পালোয়ান: গামা ও গোবরবাবু
আমার চাকরিজীবনে একদিন জেলা চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যসচিবের জন্য অপেক্ষা করছি। আমিও সদস্যদের একজন। সদস্যসচিবের নামের শেষাংশ পাহ্লোয়ান। এই প্রথম দেখা হবে। পালোয়ান শুনেই আমি নড়েচড়ে বসি, ঈষৎ আতঙ্ক বিরাজ করে আমার মধ্যে। আমার স্কুলজীবনে শোনা ও বিশ্বাস করা একটি কাহিনি মনে পড়ে। বিখ্যাত পাহ্লোয়ান গামাকে কোনো এক বিদেশি চ্যালেঞ্জ করে বসেন। গামা পরিচয়পর্বে হাত মোসাফা করার সময় এমন চাপ দেন যে হাতের ভেতরের সব হাড় গুঁড়া হয়ে যায়। গুঁড়া মানে একেবারে সাদা পাউডার।
আমি আমার দুই হাতই পেছন দিকে নিয়ে যাই। কিন্তু যে ব্যক্তি রুমে ঢুকে বললেন, আমি পাহ্লোয়ান, তাঁর লিকলিকে শরীর, সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন নাম আমাদের অনেককেই যথেষ্ট আমোদ জুগিয়েছে। তাঁর কাছেই জানতে পারি, বাংলাদেশের জামালপুরে তাঁর চেয়েও ক্ষীণ দেহের কজন পাহ্লোয়ান আছেন। আমরা অবশ্য তখন বলতাম পালোয়ান।
আমার শোনা প্রথম পালোয়ানের নাম গামা, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণিতে আমাদের পাঠ্য ছিল। গামার নিত্যদিনের খাবার কী, তা পরীক্ষায় আসবেই—এ ধারণা আমাদের ছিল, পরীক্ষায় সত্যিই এসেছিল। আমার দেখা দ্বিতীয় পালোয়ানের নাম আসলাম। ষাটের দশকের প্রথম দিকে ঢাকা স্টেডিয়ামে কুস্তি লড়েছিলেন। কার সঙ্গে, সেটা আমার মনে নেই, লড়াইটা আবছা মনে পড়ে। আরও দু-একজন বিখ্যাত বীর পালোয়ান ভুলু ব্রাদ্রার্স, গোগার নাম স্কুলজীবনে শুনেছি।
বাঙালি পালোয়ান গোবরবাবুর কথা পড়েছি সুনির্মল বসুর ছড়ায়:
হাবড়া মাঠে কুস্তি হবে গোবরা এবং গামার
দেখতে সেটা ইচ্ছা হল নন্দলালের মামার
স্বয়ং তিনি কুস্তি লড়েন
মুগুর ভাজেন স্যান্ডো করেন
বুকের উপর পাথর রাখেন বোতাম খুলে জামার।
ছায়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ার কথাও আমরা শুনেছি। পালোয়ানদের ছাড় দেননি সুকুমার রায়, ছাড় দেওয়ার কথাও নয়। তিনি লিখলেন ভিন্ন আঙ্গিকে।
খেলার দলে ষষ্টিচরণ হাতী লোফেন যখন তখন
দেহের কজন উনিশটি মণ, শক্ত যেন লোহার গঠন।
ষষ্টিচরণের মাথায় প্রকাণ্ড ইট পড়েও মাথাটা অটুট রইল কিন্তু ইটটা ভেঙে একেবারে গুঁড়া। এক গুন্ডা তাঁর মাথায় বাঁশ দিয়ে বেদম আঘাত করতেই বাঁশটা শোলার মতো ভেঙে পড়ল। তিনি বিকেলে গন্ডা দশেক মণ্ডা ছাড়া কিছু খান না। পালোয়ান হলে এমনই হয়।
গামা: গোলাম মোহাম্মদ বকশ
গামার শক্তিমত্তা ও বীরত্বের চেয়েও যে বিষয়টি শৈশবে আমাদের বেশি মুগ্ধ করেছিল, তা হচ্ছে এই কুস্তিগিরের নিত্যকার খাওয়া:
২টি দেশি খাসি
৬টি দেশি মুরগি
১০ লিটার দুধ
দেড় পাউন্ড বিচুর্ণ পেস্তাবাদাম
আধা লিটার ঘি
৬ পাউন্ড মাখন
৩ ঝুড়ি মৌসুমি ফল
ফলের রস, অন্যান্য মসলা ও ঔষধি, যা পরিপাকযন্ত্রসহ সচল রাখে মাংশপেশি ও স্নায়ুতন্ত্র।
এমনই একটি তালিকা পড়ার পর আমাদের একজন স্কুলের স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, গামা কি ভাত কিংবা রুটি খান না?
