মঁশিয়ে এরকুল পোয়ারো
১৯২০ সালে এরকুল পোয়ারো যখন ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত গ্রন্থে আবির্ভুত হন, কেউ ভাবেননি তিনি বিশ্বখ্যাতি পাবেন। তিনিও নিজেও জানতেন না তার মৃত্যুর পর নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে নিয়ে 'অবিচুয়ারি' লিখবে।
মৃত্যুর সময় তার বযস কত ছিল? তাও গবেষণা সাপেক্ষ- ৬৫ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে।
'কার্টেন' উপন্যাসে বলা হয়েছে ক্যাপ্টেন হ্যাস্টিংসের সাথে সাক্ষাতের (জুন ১৯৯৬) তেত্রিশ বছর পর ১৯৪৯-এর অক্টোবরে তার মৃত্যু হয়। আগাথা ক্রিস্টির ৩৩টি উপন্যাস ঘেঁটে- যার প্রত্যেকটিতে এরকুল পোয়ারো রয়েছেন- একটি বিষয়ে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে যে, ১৮৫৩ থেকে ১৮৮৩ এই সময়ের মধ্যে তিনি জন্ম লাভ করেছেন, ৪৩ থেকে ৬৩ বছর বয়সের কোনো এক সময় জার্মান আক্রান্ত স্বদেশ বেলজিয়াম ছেড়ে ইংল্যান্ডে শরনার্থী হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন, অনেকের মতে ৭৬ থেকে ৯৬ বছর বয়সের মধ্যে তার মৃত্যু ঘটেছে।
রহস্য উপন্যাসের চরিত্রের মৃত্যুতেও অবিচুয়ারি লেখা হতে পারে এই গোয়েন্দা তা দেখিয়ে দিলেন।
আগাথা ক্রিস্টির ৩৩টি উপন্যাস ১টি নাটক এবং ৫০টিরও বেশি গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র তিনি। এরকুল পোয়ারো চরিত্রে যারা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন অস্টিন ট্রেভর, জন মোফাত, আলবার্ট ফিনে, স্যার পিটার উস্তিনভ, স্যার আয়ান হোম, টনি র্যানডেল আলফ্রেড মলিনা, অরসন ওয়েলস, কেনেথ ব্রানাগ, ও ডেভিড সুচে।
আত্মপ্রকাশের শতবর্ষ গোয়েন্দা শিরোমনি মশিয়ে এরকুলপোয়ারোকে এবং তার স্রষ্টা আগাথা ক্রিস্টিকে স্মরণ করতেই এই নিবন্ধ।
যে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না
মৃত্যু অনিবার্য কে না জানে। তাই বলে কী সব মৃত্যুই অনিবার্য? ব্যতিক্রম থাকতেই হয়। কিছু মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। মেনে নিতে পারেনি ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অগনিত ভক্ত। তাকে সৃষ্টি করার কৃতিত্ব যেমন আগাথা ক্রিস্টির, তার মৃত্যুর দায়ও তারই।
তিনি এরকুল পোয়ারো
বহু বছর আগেকার নিউ ইয়র্ক টাইমস আর্কাইভ থেকে তার 'অবিচুয়ারি' বের করে এনে এখানে একটি সাদামাটা ভাষান্তর উপস্থাপন করা হলো। সংবাদপত্র অবশ্য যুক্তি দিয়ে তার মৃত্যুর ব্যাখ্যা দিয়েছে, কিন্তু যুক্তি না-মানা কোটি মানুষ তা মানতে পারেনি, কেন এটা তাদের বোধগম্য হয়নি:
খ্যাতিমান বেলজিয়ান গোয়েন্দা এরকুলপোয়ারো মারা গেছেন
আন্তর্জাতিক খ্যাতির অধিকারী বেলজিয়ান গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি কত বছর বয়সে মারা গেলেন তা অজানাই রয়ে গেছে।
১৯০৪ সালে বেলজিয়ামের পুলিশ বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি প্রাইভেট গোয়েন্দা হিসেবে ফের সুনাম অর্জন করেন। ডেইম আগাথা ক্রিস্টি তার জীবনকাহিনী নিয়ে অত্যন্ত সফল কিছু সংখ্যক উপন্যাস রচনা করেছেন।
