আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতা, আবারও বড় হার
ভারতের ব্যাটিং ঝড় ভুলিয়ে জিততে বাংলাদেশকেও ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে হতো, গড়তে হতো নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। কিন্তু বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে সেই হতাশার গল্পই লিখলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় লক্ষ্যে পৌঁছানোর অনেক আগেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংস, মেনে নিতে হলো আরেকটি বড় হার।
বুধবার দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে ৮৬ রানের হেরেছে বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে রানের হিসেবে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় বড় হার। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল। নিয়ম রক্ষার ম্যাচে আগামী ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ১৬ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে এটা তাদের ১৫তম হার।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারত ভালো শুরু করতে না পারলেও নিতিশ কুমার রেড্ডি ও রিঙ্কু সিংয়ের ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরির পর হার্দিক পান্ডিয়ার দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটে ২২১ রান তোলে ভারত। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এতো রান করে কখনও জেতেনি বাংলাদেশ, তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া ২১৪। বড় লক্ষ্য তাড়ায় দ্রুত রান তুলতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ৯ উইকেটে ১৩৫ রানেই।
লক্ষ্য তাড়ায় তেড়েফুঁরে শুরু করা বাংলাদেশ দলীয় ২০ রানেই প্রথম উইকেট হারায়। ভাঙনের সুর যে বেজে ওঠে, তা আর থামেনি। পরের টি-টোয়েন্টি খেলে এই ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া কেউই রানের দেখা পাননি। যদিও তিনি টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট চালাতে পারেননি। ৩৯ বলে ৩টি চারে ৪১ রান করেন দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪০ টি-টোয়েন্টি খেলা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউ ২০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। পারভেজ হোসেন ইমন ১৬, লিটন কুমার দাস ১৪, অধিনায়ক শান্ত ১১, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৬, রিশাদ হোসেন ৯ ও তানজিম হাসান সাকিব ৮ রান করেন। ভারতের নিতিশ ও বরুণ চক্রবর্তী ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান আর্শদীপ সিং, ওয়াসিংটন সুন্দর, অভিষেক শর্মা, মায়াঙ্ক যাদব ও রিয়ান পারাগ।
এর আগে ব্যাটিং করা ভারত ২২ গজে সাইক্লোন বইয়ে দেয়। তাসকিন আহমেদ ছাড়া বাংলাদেশের বাকি বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। দুই স্পিনার মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ ১৫'র বেশি ইকোনমিতে রান খরচা করেন। টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশ স্পিন দিয়ে ইনিংস শুরু করে। কিন্তু মিরাজের করা প্রথম ওভারেই চলে তাণ্ডব, ১৫ রান তোলেন স্বাগতিক দলের দুই ওপেনার সঞ্জু স্যামসন ও অভিষেক শর্মা। পরের ওভারে ভারতের রোন তোলার গতি থামিয়ে স্যামসনকে ফেরান দারুণ বোলিং করা তাসকিন। ৭ বলে ২টি চারে ১০ রান করে আউট হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
তৃতীয় ওভারে তোপ দাগেন তানজিম। ১১ বলে ৩টি চারে ১৫ রান করা অভিষেককে বোল্ড করেন তিনি। যদিও ব্যাটে লেগে ভাঙে ভারতীয় ওপেনারের স্টাম্প। শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে রান তোলায় পিছিয়ে পড়ে ভারত। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও নিতিশ ঠাণ্ডা মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকেন। পাওয়ার প্লে ৬ ওভার থেকে ৪৫ রান তোলে ভারত। ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার আগে ১০ বলে ৮ রান করেন সূর্যকুমার।
সপ্তম ওভারটিও ধীর গতিতে রান তোলে। কিন্তু অষ্টম ওভার থেকে যে নিতিশ ও রিঙ্কুর ঝড় শুরু হয়, মুহূর্তেই ১০০ পূর্ণ হয়ে যায় ভারতের। এই চার ওভারে ৫৬ রান তোলে তারা। এরপর আরও কিছুক্ষণ চলে এ দুজনের ব্যাটিং দাপট। চতুর্থ উইকেটে ৪৯ বলে ১০৮ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৪তম ওভারে মুস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার আগে ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৭৪ রানের খুনে ইনিংস খেলেন নিতিশ। ২৭ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
এরপর দাপট জারি রাখা রিঙ্কু আরও দ্রুত গতিতে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন, ২৬ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ২৯ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৩ রান করে আউট হন রিঙ্কু। পরে হার্দিকের ব্যাটে এগোয় ভারত। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ১৯ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩২ রান করেন। রিয়ান পারাগও দ্রুত রান তোলেন, ৬ বলে ২টি ছক্কায় ১৫ রান করেন তিনি।
ভারতের উইকেট নিলেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ বোলার ছিলেন খরুচে। এই তালিকায় তাসকিন কেবল ব্যতিক্রম, ৪ ওভারে ১৬ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। ৩ উইকেট নেওয়া রিশাদ ৪ ওভারে দেন ৫৫ রান। ৪ ওভারে ৩৬ রানে ২ উইকেট পান মুস্তাফিজ। তানজিমের শিকারও ২ উইকেট, ৪ ওভারে তার খরচা ৫০ রান।