আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়লেন ১৯ লাখ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি) থেকে ১৯ লাখের বেশি নাম বাদ পড়েছে। শনিবার সকালে প্রকাশিত তালিকায় চূড়ান্তভাবে ঠাঁই পেয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখের নাম।
এনআরসি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। সকাল ১০টায় অনলাইনে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকাটি প্রকাশের পর ১৯ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। এনআরসি তালিকায় ওই উনিশ লাখ মানুষকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের কয়েক দশকের পুরনো স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর এই এনআরসি তালিকা প্রকাশ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম বৃহত্তম পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে এনআরসির তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এই রাজ্য যাতে কোনো অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি সরকারি স্থানে চার জনের বেশি লোক জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, বিশেষত সংবেদনশীল অঞ্চলগুলোতে। কেননা এর আগে আসামের গৌহাটিসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় এই ইস্যুতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। আসামজুড়ে প্রায় ৬০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং ২০ হাজার অতিরিক্ত আধা-সামরিক বাহিনীও আসামে পাঠিয়েছে কেন্দ্র।
কেন্দ্র অবশ্য বলেছে, যাদের নাম চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় স্থান পাবে না, সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখনই বিদেশি ঘোষণা করা যাবে না। এনআরসির বাইরে থাকা প্রত্যেক বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন। এই আবেদন করার সময়সীমা ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে তাদের পক্ষে যুক্তি শোনার জন্য পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এর মধ্যে ১০০টি ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছে এবং আরও ২০০টি আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে স্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনালের মামলায় কেউ হেরে গেলেও উচ্চ আদালতে এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারবেন।
ওদিকে, ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ বিরোধী কংগ্রেস ও অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ-পড়াদের আপিল আবেদনের জন্য আইনি সহায়তা দেবার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।
আসামে অবৈধ অভিবাসীদের ইস্যুটি চার দশকেরও বেশি সময়ের পুরনো। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যে অবৈধভাবে অনেকেই বিশেষত বাংলাদেশিরা বসবাস করছেন বলে বিতর্কের অবসান ঘটাতেই আসাম সরকারের এনআরসি হালনাগাদ করার প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে প্রক্রিয়াধীন ছিল। আটষট্টি বছর পর এ কাজটি সম্পন্ন করে চূড়ান্ত তালিকা শনিবার সকালে প্রকাশ করা হল।
এনআরসির রাজ্য সমন্বয়কারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদনের মধ্যে শেষাবধি ১৯,০৬,৬৫৭ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
১৯৫১ সালে প্রথম আসামের জন্য এনআরসি প্রণয়ন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৫ সাল অব্দি এটি আপডেট করা হয়েছে।
তবে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা এবং ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দিয়ে তাদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৭৯ সালে।.