সাকিবের চোখ রাত ১২টা ১ মিনিটে
সবাই ঘড়ি দেখেন, সাকিব আল হাসানও। হোক সেটা ফোনে অথবা হাতঘড়ি। সময়ের হিসাব মেলাতে ঘড়ি না দেখে উপায় কই! আজও সাকিব নিশ্চয়ই ঘড়ি দেখছেন, বারবার দেখেছেন। তবে এবার সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে নয়, সময় ফুরানোর জন্য। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই মুক্তি মিলবে বাংলাদেশের বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের।
আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা থেকে আজ রাত ১২টায় মুক্তি মিলছে সাকিবের। ২৮ অক্টোবর তার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। দিন পেরিয়ে রাত ১২টা এক বাজলেই মুক্ত সাকিব। দিনটা কেমন যাচ্ছে, সেটা তার সঙ্গে কথা না বলে বোঝা সম্ভব নয়। তবে এক বছর পর ক্রিকেটে ফেরার শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার যে প্রতিটি সেকেন্ড গুনছেন, সেটা বুঝতে তার সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে না।
চোট আর একবার ছুটি নেওয়া ছাড়া কখনও বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকতে হয়নি সাকিবকে। কিন্তু গত বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে চেনা সময় হারিয়ে যায়। ক্রিকেট এতো কাছে থাকতেও হয়ে যায় কতো দূরের। ৩৬৫টা দিন ক্রিকেটবিহীন কেটেছে বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরার।
যন্ত্রণার সময় ফুরিয়েছে। কালো এক অধ্যায় শেষে বৃহস্পতিবার নতুন এক সূর্য দেখতে যাচ্ছেন সাকিব। ২৯ অক্টোবর থেকে তিনি মুক্ত। এদিন থেকে সব ধরনের ক্রিকেট কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন তিনি। চাইলেই চলে যেতে পারবেন মিরপুর স্টেডিয়ামে। চিরচেনা সবুজ গালিজায় মেতে উঠতে পারবেন ব্যাট-বল নিয়ে।
যদিও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সাকিবকে মিরপুরে দেখার সম্ভাবনা নেই। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তিনি। আগামী ১ নভেম্বর দেশে ফিরে করোনা পরীক্ষার অনুশীলন শুরু করতেন সাকিব।
এ পর্বে অনেকটা একা একাই অনুশীলন করতে হবে সাকিবকে। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ শেষে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দুই সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্রিকেটার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। যে কারণে ফিরেই জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন করা হবে না তার। এ ছাড়া সিরিজ না থাকায় জাতীয় দলের ক্যাম্পও নেই আপাতত।
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি লিগের সপ্তাহ খানেক আগে অনুশীলনে ফিরবেন ক্রিকেটাররা। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ নামের এই টুর্নামেন্টে ৫টি দল অংশ নেবে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে সপ্তাহ খানেক আগে থেকে অনুশীলন শুরু করবে দলগুলো। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে ক্রিকেটে ফিরবেন সাকিব আল হাসান।
জুয়াড়ির কাছ থেকে তিনবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও নিশ্চুপ থাকেন সাকিব। আইসিসির তদন্তে বিষয়টি উঠে এলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। যেখানে আইসিসি দুর্নীতি দমন আইন লঙ্ঘনের তিনটি অভিযোগ স্বীকার করে নেন সাকিব। এরপর গত বছরের ২৯ অক্টোবর সাকিবকে দুই বছরের (এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা) জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজে দুবার ও একই বছর এপ্রিলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব।
আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী আইন অনুযায়ী, কোনো ক্রিকেটার যদি জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পান এবং সেটা সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও আইসিসিকে না জানান, তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী এই ধারা ভঙ্গের সাজা সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা।