করোনাকে বিদায়
গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লুএইচও) সতর্ক করেছিল যে খুব সহজে এই ভাইরাসের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া যাবে না। আর এমন সময়েই কোভিড-১৯ কে "প্রতীকী বিদায়" জানাতে এক উৎসবের আয়োজন করেছে চেক প্রজাতন্ত্রের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী প্রাগের চার্লস ব্রিজে স্থাপন করা হয় ৫০০ মিটার দীর্ঘ (প্রায় ১৬৪০ ফুট) একটি টেবিল। হাজার হাজার বাসিন্দা এসে সেখানে জড়ো হয়েছেন। সঙ্গে করে এনেছেন বাড়িতে তৈরি খাবার, পানীয়। একে অন্যের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নিয়ে, পানীয়ের গ্লাসের 'চিয়ার্স' এর সঙ্গে এতদিনের দমবন্ধ করা আতংককে যেন বিদায় জানাতে চান তারা।
ছিল না কোন সামাজিক দূরত্ব। প্রতিবেশীর সঙ্গে নিঃসংকোচে খাবার ভাগ করে খাচ্ছিলেন তারা। লকডাউনে থাকা আমাদের অনেকের জন্যই হয়তো বিষয়টা মেনে নেওয়া কঠিন।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বিবিসিকে জানান, বিখ্যাত এই মোহনীয় শহরে নেই পর্যটকদের ভীড়। এর ফলেই এমন আয়োজন সম্ভব হয়েছে।
১ কোটি জনসংখ্যার দেশ চেক প্রজাতন্ত্রে এপর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩৫০ জন। মহামারীর শুরু থেকেই সংক্রমণ রোধে লকডাউন জারি করে দেশটির সরকার।
গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ এক হাজার জনের সমাবেশের অনুমোদন দেওয়া হয় সেখানে। সুইমিং পুল, জাদুঘর, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি খুলে দেওয়া হয় তবে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি জড়ো হওয়া যাবে না এমন শর্তে। রেস্টুরেন্ট, বারগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে তাও একমাস হয়ে যাচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্রে।
চার্লস ব্রিজের এই পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে আগে থেকেই আসন বরাদ্দ করে রেখেছিলেন সবাই। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন যার যার বাদ্যযন্ত্র। খাবার টেবিলেই বেহালা বাজাচ্ছেন কেউ, অন্যপ্রান্তে কেউ বা আবার নিয়ে বসেছেন বাঁশি, চেলো ইত্যাদি।
অংশগ্রহণকারীদের একজন গালিনা খোমচেনকো বলেন, 'রাতের শিফটে কাজ শেষ করেই চলে এসেছি। কিছু তৈরি করার সময়ও পাইনি। ঘরে ওয়াইন আর কিছু হালকা নাস্তা ছিল, নিয়ে এসেছি সঙ্গে করে।'
নানানরকম বাদ্যযন্ত্রের সুর, প্লেট-চামচ-গ্লাসের টুংটাং শব্দ ছাড়াও এই পার্টির সবচেয়ে অভাবনীয় বিষয় ছিল-চারপাশে শুধুই চেক প্রজাতন্ত্রের ভাষা শোনা যাচ্ছিল। পর্যটন নগরী প্রাগের রাস্তা বহু বছর ধরেই নানা ভাষার মানুষের শব্দে মুখরিত থাকে। এই প্রথমবারের মত চারপাশে শুধুই মাতৃভাষা শুনতে পাচ্ছিলেন সবাই। চার্লস ব্রিজের সেই সন্ধ্যায় বহুদিন পর সকলে একত্রিত হয়ে হয়তো নতুন করে আবার বাঁচার স্বপ্নই দেখছিলেন, সুদিনের আশায় হাতে তুলে নিয়েছিলেন পানীয়ের গ্লাস।