জীবনের শেষ ভাগে এসে তিনি বাতরোগে আক্রান্ত হন এবং তার হৃদযন্ত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। তাকে সবসময়ই হুইল চেয়ারবন্দী থাকতে হতো। তাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে এসেক্সের স্টাইলেস কোর্ট নার্সিং হোমে যখন আনা হতো, পাবলিক লাউঞ্জে তাকে দেখার মতোই লাগতো। বয়স তার অহংকারে ঘা দিচ্ছিল বলে তিনি তা গোপন করতে পরচুলা পরতেন আর ভুয়া গোফ লাগাতেন। তার সক্রিয় দিনগুলোতে কিন্তু তিনি থাকতেন নিখুত পোশাকের সদা ধোপদুরস্ত একজন হিসেবে। মিস্টার পোয়ারো, পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা এই মানুষটি প্রথম মহাযুদ্ধের সময় শরনার্থী হিসেবে বেলজিয়াম থেকে ইংল্যান্ড এসেছিলেন। স্টাইলেস থেকে অনতিদূরে একটি ছোট্ট শহরে বেশ বড় আকারের একটি গ্রামীণ ধরনের বাড়িতে তিনি তার প্রথম গোয়েন্দা মামলাটি গ্রহণ করেছিলেন। তার মৃত্যুর খবর সকলকে জানিয়েছেন আগাথা ক্রিস্টি নিজেই, এভাবে:পোয়ারো আসলে অনেকটাই মৃত্যুর কাছাকাছি এসে গেছে, গত মে মাস থেকেই শোনা যাচ্ছিল, কাজেই তার মৃত্যু আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত না। আগাথার প্রকাশক ডড, মিডও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন: যে উপন্যাসে তার শেষ দিনগুলোর বর্ণনা রয়েছে, ১৫ অক্টোবর সে উপন্যাসটি প্রকাশনার মধ্য দিয়ে তার জীবনের যবনিকা টানা হবে।
শেষ উপন্যাসে এরকুল পোয়ারো প্রকৃত আকর্ষণীয় সেই কর্মচঞ্চল গোয়েন্দার ছায়া হয়ে এসেছিলেন। এতে তিনি ভাঙ্গা ইংরেজিতে কথা বলেন, ভীষণ যার অহম- ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য উপন্যাসে অসংখ্য রহস্যের সমাধান করেছেন, অনেক ছোট গল্পেও তিনি রহস্য উদঘাটনে আবির্ভুত হয়েছেন। কিন্তু শেষ উপন্যাসে তিনি যেন অবগুণ্ঠিত। এবং মজার ব্যাপার হল যবনিকাপাতের সেই উপন্যাসটির নামও বাস্তবিকই ছিল 'কার্টেন' তবে আগাথা ক্রিস্টি জানাচ্ছেন এই 'কার্টেন'-এ এসেও তিনি উদযাপন করার মতো একটি ঘটনা ঘটিয়েছেন--ভয়ঙ্কর দুর্যোগ থেকে একজন নিষ্ক্রিয় দর্শককে বাঁচিয়েছেন। 'নার্থিং ইন হিজ লাইফ বিকেইম হিম লাইক দ্য লিডিং ইট'- এরকুল পোয়ারো প্রায়ই এরকম ভুল উদ্ধৃতি দিতেন।
ডড, মিড প্রকাশনা অবশ্য এই বিখ্যাত গোয়েন্দার বীবরত্বপূর্ণ কাজের আর একটি উপন্যাস পাবেন আশা করেননি। তারা বলছেন: এর আগের বছর কোনো পাণ্ডুলিপি আসেনি, ওই বছরও আগাথা ক্রিস্টির কোনো পাণ্ডুলিপি তারা আশা করছেন না। তবে বাজারে গুজব আছে তিনি পোয়ারোকে নিয়ে লেখা একটি এবং মিস মার্পেলকে নিয়ে লেখা একটি পাণ্ডুলিপি কোনো একটি ভল্টে তালা মেরে রেখেছেন। শোনা যাচ্ছে আগাথা ক্রিস্টি তার মৃত্যুর আগে বই দুটো প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন।
