ভ্যান গঘের পরাণভরা বসন্ত চিত্রণ
'এখানে শিগগিরই বসন্ত নামবে
সবুজ উদ্দাম বসন্ত!`১
নতুন পুষ্প গন্ধ বসন্ত, নতুন বাসনার মহার্ঘ্য ঋতুকাল। জীবনকে তুড়ি মেরে ফতুর করে দিতে কোন এক এপ্রিল শেষের তিরিশ নম্বর দিনে মর্ত্যধামে যাঁর অবতরণ, তিনি আমাদের রঙপুরুষ ভিনসেন্ট ওয়েলহেম ভিনসেন্ট ভ্যানগঘ। আজ থেকে একশো আটষট্টি বছর আগে এক বসন্তদিনে তাঁর আবির্ভাব। একদা যেমন অগণিত তারার রূপসীমাখা জোসনা রাতে নক্ষত্রের গায়ে লিখবার খায়েশে ছিল তাঁর নিশি উচাটন প্রহর উদযাপন, আবার আলুভোজী, সূর্যমুখী ও আত্মোন্যাস প্রতিকৃতি আঁকবার কোশেশ।
ছিল সাথে শুধু পথ। পথের বাঁক। আঁকবার পায়তারা। রঞ্জিত আলোর পট। রঙবাহার। আলোর মজমা শুরুর আগে সেই শীত দেশে কেমন করে প্রখর আলোর পূর্বাভাস নিয়ে বসন্ত আসে তখন?
`শীত এলে বসন্ত কী আর খুব দূরে থাকতে পারে`?
শীতের দেশের মানুষের কাছে বসন্ত সবসময়ই একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মরশুম। বিশেষত সে সব শীত দেশে যখন গ্রীষ্ম অবধি প্রায় অন্ধকার! একফালি রোদ এর ঝলকের জন্য যেন কৃতজ্ঞতার কোন শেষ নেই! প্রতিদিনই বৃষ্টি, না হয় বা ঝাপসা বাহির। আর ঠান্ডা যেন শেষ হবার নয়।
ঘুম থেকে উঠার সময় বসন্তের আলো ঘরের জানালা দিয়ে আলো দিতে পারে এমন মহেন্দ্র প্রত্যুষের অপেক্ষায় থাকা। দিনমান কাজ শেষে রাতের কালো রঙের চেয়ে আকাশে একটি উষ্ণ সূর্যের অভ্যর্থনার প্রতীক্ষায় থাকা। এই রোদ আর বসন্ত নিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনীতে কি বিবৃত আছে দেখা যাক।
গ্রীক শস্যদেবী পারসেফোনি, ছিলেন জিউস এবং ডিমিটারের সুন্দরী কন্যা। তিনি যেখানেই পা রাখতেন, ফুল প্রস্ফুটিত হত এবং সমস্ত প্রাণী তার সৌন্দর্যে অবাক হয়ে তাকে অনুসরণ করত। গোপন সাম্রাজ্যের অধিপতি হেডেস নিঃসীম অন্ধকারে একাকী বিষণ্ণ এবং হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। একদিন, তিনি পৃথিবীর দিকে চেয়ে সুন্দরী পারসেফোনিকে দেখতে পেলেন। সিদ্ধান্ত ছিল স্রষ্টার কাছে তাকে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তিনি পারসেফোনিকে কব্জা করে তাঁর রথে রেখেছিলেন এবং কেউ তাকে দেখার আগেই তার গোপন সাম্রাজ্যে ফিরে যান।
ফসল ও কৃষির দেবী ডিমিটার তখন তার নিখোঁজ মেয়ের সন্ধানে পাগলের মতো পৃথিবীতে চষে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে হেডিসই তাকে বন্দী করেছিল। ক্ষুব্ধ ও প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তিনি মেয়েকে তার কাছে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তার সকল কর্তব্যকে অবহেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফলে