শিক্ষাভবনের নকশায় বিজ্ঞান ও নান্দনিকতার অপূর্ব ছোঁয়া!
'কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিজাইনের ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম। কারণ এখানে দুটো বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। এক হলো, উদ্দীপনাময় তরুণদের নিয়ে, নতুন ভাবে যারা জীবনটকে আবিষ্কার করতে যাচ্ছে। আরেক হলো, শিক্ষার পরিবেশ হিসেবে স্থানটির পবিত্রতা ধরে রাখা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানে জ্ঞানচর্চার জায়গা, ধ্যানের জায়গা। এর একদিক হচ্ছে চঞ্চল, আরেক দিক হচ্ছে ধীর-স্থির। এ দুটো দিককে একটি বিন্দুতে মেলাতে হয় আমাদের,' বলছিলেন আগা খান পুরষ্কারপ্রাপ্ত স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ রোডে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর স্থায়ী ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন নতুন ভবনটি তারই নকশায় তৈরি।
বাংলাদেশে নানা প্রান্তে কাশেফ চৌধুরীর নকশা করা স্থাপত্যগুলো প্রশংসিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে। গাইবান্ধার ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের নকশার জন্য ২০১৬ সালে তিনি পেয়ছেন স্থাপত্যবিদ্যার সম্মানজনক পুরষ্কার আগা খান অ্যাওয়ার্ড। ২০২১ সালে সাতক্ষীরায় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নকশার জন্য পান যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) অ্যাওয়ার্ড। বিশ্বনন্দিত এ স্থপতি তার প্রতিটি নকশাকে আলাদা করে তৈরি করলেও একটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন সব জায়গায়। তা হলো জলবায়ু সংবেদনশীলতা। তার সকল প্রজেক্টই যেন জলবায়ু সংবেদনশীল হয়, তা সবসময় চিন্তায় রেখেছেন তিনি।
কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও তার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানা ইউল্যাবের ভবন নকশার দায়িত্ব পান ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালে শুরু হয় ভবনটির নির্মাণকাজ, যা শেষ হয় ২০২০-এর শুরুতে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরই নানা মহলে বেশ প্রশংসিত হয় ভবনটির নকশা।
ইউল্যাবের নতুন ভবনের নকশা নিয়ে সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে আলোচনা করেছেন কাশেফ চৌধুরী।
ভবনে চেয়েছিলেন প্রাণ
কাশেফ চৌধুরীর ভাষ্যে, 'বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা তো মূলত পুস্তকভিত্তিক না। এখানে অনেক আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়। তো এখানে শুধু ক্লাসরুমটাই সব নয়, অনেকাংশেই ক্লাসরুমের বাইরের জায়গাগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে — যেখানে শিক্ষার্থীরা কথা বলছে, তর্ক করছে, আড্ডা দিচ্ছে। আমরা অনেকসময় ভাবি এই আড্ডাটা কোনো কাজের না। আমাদের দেশের অন্যতম লেখক হুমায়ূন আহমেদ কিন্তু গড়ে উঠেছিলেন আড্ডার মাধ্যমে, ফ্রেঞ্চ আর্টে ইম্প্রেশননিজমের শুরুও এই আড্ডার মাধ্যমে। তাই ক্লাসরুমের বাইরের আড্ডা আর মিথষ্ক্রিয়া কোনোভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর জন্য একটা উর্বর জায়গা তৈরি করা দরকার।'
তার দলকে মূলত দুটি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন তিনি। প্রথমত, প্রজেক্টে যেন প্রাণ থাকে। মানুষ এর ভেতরে কী কাজকর্ম করবে তা মাথায় রেখেই যেন করা হয় নকশা।