তবে ১৫ সেপ্টেম্বর আগাথা নিজে ৮৫ বছর বয়সে পদার্পণকরলেওতিনি কলম গুটিয়ে নেননি, লেখা চালিয়ে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন জোরালো ভাবেই। তার দীর্ঘ লেখালেখির জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই কেটেছে এই গোয়েন্দা উপন্যাস লিখে। তিনি ৮৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য উপন্যাস লিখেছেন এবং অনেকগুলো গলপ সংকলনও, হার্ডকভার আর পেপারব্যাক মিলে তার বইয়ের বিক্রি ৩৫০ মিলিয়ন কপির উপরে। এই হিসেবের মধ্যে 'আয়রন কার্টেন'-এর বাইরে যে সব চোরাই সংস্করণ হয়েছে, তাযোগ হয়নি। এর বাইরেও আগাথা ক্রিস্টি ম্যারি ওয়েস্টম্যাকট ছদ্মনামে আধাডজন 'রোমাঞ্চ' উপন্যাস লিখেছেন। সম্ভবত তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই কবেকার লেখা, প্রথম বই 'দ্য মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার অব স্টাইলস' এখনও ছাপা হচ্ছে। 'দ্য মাউস ট্র্যাপ' সহ অন্তত ১৭টি গল্প থিয়েটারে নাটকহিসেবে মঞ্চস্থ হয়েছে। আর ১৯৫২ সালে 'দ্য মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার অ্যাট স্টাইলস'মঞ্চে এসে আগের যত ধরনের পুরোনো রেকর্ড ছিল সব ভেঙ্গে এখনও চলছে পুরো, এবং হাউসফুল।
এরকুল পোয়ারোর চিঠি
এই দুঁদে গোয়েন্দা ১৯৩৬ সালে আগাথার প্রকাশককে চিঠিতে নিজের সম্পর্কে জানিয়েছেন: আমি ১৯০৪ সালেই প্রথম এবারক্রম্বি জালিয়াতি মামলায় ব্রাসেলস ডিটেকটিভ বাহিনীর হয়ে কাজ করি। আমার জন্মভূমি বেলজিয়ামের গোয়েন্দা হয়ে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আপনারা জানেন যুদ্ধ শেষ হবার পর থেকে আমি কয়েকটি রুম নিয়ে আমার পুরোনো বন্ধু হ্যাস্টিংস-এর সাথে বাস করছি।
আমি লন্ডনে একটি প্রাইভেট ডিটেকটিভ অফিস খুলেছি, গত জুন মাসে লন্ডনের নতুন সার্ভিস ফ্ল্যাট হোয়াইট হ্যাভেন ম্যানশনে উঠেছি, এই ভবনটি আমার পছন্দ করার কারণ এটি যথার্থ জ্যামিতিক অনুপাত মেনে নির্মাণ করা হয়েছে।
কিছু কিছু বিষয়ে আমার বাতিক রয়েছে। কোনো সামান্য উলট-পালট ও বিশৃঙ্খল হলেও তা আমার মেজাজ খারাপ করে দেয়। আমার বুকশেলফে সবচেয়ে লম্বা বইটা রাখি এক প্রান্তে তারপর দ্বিতীয় দীর্ঘতম, তারপর তৃতীয় এভাবেই।আমার ওষুধের বোতলগুলোও নিখুতভাবে মাপ অনুযায়ী সাজানো। আপনার নেকটাই যদি ঠিক মতো বাঁধা না হয়ে থাকে, এটা ঠিক করার জন্য নিজেকে প্রতিহত করা আমার পক্ষে একটি দুরূহ ব্যাপার।
শৃঙ্খলা এবং পদ্ধতিই হচ্ছে আমার ঈশ্বর। সকালের নাস্তায় আমি কেবল টোস্ট খাই, কিন্তু তা ছোট ছোট নিখুত চৌকোনে কাটা হতে হবে, ডিম অবশ্যই দুটো হতে হবে এবং অবশ্যই একই আকৃতির।
আমি পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার একজন মানুষ। মাথাটা ডিম্বাকৃতির কিঞ্চিৎ বাম দিকে ঝুঁকিয়ে রাখি। বলা হয়ে থাকে আমি যখন উদ্দীপিত হই আমার চোখ সবুজাভ হয়ে ওঠে। আমার বুট মসৃণ প্যাটেন্ট চামড়ার, উজ্জল ও স্মার্ট। আমার ঘড়িটা সোনাতে এমবোস করা। আমার ঘড়িটা আকারে বড়, একেবারে সঠিক সময় দেয়। আমার গোফ লন্ডনে সবচেয়ে সুন্দর...
