‘আমার বাইরের চেহারার সঙ্গে নৈকট্য অনুভব করি না’
জয়েস ক্যারল ওটসের সাক্ষাৎকার
[বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন নারী লেখক জয়েস ক্যারল ওটসের জন্ম ১৯৩৮ সালে নিউ ইয়র্কের লকপোর্টে। ছোটবেলায় দাদির কাছ থেকে উপহার পাওয়া টাইপরাইটারে লেখালেখির শুরু হলেও তিনি সেই বয়সের কথা এখন আর মনে করতে পারেন না যে ঠিক কখন থেকে লেখা অর্থাৎ গল্প বলা শুরু। তিনি একের পর এক উপন্যাস লিখেছেন, গল্প লিখেছেন। তার রচনার পরিমাণ বিপুল- ৫৬টি উপন্যাস, ৮ টি গল্প সংকল্পনসহ বেশ কিছু নাটক এবং প্রবন্ধ।
রবার্ট ফিলিপসের নেওয়া জয়স ক্যারল ওটসের দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় প্যারিস রিভিউয়ের ১৯৭৮ সালের শরৎ-শীত সংখ্যায়; এখানে সেই সাক্ষাৎকারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনূদিত হয়েছে।]
প্রশ্ন:
কাজের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা থাকে?
ওটস:
লেখালেখি নিয়ে আমার নির্দিষ্ট কোনও সময়সূচি নেই; তবে, দিনের শুরুতে, কিছু খাওয়ার আগেই লেখা দিয়েই যাত্রা শুরু করি, এটা প্রায়ই হয়, আমি লেখা দিয়েই দিনের শুরুটা করতে পছন্দ করি বহুদিন ধরে। কখনও এমন হয়, লেখা এমন তরতরিয়ে চলতে থাকে যে আমার আর কিছুই তখন মনে পড়ে না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোন দিক দিয়ে পার হয়ে যায় টের পাই না, এরকম টানা লিখবার চমৎকার দিনগুলিতে দুপুরের একদম শেষ দিকে কিছু একটা খাওয়া হয়। যেদিন ক্লাস নেওয়ার থাকে, যে-দিনগুলিতে আমাকে ক্লাসে পড়াতে হয়, সেসব দিনে আমি সাধারণত প্রথম ক্লাসের আগে ঘণ্টাখানিক কিংবা কখনও পঁয়তাল্লিশ মিনিটের জন্য হলেও লিখতে বসি, কিন্তু আমার লেখার জন্য ধরাবাঁধা সময়সূচি নেই; এবং এই মুহূর্তে, আপনাকে সত্যি কথাটা বলি, সবকিছু ছাপিয়ে বরং এখন কিছুটা বিষাদ এবং হতাশায় ভুগছি, অস্বস্তি বোধ করছি, সেটা এমন যেন আমি এখন আর লেখকই নই কিংবা আর লেখায় ফিরতে পারব না, লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছি এমন একটা কষ্টদায়ক অনুভূতি, কিংবা লেখালেখির জগৎ থেকেই হারিয়ে গেছি এমনটা মনে হচ্ছে, তার কারণ কি জানেন? কয়েক সপ্তাহ আগে আমি একটি উপন্যাস শেষ করেছি কিন্তু অন্যটি এখনও শুরু করতে পারিনি, কেবল মাত্র নোটবুকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু টুকে রাখা লাইন ছাড়া।
প্রশ্ন:
লেখালেখির জন্য আপনি কি মানসিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজনীয় মনে করেন? নিজের যে কোনও মানসিক অবস্থায়ও লেখায় বসতে পারেন? তখন যা কিছু লিখছেন, তাতে কি মনের সে অবস্থার একটা ছাপ পড়ে যায়? আপনি কীভাবে এই অবস্থাকে বর্ণনা করবেন যেখানে আপনি দিনের শুরু থেকে একটানা বিকেল পর্যন্ত লিখতে পারেন?
