ইন্দোনেশিয়ায় ফৌজদারি আইনের সংশোধন: শাস্তিযোগ্য হবে বিয়েবহির্ভূত যৌনতা
পক্ষগুলোর সম্মতিতেও বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক হলে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে ইন্দোনেশিয়ায়।এ ধরনের একটি আইন করতে যাচ্ছে সেদেশের সরকার। অপরাধ বলে বিবেচিত হবার পর থেকে বিয়েবহির্ভূত যৌনতার জন্য ইন্দোনেশীয়দের জেল খাটতে হবে অথবা মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হবে।
তবে কেবল বিয়েবহির্ভূত যৌনতা নয়, আরও বেশ কটি বিষয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যেগুলোর বিষয়ে মানবাধিকার গ্রুপগুলো আপত্তি তুলেছে।
ডাচ ঔপনিবেশিক আমলে এদেশে যেসব আইন-কানুন ছিল, সেগুলো বদলাতে দু’দশক ধরে কাজ চলছিল। সম্প্রতি পার্লামেন্টের একটি টাস্ক ফোর্স আইনগুলোর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী সপ্তাহেই সংসদে ভোটাভুটির জন্য পাঠানো হবে। ধারণা করা যাচ্ছে, সেখানে পাশ হয়ে যাবে বিতর্কিত নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধি।
দ্য টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, নতুন এ আইন সংস্কার পরিকল্পনায় রয়েছে অসংখ্য বিতর্কিত ধারা যেগুলো মানবাধিকার পরিপন্থী বলে উদ্বিগ্ন এখন সেদেশের মানবাধিকারকর্মীরা।
এর মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্টের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে কিছু বলা হলে আর্থিক দণ্ড এবং জরুরি স্বাস্থ্যগত সমস্যা না থাকলেও গর্ভপাত ঘটানোর জন্য নারীর কারাদণ্ডের বিধান। এছাড়া রয়েছে গর্ভনিরোধকের পরামর্শের ক্ষেত্রে সেন্সরশিপ, ব্লাসফেমি আইনের সম্প্রসারণ, সমকামীদের বিয়ে অবৈধ ঘোষণা, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী প্রশিক্ষণ প্রদান করলে চার বছরের জেল ইত্যাদি।
বিয়েবহির্ভূত যৌনতার ক্ষেত্রে, যদি গ্রামপ্রধান পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তবে জড়িত পক্ষগুলোকে ছ’মাসের জেল বা ৫৭০ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। ৫৭০ পাউন্ড সেদেশের সাধারণ মানুষের তিন মাসের আয়ের সমান। ইন্দোনেশিয়ার সরকার ব্যবস্থায় গ্রামপ্রধান হলেন প্রশাসনযন্ত্রের সবচেয়ে অধস্তন কর্মকর্তা।
আইনটি বিদেশিদের জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য হতে পারে। এটা যেমন দুবাইতে হয়েছে।বিশ্বের অন্যতম সেরা টু্রিস্ট স্পট ও বিদেশিদের পছন্দের জায়গা হলেও সেখানে বিয়ে না হলে কোনো জুটি এক ছাদের নিচে বসবাস করতে পারেন না। বিদেশিদেরও সেখানে নানা জটিলতায় পড়তে হয়।
সমলিঙ্গের জুটিরা বিয়ে তো করতে পারবেনই না, জটিলতা ওদের জন্য আরও বাড়বে। এমনিতেই সেদেশের রক্ষণশীল ব্যবস্থায় সমকামীরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হন প্রতিদিন।
বিশেষ করে গর্ভনিরোধকের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছানোর বিষয়ে সেন্সরশিপ আরোপ অনেক বড় সমস্যা তৈরি করবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ায প্রসূতির মৃত্যুহার ব্যাপকভাবে কমানো গিয়েছিল। এখন সেন্সরশিপের ফলে গর্ভনিরোধকের ব্যবহার কমলে নারীদের গর্ভধারণের হার বাড়বে। সঙ্গত কারণেই বাড়বে মাতৃমৃত্যুও।
ডাচ জমানার ফৌজদারি আইন সংস্কারের নামে ইন্দোনেশিয়ায় যা হতে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কিত সেখানকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রটিতে এমনিতেই নানা রকম রক্ষণশীলতার শেকল মানুষকে বেঁধে ফেলেছে।তার মধ্যে বাড়ছে আরও কঠিন কালাকানুনের জন্য রক্ষণশীলদের চাপ। ফলে নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধি জনগণের মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র ইন্দোনেশিয়া গবেষক আন্দ্রিয়াস হারসোনো মনে করেন, “এটা কেবল ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সংখ্যালঘুদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে না, সব ইন্দোনেশীয়র জন্যই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। আইনটা পাশ করার আগে আইনপ্রণেতাদের উচিত হবে সব ধরনের নিপীড়নমূলক ধারা সরিয়ে ফেলা।”
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, বিশেষ করে বিয়েবহির্ভূত যৌনতার আইনটির ফলে লাখো মানুষ নানা ধরনের প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন।
দেশটির সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একটি জোট তাই প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোকে অনুরোধ করছেন, ফৌজদারি এই দণ্ডবিধি প্রণয়নের কাজটি পিছিয়ে দিতে।তাদের যুক্তি, এটি প্রণীত হলে সংখ্যালঘু ও অমুসলিমের জন্য নিপীড়নের হাতিয়ার হয়ে উঠবে; মৌলিক মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে। অথচ গণতন্ত্রের মূল সুর তো এটাই।
সঙ্গত কারণেই নতুন এ উদ্যোগে স্বাগত জানিয়েছে রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো। ইসলামপন্থী প্রসপারাস জাস্টিস পার্টির নেতা নাসির জামিল রয়টারকে বলেছেন, “সরকারের দায়িত্ব জনগণকে আল্লাহর আইনবিরোধী সব ধরনের আচরণ থেকে দূরে রাখা।”