সমস্ত গাছপালা শীঘ্রই মারা যেতে শুরু করে। দেবী বিশ্বকে তুষারে আবৃত করে রেখেছিলেন যাতে বিশ্ব তার হৃদয়ের বেদনা অনুভব করতে পারে। অন্যান্য সমস্ত দেবদেবীরা ডিমিটারের কাছে অনুরোধ করেছিলেন যে তিনি পৃথিবীকে আবারও যাতে উর্বর করে তোলে, তবে তিনি তাদের শর্ত আরোপ করে দিয়েছিলেন যে তার মেয়েকে তার কাছে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি কোনও কাজ করবেন না। জিউস, ডিমিটারের বেদনার কাছে পৃথিবীর সমস্ত কিছু হারাতে যাওয়ার ভয়ে হেডেস রাজি হয়ে পারসিফোনকে প্রত্যার্পণ করার নির্দেশ দিলেন।
পারসেফোনি বন্দি থেকে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ছিল, খুব খুশী হয়েছিল যে শীঘ্রই সে তার মায়ের সাথে পুনরায় মিলিত হতে চলেছে। এদিকে হেডিস তাকে যে খাবারের থালাটি দিয়েছিল তা থেকে পারসেফোনি মাত্র ছয়টি ডালিমের বীজ খেয়েছিল। জিউস এবং ডেমিটার যখন তাদের মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছিল তখন হেডিস ঘোষণা করেছিল যে পারসেফোনি মৃত্যুপথযাত্রীদের খাবার খেয়েছে বলে তাকে মুক্তি দেওয়া যাবে না। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, জিউস একটি আপোষ করেছিল যে, এরপর থেকে পারসেফোনি হেডিসের পাতাল রাজ্যে ছয় মাস এবং তার মায়ের সাথে পৃথিবীতে ছয় মাস থাকবে। সেই থেকে বসন্ত গ্রীষ্ম মিলে ছয়মাস পৃথিবীতে রোদের ছড়াছড়ি! `বসন্ত হ'ল সতেজ সবুজ কচি ভুট্টা এবং ফুলের গোলাপী পাপড়ির দিন।`২
নারীর গর্ভাশয় থেকে পাপড়ি মেলে একটি ফুল বেড়ে উঠছে, এই যুবতী নারী বসন্ত, জন্মের এবং প্রকৃতির পুনরুত্থানের সত্যকে প্রকাশ করছে। প্রতিনিধিত্বকারী অন্য তিন সহচর ঋতুচিত্র পাশাপাশি উপস্থিত, এই চিত্রকর্মটি একবার ভেনিসের পালাজো বার্বোয়ের সিলিংয়ে শোভিত দেখতে পেয়েছিলেন ১৬৪৮ সালে লেখক কার্লো রিদলফি, তখন তিনি সেগুলিকে একটি `কল্পনার স্বপ্ন` হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। সংগীতের ভঙ্গিতে `মানুষের মনের কল্পনাগুলি যেন স্বপ্ন দর্শনে পরিপূর্ণ।
এমনি আরও কিছু শিল্পকর্ম জনপ্রিয়তার বিচারে জগৎবিখ্যাত বলে উল্লেখ করা যেতেই পারে। যার মধ্যে আছে শিল্পী সান্দ্রো বত্তিচেল্লি`র ১৪৩২ সালে আঁকা প্রিমাভেরা, তিনতোরেত্তো এর ১৫৫৫ সালে আঁকা স্প্রিং, জিউসেপ্পে আর্কিম্বলদো এর ১৫৭২ সালে আঁকা স্প্রিং, ক্লদ মোনে এর ১৮৭২ সালে আঁকা স্প্রিংটাইম, ওয়াল্টার ক্রেন এর ১৮৭৭ সালে আঁকা দ্য ফেট অফ পার্সেফোনে, ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ এর ১৮৯০ সালে আঁকা অ্যালমন্ড ব্লসম, পল গঁগ্যা এর ১৮৯১ সালে আঁকা দ্য লস অফ ভার্জিনিটি, লরেন্স আলমা-তাদেমা এর ১৮৯৪ সালে আঁকা স্প্রিং, জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউস, এর ১৯১৫ সালে আঁকা এ সং অফ স্প্রিংটাইম, রিনে ম্যাগ্রিট এর ১৯৬৫ সালে আঁকা স্প্রিং।