ওটস :
লেখককে মন মেজাজ, ভাব কিংবা মুড, যাই বলুন না কেন, এ-সম্পর্কে অবশ্যই নির্মম এবং কঠোর হতে হয়। দেখুন, এক অর্থে কিন্তু লেখাই মনের মধ্যে একটা বিশেষ ভাবের বা মেজাজের জন্ম দেয়। শিল্প যদি, এমন সত্যিই এমন হয় যে--আমি যা আজীবন বিশ্বাস করে এসেছি--শিল্প যদি এমন হয় যে এটা সত্যিকার অর্থেই এমন এক ব্যাপার যা মানুষের কল্পনার অধিক, কিছুটা অলৌকিক, মানসিক ক্রিয়াপ্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ব্যাপার বা ঘটনা কিংবা কাজ হয়ে থাকে— সাহিত্য শিল্পের এমন একটি মাধ্যম, যার ভেতরে আমরা সমস্ত রকমের সীমিত ধারণা বা সীমাবদ্ধ চিন্তা থেকে বের হয়ে অসীমে যাত্রা করি, যা হতে পারতো কিন্তু হয়নি, তা নিয়ে কারবার করি, সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাই, এবং যা কি না সমস্ত রকমের সীমাবদ্ধতা এবং সংকীর্ণতা থেকে আমাদের মনকে মুক্ত করে দেয়, দেখুন, তখন কিন্তু আর লেখকের মনে মেজাজে বা আবেগে কী ঘটে চলেছে বা চলছে তাতে বেশি কিছু যায় আসে না বা সেটা তখন আর খুব বড় বিষয় হয়ে ওঠে না। এ বিষয়টিকে আমি সত্য বলে মনে করেছি : নিজেকে যখনই আমি পুরোপুরি নিঃশেষ মনে করেছি, শ্রান্ত ক্লান্ত মনে করেছি, যখনই আমি আমার আত্মাকে খেলার তাসের মতো পাতলা এক টুকরো কাগজ বলে অনুভব করেছি, করি, যখন মনে হয়েছে পাঁচ মিনিটের জন্যও সহ্য করার মতো কিছুই নেই, ঠিক তখনই আমি নিজেকে লেখাতে বাধ্য করি; জোর করে লিখতে বসি... এবং তারপরই আমার ধ্যান জ্ঞান সব লেখায় নিবদ্ধ হয়, লেখা এবং একমাত্র লেখাই চারপাশটাকে বদলে ফেলে।
জয়েস তাঁর ইউলিসি লিখবার নিহিত কাঠামোটি সম্পর্কে বলেছিলেন, যে-ইউলিসিসকে তিনি হোমারের মহাকাব্য ওডিসির সমান্তরালে রচনা করেন। ইউলিসিসে বর্ণিত হয়েছে মহান এক গ্রিক বীরের কথা যিনি ট্রয়ের যুদ্ধ জয় শেষে মাতৃভূমি ইথাকায় ফিরে যাচ্ছেন, জয়েসের উপন্যাস পৌরাণিক আখ্যান থেকে মানবিক আখ্যানে পরিণত হয়েছে। তিনি তাঁর সৈন্যদের পার হওয়ার জন্য যে সেতুটি তৈরি করছেন তাঁর নির্মাণ যথার্থ হলো কি না তা নিয়ে চিন্তা করেন নি। সৈন্যদের সেতু পার হয়ে যাওয়ার পর সেটা ধ্বসে পড়লে কী এসে যায়? আপনি যা লিখছেন, সে লেখায় যদি আপনার মনের অবস্থার ছাপ পড়ে যায়? হ্যাঁ, জয়েসের মতো অন্য একজন লেখকও হয়তো এটা মনে করতে পারেন যে তাঁর লেখায় নিজেকে নিজের মন মেজাজের ছাপ যদি পড়েও, তাতে কী এমন এসে যায়! একবার যদি সৈন্যরা তীব্র জলস্রোত পার হয়ে যেতে সমর্থ হয়, তাতেই মুক্তি, তাতেই লেখার গভীর আনন্দ।
প্রশ্ন:
যখনই একটি উপন্যাস লেখা শেষ হয়, তখন কী ঘটে? পরের উপন্যাসটি, যা তখনও লিখিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, সেটা লিখতে শুরু করেন? উপন্যাসটি লিখবার সমস্ত কিছু কি তৈরি করাই থাকে? কিংবা নিজে থেকেই যা কিছু একটা লেখা নিজের ইচ্ছে মতো শুরু করতে পারেন?
