বদলি লাউতারোর গোলে আর্জেন্টিনার রেকর্ড ১৬তম কোপা জয়
লাউতারো মার্তিনেস, আর্জেন্টিনার কিংবদন্তিদের তালিকায় নাম লেখালেন এক গোলেই। কারণ এই গোল যে এনে দিয়েছে আর্জেন্টিনার রেকর্ড ১৬তম কোপা আমেরিকা শিরোপা।
চোট পেয়ে লিওনেল মেসি যখন কাঁদতে কাঁদতে উঠে গেলেন, শঙ্কা ভর করেছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে। সব শঙ্কা উড়িয়ে আর্জেন্টিনাকে জয় এনে দিলেন লাউতারো মার্তিনেস। তার ১১২ মিনিটের গোলে কলম্বিয়াকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতল আলবিসেলেস্তেরা।
ম্যাচের একেবারে শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম মিনিটে গঞ্জালো মন্তিয়েলের ক্রস থেকে হুলিয়ান আলভারেজ পা ছোঁয়ালেও বল চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। । এরপর পাল্টা আক্রমণ চালায় কলম্বিয়া, ৫ মিনিটে রিকার্ডো রিওসের অ্যাসিস্টে ডান পায়ে শট নেন কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড লুইস দিয়াজ। তবে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস তা ঠেকিয়ে দেন।
এরপর আরেকটি দারুণ সুযোগ পায় কলম্বিয়া। ৭ মিনিটে জন কর্ডোবা। তবে কর্ডোবার শট গোলপোস্টের বাম পাশে লেগে ফিরে যায়। কলম্বিয়ার সুযোগ মিসের মহড়ায় পাল্টা আক্রমণে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ২০ মিনিটে দি মারিয়ার পাস রিসিভ থেকে মেসি শট নিলেওবক্সের মধ্যে আলভারেজের পায়ে লেগে গতি কমে যায়। এরপর কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ক্যামিলো ভার্গাস বল দখলে নেন।
আর্জেন্টিনার সহজ সুযোগ হারানোর পর কলম্বিয়া একের পর এক আক্রমণ করেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। নিজেদের ফিনিশিং দুর্বলতা তো ছিলই, পাশাপাশি মার্তিনেস গোলপোস্টের সামনে বরাবরের মতোই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ড্রয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধেও দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে। ৪৭ মিনিটে আরিয়াসের শট একটু এদিক-ওদিক হলেই গোল পেতে পারত কলম্বিয়া। তবে আর্জেন্টিনাও দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক ভালো খেলা শুরু করে, দি মারিয়া কলম্বিয়ার রক্ষণদুর্গ কাঁপিয়েছেন বারবার। তবে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ভারগাসের দৃঢ়তায় ৪৮ ও ৫৮ মিনিটে দুই বার গোল করতে পারেননি মারিয়া।
একের পর এক সুযোগ মিসের মহড়ার মধ্যে আর্জেন্টিনা বড়সড় এক ধাক্কা খায়। ৬৫ মিনিটে গোঁড়ালির চোটের কাছে হার মেনে মাঠেই পড়ে যান মেসি। নিজেই ততোক্ষণে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন, ইশারায় বলে দিয়েছেন ওই পা নিয়ে আর খেলতে পারবেন না। বদলি খেলোয়াড় নিকোলাস গঞ্জালেস ডাক আউটে প্রস্তুত, কিন্তু মাঠ ছাড়তে গিয়ে লিওনেল মেসির শরীর যেন ভারী হয়ে উঠলো। খোঁড়াতে খোঁড়াতে শরীরটাকে টেনে নিয়ে গেলেন মাঠের বাইরে, ডান পা থেকে খুলে ফেলা বুট মাটিতে আছড়ে ফেলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর। বেঞ্চে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে অঝোরে কেঁদে গেলেন মেসি।
৭৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার নিকো গঞ্জালেস গোল করলেও তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকায় গোল বাতিল হয়। ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ হলেও কোনো দলই গোল করতে পারেনি।
অতিরিক্ত সময়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা দি মারিয়া একের পর এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারছিলেন না। কিন্তু ১১২ মিনিটে আসে সেই মোক্ষম সুযোগ, কলম্বিয়ার মাঝমাঠে বল কেড়ে নেন লাউতারো, তিনি পাস দেন লো সেলসোকে, আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার দারুণ এক পাস বাড়ান লাউতারোর উদ্দেশ্যে, সেটি ধরে অসাধারণ এক ফিনিশে কলম্বিয়ার হৃদয় ভাঙেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। আকাশী-নীলরা মেতে ওঠে টানা দ্বিতীয় ও রেকর্ড ১৬তম কোপা শিরোপা উৎসবে।