আমি জানি দৃশ্যমান সাক্ষ্যের প্রতি আমার কিছু অবজ্ঞা রয়েছে। আমি বসে ভাবতে ভালোবাসি--আমার পুরোনা বন্ধু হ্যাস্টিংস বলে 'ছোট ছোট ধুসর কোষগুলো কাজে লাগিয়ে' আমি রহস্য উদঘাটন করি। আমি আসলে যে কাজটা করি তা হচ্ছে-- একটার পর একটা ঘটনা সাজাই, নিখুতভাবে এবং ঘটনার ক্রম অনুসারে।
দ্য মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস ও এরকুল পোয়ারোর অভ্যুদয়
তখন প্রথম মহাযুদ্ধ চলছে, আগাথার স্বামী আর্চিবল্ড ক্রিস্টি রণাঙ্গনে, তিনি নিজেও স্বেচ্ছাসেবী নার্স, আহত সৈনিকদের সেবা করছেন। উপন্যাসটি রচিত হলো ২০১৬ সালেই। নাম 'দ্য মিস্টেরিয়াস অ্যাফেয়ার্স অ্যাট স্টাইলস' পাণ্ডুলিপি পাঠালেন প্রকাশকের কাছে। প্রত্যাখ্যান করল হডার ও স্টুটন, তারপর প্রত্যাখ্যাত হলেন আরেক প্রকাশকের কাছ থেকে। কিন্তু বডলে হেড-এর একজন প্রকাশক জন লেইন বেশ ক'মাস ফেলে রাখার পর শেষ অধ্যায়ে সংশোধন করে দিতে হবে এমন শর্তে ছাপতে রাজি হলেন।
আগাথা তখন বই প্রকাশের জন্য মরিয়া হয়ে আছেন। তিনি যে কোনো শর্তে রাজি।
মাত্র ২৫ পাউন্ড রয়ালটি নিয়ে দিয়ে দিলেন জন লেইনকে। জনই পরবর্তী কালের পেঙ্গুইনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯২০ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং ১৯২৯-এ যুক্তরাজ্যে।
এই রহস্য গ্রন্থেই এরকুল পোয়ারোর আত্মপ্রকাশ
বইটির দাম যুক্তরাষ্ট্রে এক ডলার আর ব্রিটেনে ৭শিলিং ৬ পেন্স। এই বই থেকে জন লেইন কতো কামিয়েছেন জানা যায়নি। তবে আগাথা ক্রিস্টি বলেছেন, চুক্তিটা ছিল দুর্বিপাকে ফেলে শোষণ করার মতো।
১৮ জুলাই ব্রুকামজেলায় বয়স্ক নারী এমিলি ইঙ্গলথর্পের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হলো, এমেক্সে তারই ম্যানর হাউস স্টাইল'স কোর্টে। এই বিশাল সম্পত্তি এবং আরো টাকাকড়ি তিনি তার সাবেক স্বামী মিস্টার ক্যাভেন্ডিশের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছেন। এমিলির মৃত্যুর কারণ বিষ প্রয়োগ, তাকে স্ট্রিকমাইন বিষ খাওয়ানো হয়েছে। এতে শরীরে ভয়ঙ্কর খিঁচুনি হয়ে মৃত্যু ঘটে। এই বাড়িতে অসুস্থতাকালীন ছুটি কাটাতে এসেছিলেন পশ্চিম রণাঙ্গণের সৈনিক আর্থার হ্যাস্টিংস। এই মৃত্যুঘটনার একটি সুরাহা করতে তিনি ছুটলেন স্টাইল'সের পাশ্ববর্তী গ্রাম সেইন্টমেরিতে, তার বন্ধু একদা বেলজিয়ান গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি করা, কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেলজিয়াম জার্মান আক্রমণের শিকার হয়ে শরনার্থী হিসেবে ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া এরকুল পোয়ারোর কাছে।এবং ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান যে নিহত এই নারী যথেষ্ট বিত্তশালী।
মিসেস এমিলি ইঙ্গলথর্পের পরিবারে যারা আছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন তার চেয়ে অনেক কমবয়সী দ্বিতীয় স্বামী আলফ্রেড ইঙ্গলথর্প; তার প্রথম স্বামীর আগের স্ত্রীর গর্ভজাত দুই ছেলে: জন ক্যাভেন্ডিশ ও লরেন্স ক্যাভেন্ডিশ; জনের স্ত্রী ম্যারি ক্যাভেন্ডিশ, পরিবারের এক মৃত বন্ধুর কন্যা সিনথিয়া মারডক এবং এমিলির পরিচারক ও সঙ্গী এভলিন হাওয়ার্ড। কিন্তু তার সাথে আলফ্রেডের সম্পর্ক খারাপ, তাকে সে সম্পদলোভী চক্রান্তকারী মনে করে। খুনের ঘটনার তদন্তকরতে চলে এসেছেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জ্যাপ। এবং তিনি পোয়ারো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