ওটস :
যখন একটি উপন্যাস লেখা শেষ হয়, তখন তাকে এক পাশে ফেলে রাখি, সেদিকে আর তাকাই না; বরং তখন গল্প লিখতে শুরু করি। সদ্য সমাপ্ত উপন্যাস পাশেই পড়ে থাকে! কিংবা অন্য কোনও দীর্ঘ লেখার কাজে হাত দিই, সে হতে পারে উপন্যাস- আমার কাজ এভাবেই এগিয়ে চলে। এভাবে তখন একটি উপন্যাস শেষ করি, তখন আবার আমি আগের উপন্যাসটিতে ফিরে আসি এবং উপন্যাসের বহু অংশ পুনর্লিখিত হতে থাকে আর ঠিক সেই সময়টায় এই মাত্র শেষ করা দ্বিতীয় উপন্যাসটি হয়তো পড়ে আছে ডেস্কের ড্রয়ারে। আবার কখনও আমি দুটি উপন্যাস নিয়েই এক সঙ্গে কাজ করি, যদিও তখন একটি উপন্যাস অন্যটিতে কিছুটা হলেও সম্পাদনায় বাধা তৈরি করে, একই সঙ্গে দুটো উপন্যাসের কাটাছেঁড়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। আমি আবিষ্কার করেছি যে লেখা, সংশোধন, আবার লেখা, আবার সংশোধন এসবের মধ্যে যে রিদম বা ছন্দ থাকে, তা যেন আমার চরিত্রের সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে গেছে। যেন আমি এসবে আনন্দ পাই, যেন এসবেই আমার লেখকজীবনের পূর্ণতা! আমার মধ্যে এটা ভাববার প্রবণতা বেশি যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনর্পাঠ বা পুনর্বিন্যাসের শিল্পে আরও বেশি মাত্রায় মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ব, এবং এমন একটি সময় হয়তো আসতে পারে যখন আমি পুনর্লিখনের ভয়ে উপন্যাস লেখাই ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাববো। দেখুন, আমার পরবর্তী যে উপন্যাসটি প্রকাশিত হবে, 'আনহোলি লাভস', সেটা লিখিত হয়েছে আমার ছোটবেলার সময়টিকে নিয়ে; পুরো লেখাতিকেই আমি বার বার পড়েছি, পড়ে পড়ে প্রায় পুরোটাই আবার লিখেছি, এবং দেখুন, গত বসন্তে এবং গ্রীষ্মেও আবার কাটাছেঁড়া করেছি, আবার নতুন করে লিখেছি। নাছোড়বান্দার মতো দ্রুত এবং একটানা লেখার জন্য আমার খ্যাতি সত্ত্বেও, আমি কিন্তু যে কোনও লেখাকে বারে বারে পড়ি, পড়ে পড়ে সংশোধনের পর সংশোধন করতেই থাকি, করতেই থাকি এবং আমি এমন এক লেখক যে নিজের লেখাকে বারবার কাটাছেঁড়া কিংবা সংশোধনেরর পক্ষে, যা নিজের লেখালেখির মধ্যকার একটি অতি প্রয়োজনীয় শিল্প, যাকে আমি আমার প্রবণতা হিসেবেই গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছি।
প্রশ্ন:
লেখালেখি ও শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রতিদিনের ভ্রমণ, হাঁটাহাঁটি, সঙ্গীত- এসবের মধ্যে কোন বিশেষ কাজটি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ? আমরা জানি আপনি একজন অসামান্য পিয়ানোবাদক।
ওটস :
হ্যাঁ, আমরা প্রচুর ভ্রমণ করি, সাধারণত গাড়িতে করে। বহুবার আমরা মহাদেশ পাড়ি দিয়েছি, ধীরে ধীরে, দক্ষিণে ঘুরে বেড়িয়েছি, দক্ষিণ এবং নিউ ইংল্যান্ডে; আর অবশ্যই নিউ ইয়র্কের আত্মার গভীর ছুঁতে চেয়েছি যেন তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসায় অনুভব করা যায় আর ছিল এমন কিছু খুঁজে বেড়ানো যাকে বলা যায় প্রেমময় অনুসন্ধান, আর পিয়ানোবাদক হিসেবে আমি নিজেকে এক 'অত্যুতসাহি আনাড়ি শিল্পী' মনে করি, যাকে যে কোনও ভুলের বারবার ক্ষমা করা যায়, ঠিক তেমন একজন। এছাড়া আমিও আঁকতে পছন্দ করি, গান শুনতে পছন্দ করি, এবং কোনও কিছুই না করে মাঝে মাঝে প্রচুর সময় নষ্ট করে ফেলি, যে-হারানো সময়কে আমি কিছুতেই দিবাস্বপ্ন বলা যায় বলেও মনে করি না।
ঘরবাড়ির কিছু কিছু কাজও আমি করতে পছন্দ করি, খুব সাহসী হয়ে বলতে চাই, এ কাজে আমি আজকের দিনে অনেক অনেক বেশি মনযোগী। আমার প্রবল ঝোঁক রয়েছে রান্নার প্রতি, চারাগাছের যত্ন নেওয়ার প্রতি, ফুলবাগানের প্রতি; সাধারণ এই ঘরোয়া কাজগুলো তো আছেই, তাছাড়া আমার প্রচণ্ড ভালো লাগে শপিংমলগুলোয় ইতস্তত ঘুরে বিচিত্র সব মানুষ দেখা এবং তাদের পর্যবেক্ষণ করা, তাদের কথোপকথনের বিভিন্ন ভঙ্গি আত্মস্থ করা, তাদের পোশাক পরিচ্ছদের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা, তাদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও কথা বলার ধরণ খেয়াল করা। এসব প্রতিদিনকার কাজের মধ্যেই পড়ে। অবিরাম হেঁটে চলা আর গাড়িতে করে এদিক সেদিক যাওয়া- একজন লেখক হিসেবে এ হচ্ছে আমার জীবন যাপনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনাকে এখানে যা কিছু বললাম, এসব করা ছাড়া নিজেকে আমি লেখক ভাবতে পারি না।
প্রশ্ন:
কাফকার কাছ থেকে কী নিলেন?