উনিশ শতকের তুখোড় জীবনবাদী চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ ও রঙময় বসন্তের ক্ষেত, বাগান, ফুল, বৃক্ষ ললিত গীতিকবিতার ভাষায় বাঙময় করে রেখেছেন। ঋতু উৎসবে ঋতুর গান কোরাসে গায়, গঘের আঁকা বসন্তের পুষ্পবৃক্ষ শোভিত ক্যানভাসে।
`গঘ বলতে কেবল একটা আস্ত রঙপাত্র
যে কী না আলোর খোঁজে নাগরিক মাত্র।`
১৮৮৮ সালে ভ্যান গঘ ফুলের বাগান নিয়ে চিত্রাঙ্কন শুরু করেছিলেন। এই পর্যায়ে একমাস ধরে মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত তাকে ব্যস্ত করে রেখেছিল। গাছগুলিতে যখন শেষ পর্যায়ের ফুল ফোটে, তখন তিনি তার চূড়ান্ত সংস্করণ তৈরি করেন। ততদিনে তিনি মোট চৌদ্দটি ক্যানভাস আঁকেন, যার মধ্যে প্রথমটি ২৪ শে মার্চ তারিখে, যা ছিল একটি ছোট সবুজ বাগানে এপ্রিকট গাছের মধ্যে তাজা ফুলের গুচ্ছ। চূড়ান্তভাবে এ বিষয়ে চিত্রকর্ম তৈরি করার জন্য ভ্যান গঘ একই বিষয়বস্তু বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন।
আসলে ফুলের মতো এতো ঠিকঠাকভাবে বসন্তকে আর কীই বা প্রকাশ করতে পারে? আমরা তুষারপাতের শীত থাকতে থাকতেই দেখা পাই ড্যাফোডিলের, তারপর টিউলিপ। প্রকৃতির রঙপেন্সিল এবং রঙ তুলির সৃজনশীল প্রকল্পগুলিকে যে নতুন শক্তি দিয়ে মেলে ধরছে আমরা তা প্রত্যক্ষ করি। ফলে বসন্ত ক্রমেই তার সমস্ত রঙ, ফুল, বৃষ্টি এবং এমনকি অকাল তুষারপাত সহ উপভোগ্য হয়ে ওঠে!
``ক`দিন এখানে আবহাওয়া বেশ খারাপ ছিল, কিন্তু এখন একেবারে প্রকৃত বসন্তদিন, ক্ষেতে তরুণ গম, দূরে বেগনি পাহাড় খুব সুন্দর। আর চারদিকে ফলন্ত আলমন্দের গাছ।``৩
বসন্ত প্রকৃতির বংশ বিস্তার প্রকল্প। গাছেদের শাখায় শাখায় কুঁড়িআসা শুরু হয়, ফুল ফুটতে থাকে, ঘাস সবুজ হতে শুরু হয়। যা সহজেই ভ্যান গঘকে দিয়ে তাঁর শিল্পকর্ম করাতে বাধ্য, এবং তাতে দেদীপ্যমান হয় তার বসন্ত জ্বরজ্বর কাজ, রঙ, আলো এবং ঋতুর সৌন্দর্য, সব। ভ্যান গঘ কেবল বসন্তকালে প্রকৃতির পুনর্জন্ম উপভোগ করার জন্যই উদ্বুদ্ধ করে তা নয়, তিনি যা দেখেছিলেন এবং এঁকেছিলেন তার সমস্ত কিছুতে জীবনের রঙস্পন্দনগুলি ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আগ্রহের সাথে বসন্তের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
`শিল্পীর এই পরম সুন্দরের অনুধ্যান এক তরফা নয়। পরম সুন্দরও শিল্পীকে খুঁজছেন কখনও বা চকিত আভাসে আপনাকে প্রকাশ করছেন শিল্পীর অনাবৃত দৃষ্টির প্রত্যক্ষতায়`।৪