মৃত ক্যাভেন্ডিশ সাহেবের উইল অনুযায়ী এমিলির পর ম্যানর হাউসের মালিকানা বর্তাবে বড় ছেলে জনের ওপর। আর টাকাকড়ি এমিলি যেভাবে ইচ্ছে করেন বন্টন করে দিতে পারেন। এমিলি বছরে অন্তত একবার তার উইল পাল্টে থাকেন, সর্বশেষ উইলে তার সম্পদের উত্তরাধিকারী আলফ্রেড। ঘটনার দিন তিনি আলফ্রেড বা জন কারো সাথে ঝগড়া করেছেন এবং দ্রুত উইলের উত্তরাধিকারী কাকে কোথায় রেখেছেন কেউ জানে না।
আলফ্রেড ওই সন্ধ্যায় অন্য একটি গ্রামে গিয়ে রাত কাটান।আর এমিলি সন্ধ্যার একটু পরই রাতের খাবার খেয়ে তার উইলের বাক্সটি সাথে নিয়ে নিজের রুমে চলে যান। সকালে তার মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়।
ইন্সপেক্টর জ্যাপ যখন তার প্রধান সন্দেহভাজন আলফ্রেডকে গ্রেফতার করতে যান-- তিনি ক্যাভেন্ডিশনেরও সন্দেহভাজন--কিন্তু এরকুল পোয়ারো দেখলেন গ্রেফতার হতে আলফ্রেডের কি থেকে কোনো বাধা নেই। পোয়ারো তখন আলফ্রেডকেগ্রেফতারে বাধা দিলেন। বললেন, যদিও বিষ তার নামেই কেনা হয়েছে, কিন্তু সইটি তার নয়। ইন্সপেক্টরের দ্বিতীয় সন্দেহভাজনকে যখন গ্রেফতার করতে চান তার কাছে হত্যার অনেক আলামত পাবার পরও, আবারও পোয়ারো তাকে বাধা দিলেন। শেষ পর্যন্ত এরকুলল পোয়ারো তার ক্ষুরধা্র বুদ্ধি দিয়ে দেখিয়ে দিলেন প্রকৃত খুনি এভলিন এবং আলফ্রেড। আপাত দৃষ্টিতে তারা পরস্পরের শত্রু মনে হলেও ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এবং এমিলির ঔষধে অতিরিক্ত ব্রোমাইড মিশিয়ে এভলিনই তাকে খাইয়েছে এবং তারা এমন সব আলামত তৈরি করেছে, যাতে তদন্ত কর্মকর্তা সঠিক ঘটনা আঁচ করতে না পারে। তদন্ত কাজকে ধোঁকা দেওয়াজন্যই আলফ্রেডকেই যাতে সন্দেহ করা হয় সেরকম আলামত স্থাপন করা হয়। কারণ আলফ্রেড আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হবে যে, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ভুয়া এবং তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। একবার ছাড়া পেয়ে পেলে তাকে আর ডাবল জিওপার্ডি আইনে, এক অপরাধে দুবার বিচার করে দোষী সাব্যস্থ করার সুযোগ থাকবে না--এডলিন ও আলফ্রেড পরিকল্পিতভাবে জনকে ফাঁসাতে চেয়েছে-- প্রেসক্রিপশনে জনের নামে দেওয়া সইটি আসলে এভলিন দিয়েছে।
প্রথম উপন্যাস বলেই হয়ত রহস্যটা কম
আগ্রহী পাঠক এর পরেই চলে যেতে পারেন 'মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস' উপন্যাসে, এটি আগাথা ক্রিস্টিরও প্রিয় উপন্যাস।
পাদটীকা:
নিজের সৃষ্টি করা এরকুউল পোয়ারো শেষদিকে আগাথা ক্রিস্টির কাছে একটি বিরক্তি ও আতঙ্কের চরিত্রে পরিণত হয়েছিল। তাকে কেন্দ্র করে রহস্য ও অপরাধ উপন্যাস লিখতে লিখতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তার সহজাত কল্পনা শক্তি দিয়ে লিখে যেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রকাশকের দাবি ছিল এরকুল পোয়ারো না থাকলে মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হবে না। ফলে ইচ্ছে করেনি তবুও লিখে গেছেন। রাজ্যের সব খারাপ ও ভারী বিশেষণ জুড়ে দিয়ে বলেছেন, নিজের মৃত্যুর আগে একে হত্যা না করতে পারলে এই চরিত্রহয়ত তাকেইএকদিন হত্যা করবে।