ওটস :
ভয় বা বিভীষিকাকে ঠাট্টা করা। নিজেকে কম গুরুত্ব দেওয়া।
প্রশ্ন:
কোন বইটি লিখতে গিয়ে আপনি সবচে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন? কোনটি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত করেছে বা আত্মতৃপ্তি অনুভব করেছেন?
ওটস :
'ওয়ান্ডারল্যান্ড' এবং 'দি অ্যাসাসিন'- এই দুটি বইই ছিল লেখার ক্ষেত্রে সবচে বেশি জটিলতা সৃষ্টিকারী। 'এক্সপেনসিভ পিপল' ছিল সবচেয়ে কম কঠিন আর আমি ব্যক্তিগতভাবে 'চাইল্ডওল্ড'কে খুব পছন্দ করি, কেননা এই বইটি তাঁর শুরু থেকেই এক বিপুল বৈচিত্রে পূর্ণ জীবনকে উপস্থাপন করে--আলোকরশ্মির বর্ণালি বিচ্ছুরণের মতো--স্মৃতি এবং কল্পনা দিয়ে তৈরি এক সম্পূর্ণ পৃথিবীকে, যাতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের একত্রিত এক মিশ্রণ। ব্যাপারটি আমাকে সব সময়ই বিস্মিত করে দেয়- লোকে আমার উপন্যাসটি গ্রহণ করেছে এবং তারা উপন্যাসটিকে প্রশংসনীয় মনে করে, এর কারণ আমার এমন এক গোপন আর ব্যক্তিগত মনে হয়... একজন লেখক তাঁর জীবৎকালে কেবল একবারই এমন একটি মহৎ লেখা লিখে ফেলতে পারেন!
এ বইগুলি ছাড়াও, 'ডু উইথ মি হোয়াট ইয়্যু উইল' আমাকে কিছুটা আনন্দিত করেছে; আর অবশ্যই, মাত্রই লিখে শেষ করেছি, 'সন অফ দ্য মর্নিং' উপন্যাসটির কথা আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, যার সঙ্গে গভীর নৈকট্য অনুভব করছি (সাধারণত আমি মনে করি- সদ্য সমাপ্ত বইয়ের জন্য আমরা লেখকরা সব সময়ই বিশেষ টান অনুভব করি, বইটিকে মায়া করতে চাই, করি না? অবশ্যই করি, এমন কিছু স্পষ্ট কারণেই)। তারপরে এই মায়া কেটে গেলে আমি 'দ্যাম' উপন্যাসের জুল, মোরেন এবং লোরেত্তার কথা ভাবতে ভাবতে অবাক হয়ে যাই এটা মনে করে যে এই উপন্যাসটি সম্ভবত এখনও আমার প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।
প্রশ্ন:
আপনার প্রথম দিকের গল্প উপন্যাসগুলোয় ফকনার এবং ফ্ল্যানারি ও'কনোরকে পাওয়া যেত, আপনার ওপর তারা বেশ প্রভাব ফেলেছিলেন বলেই মনে হয়েছে। এই প্রভাবকে আপনি স্বীকার করেন? আর কেউ এমন আছেন?
