শিল্পজগতে ৭ বছরের 'পিকাসো’র ঝড়
বয়স মাত্র ৭ বছর। কিন্তু এ বয়সেই শিল্পজগতে সুপরিচিত নাম মিকাইল আকার। তার আঁকা চিত্রকর্ম হাজার হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। জগদ্বিখ্যাত শিল্পী পাবলো পিকাসোর সঙ্গে তুলনা করে খুদে এই চিত্রকরকে ডাকা হচ্ছে 'প্রিস্কুল পিকাসো' নামে।
ডেইলি মেইলের বরাত দিয়ে অডিটি সেন্ট্রাল ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিকাইলের জন্ম জার্মানিতে। তিন বছর আগে আকস্মিকভাবে তার প্রতিভা উন্মোচিত হয় মা-বাবার কাছে।
তারা মিকাইলকে একটি ক্যানভাস ও হাতের ছাপওয়ালা রং কিনে দেন। সে উপকরণগুলোকে সম্বল করেই প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটায় শিশুটি।
এর আগে মিকাইলকে বেশ কিছু খেলনা কিনে দিয়েছিলেন তার মা-বাবা। সন্তানের কাছ থেকে ভিন্ন কিছু আশা করছিলেন তারা। কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে, সে অসাধারণ শিল্পকর্ম উপহার দেবে।
প্রথম পাওয়া ক্যানভাসে মিকাইল এমন ছবি আঁকে, যা দেখে তার বাবা কেরেম আকার ভেবেছিলেন, এটি হয়তো শিশুটির মা এঁকেছেন। এ বিষয়ে তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, "প্রথম ছবিটি চমৎকার ছিল এবং আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, আমার স্ত্রী এটি এঁকেছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করেছিলাম, এটি নিছক কাকতালীয়; কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছবিতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সে (মিকাইল) প্রতিভাধর।"
গত মাসে জার্মানির বার্লিনে একটি ব্যক্তিগত গ্যালারিতে খুদে শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে মিকাইলের ছবি স্থান পায়।
মিকাইল স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেনে একজন দর্শনার্থী রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানান।
তিনি জানান, ছবির ভারসাম্য ও সঙ্গতি মাত্র সাত বছর বয়সী একজন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
মিকাইলের পারদর্শিতা বিমূর্ত চিত্রকলায়। সে এরই মধ্যে একটি আদি কৌশল রপ্ত করেছে। সে বাবার বক্সিং গ্লাভস পরে ক্যানভাসে ঘুষি দেয়।
শিল্প সমালোচকদের মতে, খুব বেশি চাপাচাপি না করলে শিল্পজগতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ মিকাইলের। তবে মিকাইল সে পথে হাঁটতে চায় না।
জীবনের লক্ষ্য নিয়ে সে বলে, "পরিণত বয়সে আমি ফুটবল খেলোয়াড় হতে চাই। আঁকাআঁকি আমার জন্য ক্লান্তিকর। কখনো কখনো এতে দীর্ঘসময় লাগতে পারে, বিশেষত বক্সিং গ্লাভস ব্যবহারের সময়।"
অভিভাবকদের ভাষ্য, তারা মিকাইলকে চাপাচাপি না করার বিষয়ে সতর্ক। তারা জানান, সে তার ইচ্ছামতো আঁকে; কখনো সপ্তাহে একটা, আবার কখনো প্রতি মাসে একটা।
তবে মিকাইলের আঁকাআঁকি এরই মধ্যে ভাগ্য বদলে দিয়েছে তার মা-বাবার। এখন তারা 'শিল্পের জন্য বাঁচেন'।
শিশুটির বাবা কেরেম বিক্রয়কর্মী ও নিয়োগকর্তা ছিলেন। এখন সার্বক্ষণিক মিকাইলের দেখভাল করছেন তিনি। ছেলের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য একটি সংস্থাও খুলেছেন তিনি।
বায়ার্ন মিউনিখের গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়েরের উদ্যোগে আয়োজিত 'মানুস ১১' নামের প্রদর্শনীতে মিকাইলের বেশ কিছু ছবি স্থান পেয়েছে। তার আঁকা একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার ডলারে। ছবি থেকে আয়ের অর্থ যাচ্ছে শিশুদের জন্য গড়া ন্যুয়েরের দাতব্য সংস্থায়।