এবাদতময় দিনের শেষে স্বপ্ন ছোঁয়ার আশা
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে প্রথম দিনটা কেবল সমানে সমান। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ছিল একই বিন্দুতে। এর পরের তিন দিন টানা বাংলাদেশের দাপট। ব্যাটে-বলে কিউইদের শাসন করে যাচ্ছে মুমিনুল হকের দল। তাতে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ম্যাচের নাটাই বাংলাদেশের হাতে। যে নিউজিল্যান্ডে টেস্টে লড়াই করাই বাংলাদেশের কাছে বিরাট কিছু, সেখানেই এবার জয়ের স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ।
এবার অবশ্য স্বপ্ন নয়, বাস্তবতাই আশা জাগাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাট হাতে ছড়ি ঘোরায় বাংলাদেশ। ৪৫৮ রান তুলে প্রথম ইনিংসে ১৩০ রনে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। ৫ উইকেটে ১৪৭ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা, লিড দাঁড়িয়েছে ১৭ রানের।
বাকি থাকা পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে কিউদের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম রস টেলর। টেস্টে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের মালিক অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৩৭ রানে অপরাজিত আছেন। রাচিন রবীন্দ্র অপরাজিত ৬ রানে। এরপরের চার ব্যাটসম্যান কাইল জেমিসন, টিম সাউদি, নেইল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্ট মূলত বোলার। এদের মধ্যে কেউ কেউ টুকটাক ব্যাটিং জানলেও তাতে ভরসার জায়গা মিলছে না ঘরের মাঠের দলটির।
বাংলাদেশ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে, এখানে আসতে বল হাতে সবচেয়ে বড় অবদান এবাদত হোসেনের। ডানহাতি এই পেসার চতুর্থ দিনের শেষ ভাগে তিন ওভারের মধ্যে তিন উইকেট নিয়ে একাই পাল্টে দিয়েছেন ম্যাচের চেহারা। এর আগে নিয়েছেন আরও একটি উইকেট। কিউইদের পাঁচ উইকেটের চারটিই তার ঝুলিতে। ১৭ ওভারে তার খরচা ৩৯ রান। পেসারদের মধ্যে এবাদতের ইকোনমি সবচেয়ে কম।
অথচ এই টেস্টে এবাদতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। আবু জায়েদ রাহির বদলে তাকে দলে নেওয়ায় একাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল। আর গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে এবাদতকে একাদশে নেওয়ায় তো রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড বেধে গিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকারও হয়েছিলেন বাংলাদেশের এই পেসার। কদিনের ব্যবধানে সেই এবাদতই এখন দলের কাণ্ডারি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনিই এখন ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে।
নিউজিল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবারের মতো লিড পাওয়া বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ৪০১ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করে। অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ইয়াসির আলী রাব্বি ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এদিন এই দুই ব্যাটসম্যান সাবলীল ছিলেন না। মিরাজ আউট হওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের। শেষ চার উইকেট ১৩ রানের মধ্যে খোয়ায় তারা।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের যোগান দিয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৮৮ রান করেন। এ ছাড়া লিটন কুমার দাস ৮৬, মাহমুদুল হাসান জয় ৭৮, নাজমুল হোসেন শান্ত ৬৪, সাদমান ইসলাম অনিক ২২ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। নেইল ওয়াগনারের শিকার ৩ উইকেট। সাউদি ২টি ও জেমিসন একটি উইকেট পান।
এই ইনিংসে ১৩০ রানের লিড বাংলাদেশকে অনেকটা এগিয়ে দেয়। যে রান তুলে লিড নিতে গিয়ে ৫ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিউইদের লিড ১৭ রানের, হাতে পাঁচ উইকেট। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান কেবল রস টেলর। বাংলাদেশের আশা তাই প্রথম সেশনের মধ্যেই স্বাগতিকদের অলআউট করা। বল হাতে দাপট ধরে রেখে সেটা করতে পারলে ১০০-১১০ রানের বেশি লক্ষ্য হওয়ার কথা নয়। যা দুই সেশনে পাড়ি দেওয়া সহজ কাজই। সব মিলিয়ে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের আশায় বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১৫টি (চলতি ম্যাচ বাদে) টেস্ট খেলেছে, হার ১২টিতে। এর মধ্যে ইনিংস হারই ৭টিতে। বাকি তিনটি ম্যাচ ড্র হয়েছে, তিনটিই বাংলাদেশের মাটিতে।