ওটস :
দেখুন, আমি তো বহু বছর ধরেই পড়ছি, পড়ে চলেছি, আর আমাকে প্রভাবিত করার মতো ছিলেনও অনেক, যার বিস্তারও অনেক— এক্ষেত্রে, উত্তর দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে। একটি প্রভাবের কথা যা আমি খুব কমই বলেছি, তিনি হচ্ছেন থরো, যাকে আমি বয়ঃসন্ধিকালের সংবেদশীল সময়টায় পড়েছিলাম, এবং হেনরি জেমস, এবং অবশ্যই ও'কনোর এবং ফকনার, আর- ক্যাথরিন অ্যান পোর্টার এবং দস্তয়েভস্কি। এক অদ্ভুত মিশ্রণ।
প্রশ্ন:
আপনি অল্প বয়সে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। এর পেছনে কি আপনার পরিবারের উৎসাহ ছিল? আপনাদের পারিবারটি কি শিল্পচর্চায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল?
ওটস :
পরবর্তী বছরগুলিতে যদিও বাবা-মা শিল্পসৌন্দর্যের উপলব্ধিতে পৌঁছেছিলেন, কিন্তু তারা তাদের যৌবনে এবং তাদের সন্তানদের তারুণ্যের সময়ে, কেবলমাত্র কাজ আর কাজ ছাড়া অন্য কিছুতেই তাদের মনোযোগ কাড়ত না; তাদের সে সময় ছিল না। একটা পর্যায়ে আমি সৃষ্টিশীল হয়ে উঠি বাবা-মা, দাদি এবং আমার শিক্ষকদের কারণে, তারা নিরন্তর উৎসাহ দিতে থাকেন। আমি কিছুতেই মনে করতে পারি না যে প্রথম কখন গল্প বলতে শুরু করেছিলাম--ছবি এঁকে, তখন প্রকাশের ধরন এমনই ছিল; তবে আমি অবশ্যই তখন খুব ছোটোটি ছিলাম। গল্প বলার ব্যাপারটা ছিল এমন এক সহজাত প্রবর্তনা যাকে আমি প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দে নিজের ভেতর মূর্ত হতে দেখেছি।
প্রশ্ন:
নারী লেখক হওয়ার সুবিধাগুলো কী?
ওটস :
সুধিধা! সম্ভবত সুবিধাগুলোকে গুণে শেষ করা যাবে না তারা সংখ্যায় এতো বেশি। নারী হওয়ার কারণে, গণমাধ্যমে লেখকদের প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় এমন সারিতে শ্রেণিবিন্যস করার ক্ষেত্রে পুরুষ সমালোচকরা আমাকে কখনওই পুরোপুরি গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেন নি; আমি সমস্ত রকমের শ্রেণি কিংবা প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় সারির লেখক হওয়ার চাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। লেখক সারির প্রথম দিকে থাকবার প্রতিযোগিতার প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ নেই, ধারণাও নেই; রিঙের অন্য প্রতিভাদের সঙ্গে লড়াই করে হেমিংওয়ে কিংবা অনুকরণকারী মেইলারের দ্বন্দ্বের থেকেও আমার লালায়িত হওয়ার কিছু খুঁজে পাই না। একটি শিল্পকর্ম, আমার ধারণা মতে, কখনওই অন্য একটি শিল্পকে হটিয়ে জায়গা দখল করে না।
নারী হয়ে জন্ম হওয়া আমাকে নির্দিষ্ট কিছু অদৃশ্যতা বা অলক্ষ্যতার দিকে নিয়ে যায় এলিসনের ইনভিজিবল ম্যান'-এর মতো। (আমার সে দীর্ঘ জার্নালটি, যা এখন অবধি কয়েক'শ পৃষ্ঠার মতো লিখিত হয়েছে, যার শিরোনামটি হয়েছে 'ইনভিজিবল ওম্যান'। এমন নামের কারণ- একজন নারীর উপস্থিতিকে বড় যান্ত্রিকভাবে বিবেচনা করা হয়, অন্যরা তাকে যে রূপে কল্পনা করে তার বিপরীতে নারী নিজেকে আত্মগোপন করতে পারে। সে নিজেকে নিজে যতটুকু জানে, বোঝে, তার বিপরীতে অন্যরা নারী সম্পর্কে যা ভাবে এর মধ্যে একটা অলক্ষ্যতা থেকে যায়, দেখাটা বহুলাংশে খণ্ডিত হয়ে থাকে।) আমি কখনওই আমার বাইরের চেহারার সঙ্গে নৈকট্য অনুভব করি না, কোনও সংযোগ অনুভব করি না এবং প্রায়শই ভেবে থাকি যে এ আমার এক অন্য রকমের স্বাধীনতা উপভোগ, মানুষ হিসেবে, সে মানুষ লেখক হোক কি না হোক, এবং এভাবে নিজেকে উদযাপন করা যায়।
- অনুবাদ: এমদাদ রহমান