ঐতিহাসিকভাবেই এটি সবচাইতে খারাপ সময়: মার্কিন গবেষক
বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির অর্থনীতি টালমাটাল, কর্মহীন হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এর মাঝেই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মার্কিনীরা।
এসব দেখে যদি মনে হয় 'খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে তারা', এই অবস্থা নিয়ে ঝটপট কিছু গবেষণাও হয়েছে। এরকম এক গবেষণায় গবেষকরা বলছেন, ঐতিহাসিকভাবেই অসুখী সময় পার করছে আমেরিকা।
সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য দেন গবেষক ক্রিস ড্যানফোর্থ এবং পিটার ডথ। তারা দুজনই বার্লিংটনের ইউনিভার্সিটি অব ভেরমঁ-এর গণিতবিদ।
এই গবেষণাটির জন্য দুই গবেষক মূলত টুইটারের বিভিন্ন পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করেন। একাজে 'হেডোনোমিটার' নামে একটি টুল বা সফটওয়্যার ব্যবহার করেন তারা। এই টুল দিয়ে বিভিন্ন ভাষায় দেওয়া পোস্ট বিশ্লেষণ করা যায়।
গত ২৬ মে থেকে টানা দুই সপ্তাহের সমস্ত টুইটার পোস্ট বিশ্লেষণ করার পর ক্রিস ও পিটার দেখলেন, ইতিহাসের সবচাইতে দুঃখের সময় পার করছেন মার্কিনীরা।
হেডোনোমিটার নামের টুলটি ২০০৮ সালে নির্মাণ করেন ক্রিস ও পিটার। প্রতিদিন দৈবচনিক উপায়ে কোন একটি ভাষার ১০% টুইটার পোস্ট নমুনা হিসেবে সিলেক্ট করে টুলটি। এরপর পোস্টে ব্যবহৃত শব্দগুলোকে বিশ্লেষণ করার পর টুইটকারীদের সবচেয়ে সুখী (৯) থেকে সবচেয়ে দুঃখী (১) এই স্কেলে ফেলা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্চের মাঝামাঝিতে কোভিড-১৯ এর পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। এরপর আবার ২৫ মে মিনিয়াপোলিস পুলিশ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে।
ঐ সময় থেকে ইংরেজিভাষী মার্কিনীদের টুইটগুলো বিশ্লেষণ করে হেডোনোমিটার জানায়, ২৬ মে'র পর থেকে দেশটির অধিবাসীরা সবচাইতে বেশি যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন- 'মার্ডার' বা হত্যা, 'রেপ' বা ধর্ষণ এবং 'স্যাড' বা দুঃখী।
নিউজউইক পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস ড্যানফোর্থ জানান, টুইটারে সাধারণত খেলাধুলা, বিনোদন আর গান-বাজনা নিয়ে বেশি আলাপ-আলোচনা হয়। কিন্তু মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এইসব নিয়ে খুব কমই আলোচনা দেখা গেছে।
শুধু এই গবেষণাই নয়, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর কোভিড-১৯ রেসপন্স নিয়ে করা এক গবেষণাও একইরকম ফলাফল দেখাচ্ছে। এবছরের মে মাসের শেষে ২ হাজার ২৭৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকের তথ্য নিয়ে জানা গেছে গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচাইতে অসুখী সময় পার করছেন তারা।
২০১৮ সালে যেখানে ৩৩% মার্কিন নাগরিক সুখী হবার দাবি করেছিলেন, এবছর সেটা নেমে এসেছে ১৪% এ।
আর এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুঃখজনক অবস্থায় আছেন আফ্রিকান-আমেরিকানরা। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আফ্রিকান-আমেরিকানরা শ্বেতাঙ্গদের চাইতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। কারণ তারা যে অঞ্চলগুলোতে থাকেন, সেখানে পর্যাপ্ত ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।