এখন বুঝি স্যার তাঁর সৃজনশীলতা দিয়ে আরও যোগ করেন, অবশ্যই খান লাল চালের ভাত, যে ভাতের ফেন গালা হয় না, কাউনের জাউ, যবের ছাতু আর খাস্তারুটি। তখন খুব বিশ্বাস হয়, মনে হয় স্যার নিজে সামনে থেকে গামাকে খেতে দেখছেন।
গামা উপমহাদেশের অজেয় বীর। ১১১ বছর আগে ১৫ অক্টোবর ১৯১০ সালের কুস্তির বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেন। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা কুস্তিগির দাবি করা হয় তাঁকে।
গামার কুস্তিতে বিশ্বখ্যাতির পাশাপাশি তাঁর অসাধারণ মানবিক ও সাহসিক কাজ হচ্ছে দেশ বিভাগকালের দাঙ্গায় লাহারে বহুসংখ্যক হিন্দুকে মুসলমান দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা। সে কারণে হিন্দুদের কাছে তিনি একজন পূজনীয় দেবতুল্য ব্যক্তিত্বও বটে।
১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত পাঞ্জাবের ভারতপ্রান্তে অমৃতসরে একটি মুসলমান কুস্তিগির ভাট পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাঙার আগেই তাঁর পরিবার পাকিস্তান চলে যায়। তিনি লাহোরে বসতি স্থাপন করেন।
১৮৮৮ সালে ১০ বছর বয়সে প্রথম কুস্তির রিংয়ে ঢুকে টানা ৫২ বছর তিনি কুস্তিতে নিয়োজিত থাকেন। তাঁর পরিবার কাশ্মিরী হিন্দু থেকে মুসলমান হিসেবে ধর্মান্তরিত। ছয় বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হলেন, তাঁর নানা নূর পালোয়ান নাতির দায়িত্ব নিলেন এবং তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিলেন—তাঁকেও বড় পালোয়ান হতে হবে।
১০ বছর বয়সেই তিনি ৪০০ কুস্তিগিরের সেরা পনেরোতে চলে আসেন, যোধপুরের মহারাজা তাঁকেই এত কম বয়স বিবেচনায় বিজয়ী ঘোষণা করেন। ১৮৯৫ সালে ১৭ বছর বয়সে তিনি ভারত চ্যাম্পিয়ন রহিম বকশ সুলতানিওয়ালাকে চ্যালেঞ্জ করলেন। ৭ ফুট দীর্ঘ এবং আনুপাতিক শারীরিক গঠন ও শক্তির অধিকারী রহিম বকশ, যে মাত্র ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার গামাকে প্রথম মিনিটেই কুপোকাত করে ফেলবেন, এ নিয়ে কারও মনে সন্দেহ নেই। প্রথম লড়াইতে গামা গা বাঁচিয়ে প্রতিরক্ষামূলক খেলবেন। ভারত চ্যাম্পিয়ন এই তরুণের কাছে রহিম বকশ এতক্ষণ কেন আটকা পড়ে থাকলেন? দ্বিতীয় রাউন্ড লড়াইয়ের শুরুতেই দেখা গেল রহিম বকশের নাক থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। গামা ততক্ষণে আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করেছেন। এই রক্তাক্ত অবস্থাতেই রহিম বকশ তরুণ গামাকে অনেকক্ষণ ধরে রাখলেন। লড়াইটি ড্র হলো।
এটা স্পষ্ট রহিম বকশ তাঁর প্রতিপক্ষ তরুণ যোদ্ধার শক্তি টের পেয়েছেন, তাঁরও বয়স হয়েছে, তিনি আর লড়বেন না। বিশ্রামে যাবেন। গামার চোখ পড়ে রুস্তম-ই-হিন্দ খেতাবের ওপর। এটাই তাঁর চাই। ১৯১০ সালে পৌঁছাতেই তাঁর হাতে ভারতবর্ষের সব শ্রেষ্ঠ কুস্তিগির পরাস্ত হয়েছেন। তিনি ইন্ডিয়ান রেসলিং চ্যাম্পিয়ন রুস্তম-ই-হিন্দ হয়েছেন। সে বছরই তিনি জাহাজে লন্ডন রওনা হলেন। ইউরোপের কুস্তিগিরদের সঙ্গে লড়াই করবেন। কিন্ত দুর্ভাগ্য উচ্চতা কম হওয়ার কারণে তিনি লড়াই থেকে ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে গেলেন।
গামা দমলেন না, চ্যালেঞ্জ করে বসলেন, যেকোনো উচ্চতায় তিনি যেকোনো ওজনের কুস্তিগিরকে ৩০ মিনিটের মধ্যে ছুড়ে ফেলতে পারবেন। ব্রিটিশ রেসলার এবং তাঁদের প্রমোটর আর বি বেঞ্জামিন এটাকে স্রেফ ধাপ্পা হিসেবে উড়িয়ে দিলেন এবং কেউই তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এগিয়ে এলেন না।
এরপর তিনি কৌশল বদলে সুনির্দিষ্টভাবে স্ট্যানিভ জিসকো ও ফ্রাঙ্ক গচকে চ্যালেঞ্জ করলেন—তাঁরা যদি তাঁকে কুস্তিতে হারাতে পারেন, তাহলে তিনি তাঁদের পুরস্কারের অর্থ প্রদান করবেন এবং পরাজয় মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন।
তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সবার আগে যে পেশাদার কুস্তিগির এগিয়ে এলেন, তিনি আমেরিকার বেঞ্জামিন রোলার। প্রথম লড়াইয়ে ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে তিনি বেঞ্জামিনকে মাটিতে শুইয়ে চেপে ধরে রেখে রেফারিকে দিয়ে এক, দুই তিন... গুনিয়ে বিজয়ী হলেন। বেঞ্জামিন তাঁর চালই ধরতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় লড়াইয়ে বেঞ্জামিনকে হারাতে গামার বেগ পেতে হয়েছে। তিনি ৯ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন।
পরের দিন অবিরাম লড়ে তিনি ১২ জন কুস্তিগিরকে হারিয়ে অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের অনুমতি লাভ করেন। তখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্টেনিস্লাভ জিসকো। তাঁর বিপরীতে গামাকে সবাই করুণার চোখে দেখবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ফ্রাঙ্ক গচ তাঁর চ্যালেঞ্জে সাড়া না দেওয়ায় এটাও ধরে নেয়া হয় যে সম্ভবত পরাজয়ের আতঙ্কেই তিনি রিংয়ে গামার মুখোমুখি হতে চাচ্ছেন না। যাই হোক, স্টেনিস্লাভ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলে কথা! তিনি রিংয়ে এলেন ১০ সেপ্টেম্বর ১৯১০। ২ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট লড়াইয়ের পরও জয়-পরাজয় নির্ধারিত হলো না, দুজনের লড়াই ছিল রক্ষণশীল ধরনের। সিদ্ধান্ত না হওয়ায় দর্শকেরা উত্তেজিত হয়েছেন। তবে তাঁদের ক্রোধ ছিল মূলত স্টেনিস্লাভ জিসকোর ওপরই। কারণ, তিনি আগাগোড়া প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
৭ দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বনাম অহংকারী ভারতীয় যুবকের লড়াই। সেদিন এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বেশিক্ষণ যুবকের সামনে টিকতে পারলেন না। গামা ২৫০ পাউন্ড স্টার্লিং পুরস্কার পেলেন এবং বিজয়ী হিসেবে তাঁকে জন বুল বেল্ট পরিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু যেহেতু প্রথম দিনের নির্ধারিত লড়াইয়ে স্টেনিস্লাভকে হারাতে পারেননি, তাঁকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়নি। তবে জন বুল বেল্ট তাঁকে 'রুস্তম-ই-জমানা' অ্যাখ্যায়িত করতে সমর্থন জোগাল।
এই সফরের সময় গামা যাঁদের রিংয়ের ভেতর পরাস্ত করেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকান কুস্তিগির বেঞ্জামিন রোলার, সুইজারল্যান্ডের মরিস ডেরিয়াজ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন সুইজারল্যান্ডের ইউহান লেম, অপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সুইডেনের জেসি পেটারসন।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যাঁরা দাবিদার, গামা অবশিষ্ট সবার কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। তাঁদের মধ্য রয়েছেন জাপানি জুডো চ্যাম্পিয়ন তারো মিয়াকি, রাশিয়ার জর্জ হ্যাকেনস্মিদ, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রাঙ্ক গচ। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকেই রিংয়ের ভেতর গামাকে মোকাবিলা করতে অস্বীকৃতি জানালেন। গামা পুনরায় ব্রিটিশ কুস্তিগিরদের আমন্ত্রণ জানালেন; বললেন—পুরস্কারের অর্থ তিনি দেবেন, তবুও কোনো সাড়া মেলেনি।
ইংল্যান্ড থেকে যখন ভারতে ফিরলেন, এলাহাবাদে রহিম বকশ সুলতানিওয়ালা তাঁকে আবার চ্যালেঞ্জ করলেন। এই লড়াইটি দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল, শেষ পর্যন্ত বিচারকেরা গামাকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন। কাজেই তিনি রুস্তম-ই-হিন্দ খেতাবপ্রাপ্ত হলেন। কুস্তিজীবনে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কাকে মনে করেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি রহিম বকশ সুলতানিওয়ালার নামই বলেছেন।
