চাইলেই আপনার ফোনের গতিবিধি অনুসরণ করতে পারবে কোম্পানিগুলো!
অনলাইন আচরণের ওপর ভিত্তি করে হাজার হাজার কোম্পানির মানুষের তথ্য সংগ্রহ থেকে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা দিবে বলে জানিয়েছে গুগল ও অ্যাপল। অন্যদিকে, অন্য কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহের আরও নতুন উপায় অনুসন্ধান করছে।
এ বছর জানুয়ারিতে গুগল জানায়, তারা ক্রোম ব্রাউজারে থার্ড পার্টি কুকিজ সংগ্রহের ব্যবস্থা বন্ধ করবে। ফলে বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ কঠিন হবে। কুকিজের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা ব্যবহারকারীদের কেনাকাটা, ব্রাউজিং ও সার্চ হিস্ট্রির তথ্য নিয়ে প্রতিটি ব্যক্তির স্বতন্ত্র প্রোফাইল তৈরি করে। ব্যক্তির রাজনৈতিক চিন্তা, স্বাস্থ্য, কেনাকাটার ধরন, লিঙ্গ, জাতীয়তাসহ বিবিধ তথ্য এই প্রোফাইলের অন্তর্ভুক্ত।
তবে গুগল নিজেদের সার্চ ইঞ্জিন এবং ইউটিউব ও জিমেইলের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ বজায় রাখবে।
অন্যদিকে, অ্যাপল জানায়, আইওএসের পরবর্তী ভার্সনে, বিভিন্ন পরিষেবায় কুকি ট্র্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহারকারীদের জানিয়ে অনুমতি নেওয়া হবে। তবে ফেসবুকের অভিযোগের কারণে এটি কার্যকর করার সময় আগামী বছর পর্যন্ত পিছিয়েছে।
জুনে অনুষ্ঠিত একটি পোলের ফলাফলে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা এ ধরনের ট্র্যাকিংয়ের অনুমতি দেবেন না।
এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে, ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে চলা মধ্যসত্ত্বভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা চাপের মুখে পড়বে।
অ্যাপ বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কোচাভার প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা চার্লস ম্যানিং বলেন, ফার্স্ট পার্টি কুকিজ সংগ্রহকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এই সিদ্ধান্তের তেমন প্রভাব পড়বে না।
ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে শ্রেণিবদ্ধ করার নতুন উপায় খুঁজছে কোম্পানিগুলো। ফোনের সিগন্যালের মাধ্যমেই এ কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নাম্বারএইটের সহপ্রতিষ্ঠাতা অভিষেক সেন বলেন, 'অ্যাপলের ঘোষণার মাধ্যমে আমরা কুকিজ ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতা এবং ব্যবহারকারীরা নিজস্ব গোপনীয়তার ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছে দেখতে পাই। নাম্বারএইট মূলত স্মার্টফোনের সেন্সরের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন অবস্থার তথ্য দিয়ে থাকে বিভিন্ন অ্যাপকে।'
বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই ব্যবহারকারীর গতিবিধির তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা আছে। অভিষেক সেন ইতোপূর্বে ব্ল্যাকবেরি ও অ্যাপলে সেন্সর নিয়ে কাজ করেছেন। লন্ডনের অধিবাসীদের যাতায়াতে বাস ও ট্রেন ভাড়া ব্যাপারে সেন্সর তথ্য সংগ্রহ করেন একটি গবেষণার কাজে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাড়া নেওয়ার জন্য যাত্রীদের বাস বা ট্রেন থেকে নামার তথ্য নেন সেন্সরের মাধ্যমে। তবে সীমাবদ্ধতার কারণে অ্যাপটি পরবর্তীকালে অন্য পরিষেবা নিয়ে কাজ করে।
নাম্বারএইট, সেন্টিয়ান্স বা নেউরার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের শ্রেণিবদ্ধকরণ করতে সেন্সর তথ্য সংগ্রহ করে। নির্দিষ্ট প্রোফাইল তৈরি করার পরিবর্তে তারা ব্যবহারকারীদের আলাদা বৈশিষ্ট্য ভেদে শ্রেণিবিভক্ত করে। তবে ক্রেতারা কিভাবে এই তথ্য ব্যবহার করবেন, এ ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে বলে জানান সেন।
গেমিং অ্যাপ, মিউজিক অ্যাপ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিষেবা নিতে পারবে নাম্বারএইট থেকে। এই তথ্য অ্যাপগুলোকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত চাহিদা অনুসারে তাদের অ্যাপের পরিষেবা সাজাতে সাহায্য করে।
তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান সীমাবদ্ধতার ফলে ব্যক্তির স্বতন্ত্র প্রোফাইল নির্মাণ কঠিন হয়ে যাওয়ায় আচরণ ও ব্যবহারগত বৈশিষ্ট্যের শ্রেণিবদ্ধ তথ্যই সামনের দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন অভিষেক সেন।
বিভিন্ন অ্যাপে ব্যবহারকারীদের কার্যক্রম এবং তারা সে মুহূর্তে কী করছেন- এই তথ্য নিয়ে কাজ করবে এই পদ্ধতি। তিনি বলেন, 'ব্র্যান্ডগুলো সবসময় তাদের কাজের জন্য ব্যবহারকারীদের পছন্দ, অগ্রাধিকারের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করে আসছে। তবে আমি মনে করি, এ কাজে তা জানার কোনো প্রয়োজন নেই। পণ্য সঠিক ব্যক্তি খুঁজে পাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করাই যথেষ্ট।'
কোচাভার সিইও ম্যানিং জানান, অ্যাপলের এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক অ্যাপ শিগগিরই তাদের তথ্য সংগ্রহের পুরনো ব্যবস্থা বন্ধ করতে বাধ্য হবে। তথ্য সংগ্রহের বদলে ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করছে এমন বার্তা তারা দিতে পারে।
ব্যবহারকারীরা তাদের স্মার্টফোনে এবং অ্যাপের ভেতর কী করছেন- তা ট্র্যাক করতে অ্যাপগুলোকে বাধা দেবে না গুগল কিংবা অ্যাপল। এই খাতের ভবিষ্যতের তথ্য হবে আরও নামহীন; তবে আরও কম গোপনীয়।
- সূত্র: উইয়ার্ড ডটকম