আমরা যখন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ এর কথা ভাবি তৎক্ষণাৎ তাঁর আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি, স্টারি নাইট বা সূর্যমুখীর একটি অসাধারণ ফুলদানির ছবি ভেসে উঠে। তিনি নিজের মতো আলো এবং প্রকৃতির উজ্জ্বলতা ধরেছিলেন। তাঁর অভিব্যক্তিবাদী শিল্পরীতিতে রঞ্জিত তুলির দ্রুত পোঁচে সৃষ্ট, যা আলোর গতিবিধি সম্পর্কে তাঁর সর্বজ্ঞাত এবং সমস্ত কাজের মধ্যেই স্পষ্ট। তার সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রগুলিতে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে অন্যান্য চিত্রগুলির দিকে নজর দেয়া যায়। তাঁর বসন্তের চিত্রগুলিতে প্রকৃতির উন্মেষ এবং বসন্তের আলো মূর্তরূপে প্রকাশিত, যেখানে আলোর মৃদু ব্যঞ্জনা মূল আধেয়।
ভ্যান গঘ ১৮৮২ সাল থেকে ১৮৮০ সাল অব্দি বসন্ত সময়কে বিশেষভাবে তাঁর ক্যানভাসে মূর্ত করেছেন। সে সব ছবি মূলত বসন্ত ঋতুতেই একেছিলেন। ভ্যান গঘ তাঁর প্রথম বসন্ত বিষয়ক ছবিটি এঁকেছিলেন নুয়েনেন ছাড়ার আগেই ১৮৮৪ সালে, যার শিরোনাম `দ্য পার্সোনেজ গার্ডেন এট নুয়েনেন ইন স্প্রিং`। তার আগে ১৮৮২ সালে এঁকেছিলেন `অরচার্ড ইন ব্লসম উইথ টু ফিগারস`। আর ১৮৮৭ সালে এঁকেছিলেন `ফিসিং ইন স্প্রিং`। অতঃপর ১৮৮৮ সালের বসন্তে একের পর এঁকেছিলেন, অরচার্ড ইন ব্লসম, পার্ক এট এসনিয়েরেস, পিঙ্ক পিচ ট্রি ইন ব্লসম, হোয়াইট অরচার্ড, অরচার্ড স্প্রিংটাইম, ১৮৯০সালে আঁকেন `আলমন্ড ব্লসম` মৃত্যুর মাত্র মাস কয়েক আগে।
`যখন থেকে গাছে গাছে কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটতে শুরু করেছে তখন থেকে আমি আঁকার জ্বরে ভুগছি, এবং আমি উজ্বলতায় পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত অর্কিড বাগানের ছবি আঁকতে চাইছি।`৫
বসন্তে পুষ্পদল উদ্যান এবং ঘর আলোকিত হয়ে ওঠে। আলো চাইলেই কেবল আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্জন করতে পারি না, এমনকি সব শিল্পীরাও দেখতে পায় না। গঘ ঋতু বা মৌসুমের সতেজতা এবং মূল্যবান বসন্তের আলো দিয়ে রোদদিনের উষ্ণতার আশা এঁকেছেন।
গঘের আলোর অনুসন্ধান পদ্ধতিতে যেমন অভিনবত্ব তেমনি অভিনবত্ব তাঁর অভিজ্ঞতার চিত্রণে। স্বল্পায়ু জীবনে সৃষ্ট তাঁর চিত্র আখ্যান গভীর ও ইন্দ্রিয়ালু। যা শুধু ভাষা দিয়ে এর মূল্য নিরূপণ সম্ভব নয়, প্রয়োজন দৃষ্টি।
