বিশ্বকাপের আসরে মেসির নামে তার ক্যালিগ্রাফি চিত্র আঁকছেন যে শিল্পী
বর্ণমালা নিছক মনের ভাবপ্রকাশ নয়, প্রায়ই হয়ে ওঠে শিল্পের বহিঃপ্রকাশ। আরব দেশে তারই এক অনবদ্য কলা– ক্যালিগ্রাফি। বর্ণের এই শৈল্পিক আঁচড়ে একজন দক্ষ শিল্পী ছবিও আঁকতে পারেন। যেমনটা করছেন কাতার-ভিত্তিক শিল্পী খালেদ আলমেসাওয়ি।
বর্তমানে খালেদের নেই দম ফেলার অবসর। অজস্র অর্ডার যে জমে আছে হাতে। বেশিরভাগই দিয়েছেন কাতারের স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশ্বকাপে আসা দর্শকেরা। আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠার সুবাদে সুপারস্টার লিওনেল মেসির ক্যালিগ্রাফিতে আঁকা অনবদ্য চিত্রকর্ম সবারই যে চাই। এই ছবির অর্ডারই বেশি খালেদের হাতে। তাই কাতারের জনপ্রিয় সৌক ওয়াসিফ বাজারের সৌক আর্ট সেন্টারের বাইরে বসে ক্যানভাসে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় তাকে।
খালেদ আলমেসাওয়ির জন্ম মিশরে। এখন থাকেন কাতারে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, তার আঁকা মেসির চিত্রের পাশাপাশি আরবি বর্ণের ক্যালিগ্রাফি দেখেও মুগ্ধ হয়েছেন বিদেশিরা। তাদের অনেকেই বর্ণমালা দিয়ে এত সুন্দর শিল্পকাজ এই প্রথম দেখেছেন।
'মেসি হলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার, তাই মানুষকে আমার কাছে তার ছবি আঁকার ফরমায়েশই দেয় বেশি, কারণ মেসিকে সবাই ভালোবাসে'- বলেন এই মিশরীয় শিল্পী।
কথা বলতে বলতেই তুলি হাতে ক্যানভাসে মেসির একটি ছবি আঁকছিলেন তিনি। মেসির আর্জেন্টেনীয় নামকে আরবি হরফে লিখে, তা দিয়েই তৈরি হচ্ছিল ছবির রূপরেখা। এটাই খালেদের শিল্পের স্বকীয়তা।
তিনি বলেন, 'ভালোবাসি মানুষের মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া, আর বিদেশিরা অভিভূত হলে তো দারুণ ভালো লাগে। তারা আমার ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ক্যালিগ্রাফি স্কেচের কাজগুলো অনেক অনেক শেয়ার করছেন'।
খালেদের উন্মুক্ত স্টুডিওতে মেসির ছবিকে সঙ্গ দিচ্ছিল আর্জেন্টিনার আরেক কিংবদন্তী দিয়াগো ম্যারাডোনার ছবি। বছর ১৭ আগে মেসির আবির্ভাবের আগে দিয়াগোই ছিলেন এই শিল্পীর সবচেয়ে পছন্দের ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব।
খালেদের মতে, মাঠের লড়াইয়ে মেসির নৈপুণ্যে মানুষের সহজাত মুগ্ধতা আছে, কিন্তু তাকে সামনাসামনি দেখে আরও বেশি উত্তেজিত হয় ভক্তরা। শিরোপা তাই মেসির হাতে যাক এমনটাই দেখতে চান তারা।
আসলেই এবারের বিশ্বকাপ মেসিময়। আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়ে মেসিকে ঘিরে। আর এখনতো ফাইনালের চরম মুহূর্ত সামনে। উত্তেজনা, উচ্ছ্বাসের পারদ তাই চড়ছেই। মেসির জার্সি, মেসির নামে স্লোগান, আর্জেন্টিনার পতাকা হাতে কাতারের রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ উদযাপন– চলছে সবই দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। এক কথায়, ম্যারোডোনার পর বিশ্বকাপে আসরে কোনো ফুটবলারের এতোটা জনপ্রিয়তা দেখা যায়নি।
মেসি তার পেশাদারী ফুটবল ক্যারিয়ারে মুথোবন্দী করেছেন অনেক ট্রফি, ভেসেছেন তুমুল প্রশংসা ও স্তুতিতে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রোববারের ফাইনালে ৩৫ বছরের এই আর্জেন্টিনীয়কেই দলের তরুণদের পথ দেখাতে হবে। কারণ ২০০৬ থেকে ২০২২- পাঁচ পাঁচটি বিশ্বকাপের আসরে খেলার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তিনি।
২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সর্বশেষ ফাইনাল ছিল মেসি ও আর্জেন্টিনার। তারা ওই ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ১-০ গোলে হারে জার্মানির কাছে।
'আমি উচ্ছ্বসিত'
২৫ বছর ধরে কাতারে আছেন খালেদ আলমেসাওয়ি। এই দেশকে করে নিয়েছেন আপন। তাই বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়েও দারুণ উচ্ছ্বাস তার। জানালেন, এত এত পর্যটক ও আয়োজনের নিপুণতায় তিনি একেবারেই মুগ্ধ।
তার মন্তব্য, 'আহা… আমার তো মনে হয় প্রতি চার বছর অন্তর দোহার একবার করে বিশ্বকাপের আসর বসানো উচিত। ব্যক্তিগত ও পেশাগত দুদিক থেকেই আমার জন্য অসীম আনন্দ ও অর্জন এনেছে এই বিশ্বকাপ'।
আর হবেই বা না কেন, ছবির ভক্তরা নাছোড়বান্দা। তাই বিশ্বকাপ শুরুর পর একদিনও ছুটি নিতে পারেননি খালেদ। এত ব্যস্ততার মধ্যেও শিল্পের আনন্দে পরিশ্রমের ধকলটা গায়ে লাগে না তার।
তিনি বলেন, 'ভোররাত ৩-৪ টায় চলে আসেই এখানে, আর বাড়ির পথ ধরার কথা রাত ১০টায়। কিন্তু, বেশিরভাগ দিনই তার চেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করি। এটাই আমার জীবন, এনিয়ে ব্যস্ত থাকতেই তো ভালবাসি'।