১৯২৮ সালে স্টেনিস্লাভ জিসকোর সঙ্গে আবার লড়াইয়ে নামার সুযোগ পেয়ে তাঁকে পরাজিত করেন। জীবনের শেষ আনুষ্ঠানিক কুস্তি লড়াইয়ে তিনি মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে জেসি পেটারসনকে পরাজিত করেন। সময়টা ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারি।
১৯৪০ সালে হায়দরাবাদের নিজামের আমন্ত্রণে কুস্তিতে অংশগ্রহণ করেন এবং আমন্ত্রিত অন্য কুস্তিগিরদের ধারাশায়ী করেন। তত দিনে তাঁর বয়সও ভাটির দিকে। বলরাম হীরামন সিং যাদবের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরও তাঁকে পরাস্ত করতে পারেননি।
তিনি তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ভুলু পালোয়ানকে প্রশিক্ষণ দেন। ভুলু টানা ২০ বছর পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
তাঁর পাঁচ পুত্রই অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেন—এটা তাঁর জন্য বড় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাকিস্তান সরকার তাঁর চিকিৎসা ব্যয় বহন করে। ভারতবর্ষের বিখ্যাত সব কুস্তিগির হামিদা পালোয়ান বা গামা পালোয়ানের কাছে কমবেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
গামার খ্যাতিমান ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন আসলাম পালোয়ান ও গোগা। আসলাম ছিলেন গামার পালকপুত্র। আসলাম হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের সুপারম্যান।
গামা ১৯৫২ সালে অবসরে যান। এ সময় পর্যন্ত তিনি আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাননি। ২৩ মে ১৯৬০ সাল, মৃত্যু পর্যন্ত লাহোরেই ছিলেন।
ছড়ার সেই গোবর গামার গোবরবাবুর পুরোদস্তুর বাঙালি নাম যতীন্দ্রচরণ গুহ। ১৯২১ সালে ঠিক ১০০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন প্রথম এশিয়ান। গোবরবাবুর মতো এত সম্মানজনক অবস্থানে শত বছরে আর কোনো বাঙালি পৌঁছাতে পারেননি।
গুহ পরিবারই এই মিথ ভেঙে দেয় যে কুস্তি কেবল মুসলমান পরিবারের সন্তানদের জন্য নয়। হিন্দুরাও লড়তে জানে। কলকাতার মসজিদবাড়ি রোডে গোবরবাবুর প্রপিতামহ কুস্তি ও ব্যায়ামের আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দাদা অম্বিকা চরণ গুহ গোবরবাবুর প্রথম কুস্তি প্রশিক্ষক। তাঁর বাবা রামচরণ গুহও কুস্তিগির ছিলেন। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার ২৯০ পাউন্ড ওজনের গোবরবাবু ব্যায়াম, বডিবিল্ডিং ও কুস্তিতে যেমন সেরা ছিলেন, তিনি ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতেরও ছিলেন নিষ্ঠাবান সাধক।
১৮ বছর বয়সে কুস্তি প্রতিযোগিতায় নবরঙ সিংকে হারিয়ে তাঁর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। ১৯১০ সালে লন্ডনের জন বুল সোসাইটি আয়োজিত কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি অংশ নেন। তারপর ১৯১২ ও ১৯১৫ সালেও ইউরোপে গমন করেন। তিনি জিমি এসন ও জর্জ হেকেনস্মিদকে হারিয়ে দেন। ৩০ আগস্ট ১৯২১ সালে অ্যান্ড স্যানটেলকে হারিয়ে ওয়ার্ল্ড লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন। ২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে গোবরবাবু প্রয়াত হন। কলকাতার গোবরবাবু জিমনেশিয়াম এখনো সচল ও সক্রিয়।
এটা সত্যি যে কুস্তির ঐতিহ্য বাঙালিদের নেই। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জব্বারের বলিখেলাও কুস্তি হিসেবে নন্দিত ও সুপরিচিত হয়ে উঠছে।