বসন্তকালের বাগান, ভ্যান গঘের অভিব্যক্তিবাদি শিল্পকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যেখানে আলো ও পরিপার্শ্বকে ধরেছেন পবনদোলার মৃদু মন্দ বায় সঙ্গী করে, সূর্যের নরম আলোর সর্বাধিক অনুরূপকে তুলে আনেন শিল্পজমিনে। প্রস্ফুটিত ফুল বিস্ফোরিত গাছ বাগানের পরিসরে। অবারিত পুষ্পরাজির পশ্চাৎপটে আকাশের সাদা এবং নীল রঙের সূক্ষ্ম দাগে মেলা মেশা। মেটে বর্ণের সাথে উষ্ণলাল এবং লীলাক বা বেগুনি, শোভাময় নীললোহিত বা লালচে বেগুনি ও হালকা হলুদাভাসের একাকী বিরল নরম রঙমিশ্রণ। যে পুষ্পদল শীতলাকাশের মিশ্রনে, পৃথিবী এবং আকাশ একই স্বচ্ছ পদার্থ দিয়ে তৈরী খাঁটি প্রাণবন্ত রঙের ক্ষুদ্র বর্ণকণার সমাহারে।
`হে বসন্ত, তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো, আমি তোমাকে আমার পরান ভরিয়া আঁকি।`৬
পদ্ধতিগতভাবে অভিব্যক্তিবাদী বর্ণাভাস বিভাজন এখানে কোন কঠোর সূত্রাধীণ নয়। গাছগুলি দীর্ঘ রেখায় আঁকা, সুন্দর বেড়া সমান্তরাল পোঁচে আঁকা। দূরত্বে গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কালচে নীল গাছগুলি ফুলের মতো সূক্ষ্ম এবং ওজনহীন, তবু খুব সুনির্দিষ্ট; গাছের ছায়ার হালকা আবছা উচ্ছাসী আভাস। মাটির প্রতিটি অক্ষাংশে প্রতিটি রং ও স্পর্শের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে সকলেই অভিন্নতার কব্জা ছাড়িয়ে সমধর্মী উজ্জ্বলতায় একীভূত।
সকল ফুলের কাছে মোহময় মন নিয়ে যাবার`পর ভিনসেন্ট আঁকেন বসন্তের প্রচ্ছদ।
নিজস্ব হলুদ বসন্ত যাপন আছে গঘের। তাঁর বসন্ত আঁকা দিনযাপনের রৌদ্রছায়ায়। দু-এক কুচি নৈঃশব্দ্যের চুপকথা গঘের চিত্রলেখার অহং হয়ে ওঠে। তিনি আঁকতে জানেন, যে কারণে রোদ আঁকেন। যেসবে এক ঝাঁক উজ্জ্বল ফুল, নন্দন ফুসফুসে আলো ভরে নিচ্ছে। খোলা হাওয়ায় রোদপড়া রঙের ঝাপটা লাগে। অপরূপ বসন্তের অপরূপ শিল্পরূপ।
গঘের তুলির ডগায় উদ্গ্রীব বসন্ত। দুর্দান্ত রোমাঞ্চকর এই বসন্তের আগমনী চিত্র। ভ্যান গঘ এর পরাণভরা বসন্ত চিত্রণ, অসম্ভব উদগ্র আর জান্তব। কী উদ্দাম আর সুন্দর। এতো উজ্জ্বলতা, এতো রং, নিজের চোখের রংধনু দিয়ে রাঙিয়ে তোলেন বসন্তের মুখশ্রী। আর আমরা সেই আঁকা বসন্তের আলোকউচ্ছল ভালোবাসায় উৎকর্ণ হই।
মায়াপাড়ার অদম্য চিত্ররচয়িতা গঘের রঙজীবন যেন আসল খেটেছে সুদে। স্কেল মাপা নয়, তাঁর বসন্ত সৌন্দর্য্যের সুদাসল গেছোফুল পাপড়িপ্রথায়। এভাবেই গঘ আমাদের কাটাকুটি হিসাবের বহিতে যোগফলের অংক সংখ্যার শেষে সরল ঐকিক নিয়মের বসন্তধারাপাত পড়ান।
`বসন্তে ঠিক আসব ফিরে
এক মাঘে তো শীত যাবে না`! ৭
সূত্র নির্দেশ
১. সমর সেন
২. ভিনসেন্ট ভ্যানগঘ
৩. ভিনসেন্ট ভ্যানগঘ, ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯০
৪. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৫. ভিনসেন্ট ভ্যানগঘ, ২ এপ্রিল ১৮৮৮
৬. নির্মলেন্দু গুণ
৭. শ্রীজাত