জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ
ব্যাট হাতে দুর্দণ্ড প্রতাপে শাসন। অধিনায়ক মুমিনুল হকের সেঞ্চুরির পর মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড করা ডাবল সেঞ্চুরি। তাতে প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড়ে উঠে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংস থেকেই মিলেছে ২৯৫ রানের লিড। শেষ বিকেলে স্পিন ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়েকে বিপদে ফেলতে ৬ উইকেটে ৫৬০ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।
যে পরিকল্পনায় ইনিংস ঘোষণা করা, সেটা পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই জোড়া আঘাত হানেন স্পিনার নাঈম হাসান। দিন শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৯ রান। ইনিংস হার এড়াতে জিম্বাবুয়েকে করতে হবে আরও ২৮৬ রান।
২২ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এই টেস্টের নাটাই এখন বাংলাদেশের হাতে। বাংলাদেশ শিবিরে এখন জয়ের সুবাস। জিম্বাবুয়ে বাকি ২৮৬ রান করে ফেললেও বাংলাদেশের জয় যে এক প্রকার নিশ্চিত, সেটা বলেই দেওয়া যায়। প্রকৃতি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে মিরপুরে হয়তো শেষ হাসি হাসতে যাচ্ছে বাংলাদেশই।
৩ উইকেটে ২৪০ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম এদিনও শুরু থেকেই সাবলীলভাবে খেলতে থাকেন। এই জুটি থেকে বাংলাদেশ পায় ২২২ রান।
এই জুটি গড়ার মাঝে সেঞ্চুরি তুলে নেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। এই সেঞ্চুরিতে তামিম ইকবালকে ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। টেস্টে তামিম ও মুমিনুলের সেঞ্চুরি সংখ্যা এখন সমান। দুজনই ৯টি করে সেঞ্চুরি করেছেন। দারুণ খেলতে থাকা মুমিনুল থামেন দলীয় ৩৯৪ রানে। ফেরার আগে ২৩৪ বলে ১৪টি চারে ১৩২ রান করেন তিনি।
মুমিনুল উইকেটে থাকা অবস্থায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিকও। টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করা মুশফিক পেছনে ফেলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে (৬টি সেঞ্চুরি)। মুমিনুল ফিরলেও মুশফিক থেকেছেন অবিচল। অন্য পাশ থেকে বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুন ও লিটন দাস। কিন্তু খেই হারাননি মুশফিক।
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান পুরোটা সময় দাপুটে ব্যাটিং করেছেন। চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা মুশফিক ১৫০ ও ২০০ রানও ছুঁয়েছেন বাউন্ডারিতে। ৩১৫ বলে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছান তিনি। এটা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। ৩১৮ বলে ২৮টি চারে ২০৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ রান।
২০৩ রানের চোখ ধাঁধানো এই ইনিংস খেলার পথে তামিমকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন মুশফিক। বাংলাদেশের হয়ে ৭০টি টেস্ট (চলমান টেস্টসহ) খেলা মুশফিক ৭টি সেঞ্চুরি ও ২১টি হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৪ হাজার ৪১৩ রান। দীর্ঘদিন শীর্ষস্থানে থাকা তামিমের রান ৪ হাজার ৪০৫।
এই ইনিংসটি মুশফিককে বসিয়ে দিয়েছে কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডস, সনাৎ জয়সুরিয়া, স্টিফেন ফ্লেমিংদের পাশেও। ক্রিকেট ইতিহাসে মুশফিকসহ মোট ১৪জন ব্যাটসম্যান তিনটি করে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। এলিট ব্যাটসম্যানদের এই তালিকায় আছেন ক্রিস গেইল, গ্যারি কার্স্টেন, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, স্টিভেন স্মিথরাও।
২০৩ রানের অপরাজিত এই ইনিংস দিয়ে সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলেছেন মুশফিক। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩৩৮ ম্যাচে ১১ হাজার ৭৫২ রান করেছেন সাকিব। ৩৭০ ম্যাচ খেলা মুশফিক সেটাকে ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছেন ১১ হাজার ৭৭৮ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড (তৃতীয় দিনশেষে) :
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ১০৬.৩ ওভারে ২৬৫/১০ (আরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪; রাহি ৪/৭১, নাঈম ৪/৭০, তাইজুল ২/৯০)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫৪ ওভারে ৫৬০/৬, ডিক্লেয়ার্ড (তামিম ৪১, শান্ত ৭১, মুমিনুল ১৩২, মুশফিক ২০২*; এইন্সলে এনডিলভু ২/১৭০, টিরিপানো ১/৯০ )।
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস: ৫ ওভারে ৯/২ (নাঈম ২/৩, তাইজুল ০/৫)