ান দেয়ালে বড়সর গর্তের সৃষ্টি হয়। শত শত অটোমান যোদ্ধাদের এবার আর রোখা গেল না। প্রচণ্ড সংঘর্ষ শুরু হলো। বাইজেন্টাইন দেয়ালরক্ষক জিওভান্নি জিসটিনিয়ানি আহত হলে তার যোদ্ধারা হাল ছেড়ে দেয়। এর ভেতর হাসান উলুবাদি নামের এক অটোমান যোদ্ধা তীব্র তীরের মুখেও অবিচল থেকে মই বেয়ে দেয়ালে উঠে অটোমান পতাকা গেঁথে দেয়। ছুঁড়ে ফেলে দেয় বাইজেন্টাইন পতাকা। এতে বাইজেন্টাইন সেনারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, অন্যদিকে অটোমানরা আনন্দে উল্লসিত হয়ে নতুন উদ্যমে যুদ্ধ শুরু করে। বাইজেন্টাইন সম্রাট যুদ্ধরত অবস্থায় মারা পড়েন। শহর চলে যায় অটোমান যোদ্ধাদের দখলে। ৫৩ দিনের দীর্ঘ অবরোধের পর সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ পৃথিবীর অজেয় শহর জয় করে ইতিহাসে নাম লেখান 'আল-ফাতিহ' বা বিজয়ী বীর হিসেবে।