সেজন্য ক্লাসরুমগুলো খুব ভালোভাবে সাজাতে চেয়েছেন তারা। শিক্ষক থেকে কোনো শিক্ষার্থীই যেন খুব বেশি দূরে না থাকে, তার চেষ্টা করে ক্লাসরুমের নকশা করেছেন। আমাদের দেশে ক্লাসরুমগুলো সাধারণত লম্বাটে হয়। এতে পেছনের দিকে বসা শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের দূরত্ব থাকে অনেক বেশি। কাশেফ মাহবুব ক্লাসের দৈর্ঘ্য কমিয়ে প্রস্থ বাড়াতে চেয়েছেন। যেন ব্ল্যাকবোর্ড বা শিক্ষককে ঘিরে সবাই কাছাকাছি বসতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ক্লাসরুমের বাইরের জায়গাটাকে ঠিকভাবে সাজানো। কাশেফ চৌধুরীর ভাষ্যে, 'ছোট্ট কোনো করিডোর দিলাম, সেই করিডোরে চলাচল করতে গিয়ে মানুষ একজন আরেকজনের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে, জায়গাটাও অন্ধকার — এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে মানুষ কী জ্ঞানের আদান-প্রদান করবে! সেজন্য করিডোরটাকে শুধু করিডোর রাখলাম না, এর মাধ্যমে পুরো বিল্ডিংটা খুলতে থাকল ফুলের মতো। বিন্ডিংয়ের ব্লকগুলো সব একসঙ্গে ছিল শুরুতে। চওড়া করিডোর দিয়ে সেটাকে ছড়িয়ে দিলাম। মাঝখানে ফাঁকা জায়গা হওয়ায় নানা জায়গা থেকে আলো আসতে শুরু করল। শুরু হলো বাতাসের খেলা।
'আমাদের দেশে বাতাস মূলত দক্ষিণ দিক থেকে আসে। কিন্তু দক্ষিণ দিক থেকে ঢুকে বাতাস যদি পূর্ব, পশ্চিম বা উত্তর দিক দিয়ে না বের হয়, তাহলে কিন্তু বিল্ডিংয়ের ভেতরে বাতাসের চলাচল থাকবে না। আমরা সেই ব্যবস্থাটাই করেছি যেন বাতাস ঢুকে আবার ভালোভাবে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। টানেল ইফেক্ট বলি আমরা এটাকে। যেকোনো টানেলের মতো চিকন জায়গার ভেতরে গেলে দেখা যায় বাতাস বইছে অনেক। উঁচু-উঁচু বিল্ডিংয়ের ফাঁক দিয়েও অনেক বাতাস বয়, এই টানেল ইফেক্টের কারণে। সেটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি আমরা ইউল্যাবের বিল্ডিংয়ের নকশায়।'
করিডোরের ভেতর বাতাসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। তিনতলার করিডোরের ওপর ছাদ থেকে ঝুলছে আইভি লতার গাছ। গাছের ফাঁক দিয়ে ঢুকছে আলো। সেখানেই কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফয়সালের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বর্ষকালে আরও বেশি সবুজ থাকে ক্যাম্পাসের চারপাশ। ক্লাসের বাইরে বেরোলেই আমরা প্রকৃতির কাছাকাছি চলে আসি। ওপরের কাচ দিয়ে বৃষ্টির পড়ার দৃশ্য দেখা আর এখানে বৃষ্টির শব্দ শোনা আমার ক্যাম্পাস জীবনের অন্যতম প্রিয় মুহূর্ত।'
ভবনের ভেতর থেকেই শিক্ষার্থীরা দেখতে পান সামনের খোলা মাঠ আর পেছনের লেক। সিঁড়িগুলোও বেশ প্রশস্ত। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেও যেন ছাত্র-শিক্ষকদের আলাপচারিতা চলতে পারে সে চিন্তা ছিল স্থপতির মাথায়। কাশেফ চৌধুরী বলেন, 'আজকে যে শিক্ষার্থী, তার ভবিষ্যতের বড় কোনো আবিষ্কারের বা কাজের অণু-পরমাণু কিন্তু আজকের এই কথাবার্তার মধ্যে তৈরি হচ্ছে। যার জন্যে এই জায়গাগুলোর ওপর আমরা অসম্ভব নজর দিয়েছি।'
ভবনটির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে স্থপতি সাজিয়েছেন এর মাঝের জায়গাটিকে। শিক্ষার্থীরা যেন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পুরো ভবনের সবগুলো ফ্লোর দেখতে পায় সেই ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ওপরে দেওয়া আছে কাচের ছাদ, যার মাধ্যমে সারাক্ষণ আলোকিত থাকে জায়গাটি। শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, 'মাঝের এই স্থানটুকু ছবি তোলার জন্য আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা।'
স্থাপনাটির তিনতলায় প্রতিটি ফ্লোরে আছে প্রায় ১০টি করে কক্ষ। ছাদের ওপর আলাদা করে বানানো হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলরের অফিস। সামনেই খোলা জায়গা জুড়ে বিছানো ঘাসের বাগিচা। শিক্ষার্থীদের কোলাহল থেকে গুরুগম্ভীর পরিবেশকে দূরে রাখতেই এই ব্যবস্থা। শিক্ষকদের কক্ষগুলোকেও রাখা হয়েছে প্রতিটি ব্লকের সবচেয়ে ওপরের ফ্লোরে।
জলবায়ু সংবেদনশীল ভবন
কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর সকল স্থাপনার মতো ইউল্যাব ভবনের নকশাতেও যুক্ত ছিল জলবায়ু সংবেদনশীলতার ভাবনা। তিনি মনে করেন, জলবায়ু সংবেদনশীল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই আমাদের। তার ভাষ্যে, 'আমাদের দেশের জলবায়ু খুব নিরপেক্ষ নয়। আমাদের জলবায়ু কথা বলে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আমরা টের পাচ্ছি, এ পরিবর্তনের জন্য আমরাই দায়ী। শুরুতে আমরা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছি, এরপর সেটা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এয়ারকন্ডিশনসহ নানান ব্যবয়বহুল পদ্ধতি ব্যবহার করছি। সেগুলো তো কোনো সমাধান না। এখন যদি আমরা জলবায়ু নিয়ে কাজ না করি তাহলে প্রকৃতপক্ষে আমরা আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের সচেতন হতেই হবে। এটাকে ঐচ্ছিক ব্যাপার হিসেবে নেওয়ার সুযোগ নেই।'
ভবনকে জলবায়ু সংবেদনশীল করে তুলতে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন এর ভেতরের তাপমাত্র কামানোয়। ক্লাসরুমগুলোর জানলা বেশ বড় বড়। যদিও কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী সবগুলো কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে। তবে শীতকালে এয়ারকন্ডিশন বন্ধ রেখে জানলা খোলা রাখলেও বেশ ঠান্ডা থাকে ভেতরের পরিবেশ। জানলার কাচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে 'ডাবল গ্লেইজিং গ্লাস'। এই কাচে আছে দুইটি স্তর। আর মাঝে ফাঁকা অংশ থাকার কারণে ভেতরে খুব একটা তাপ ঢুকতে পারে না। ছাদে ঘাস বসিয়েও অতিরিক্ত তাপ কমানোর চেষ্টা করেছেন তারা।
ভবনের ভেতরে আলো ঢোকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে প্রতিফলনের মাধ্যমে। বিভিন্ন ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢোকে সূর্যের আলো। সরাসরি চোখ ধাঁধানো আলো ঢোকার ব্যবস্থা নেই করিডোরে, এতে তাপ থেকে সুরক্ষা পায় করিডোর। বৃষ্টির ছাট কিছু কিছু জায়গায় আসলেও সরাসরি যেন না ঢুকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে।
ভবন বানানোর সরঞ্জামে প্রাধান্য পেয়েছে সিরামিক ইট। কাশেফ মাহবুবের ভাষ্যে, "ফ্যাক্টরিতে তৈরি পরিবেশ দূষণমুক্ত ইট এগুলো। ফ্যাক্টরির ভেতরে আবদ্ধ জায়গায় পোড়ানো হয় বলে এর কারণে বায়ু দূষণ হয় না। আমাদের স্থাপত্যের একটা ঐতিহ্যবাহী অংশ হলো ইট। ২৩০০ বছর পুরোনো মহাস্থানাগরেও ব্যবহৃত হয়েছিল ইট। আমাদের জলবায়ুর সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণও এই ইট। এটা 'থার্মাল মাস' হিসেবে কাজ করে। দিনের বেলায় বাইরের তাপটাকে নেয়, আবার শীতকালে তাপকে আটকে রেখে ভেতরের পরিবেশটা আরামদায়ক রাখে। বাইরের চারদিকেই 'ক্যাভিটি ওয়াল' দিয়েছি আমরা। মানে ডাবল ওয়াল। এক দেওয়াল থেকে তাপ ঢুকে মাঝখানে বাতাস থাকায় ভেতরে দেওয়ালটা পর্যন্ত তাপটা সরাসরি আসে না। যেকারণে গরমের দিনে রুমের ভেতর অনেকটাই ঠান্ডা থাকে।"
এসব কৌশলগত পদক্ষেপের কারণে ভবনের ভেতরের তাপমাত্রা অনেকটাই কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছেন আরবানা'র দল। যে কারণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো সম্ভব হচ্ছে অনেকটাই।
বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী বর্ষার কথা চিন্তা করেও লাল ইট ব্যবহৃত হয়েছে ইউল্যাবের এই নতুন বিল্ডিংয়ে। বৃষ্টির কারণে ভবনের সাধারণ রং সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছর রং করা বেশ ব্যয়বহুল। ইটের সুবিধা হলো দীর্ঘ দিনেও এর রংয়ের হেরফের হয় না। বৃষ্টিতে ভিজেও রং আরও লালচে আর উজ্জ্বল সুন্দর হয়ে যায়।
আলোকসজ্জা
ইউল্যাবের নতুন ভবনের আলোকসজ্জা এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রিয়। সন্ধ্যায় যখন আলোকিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস তখন অবতারণা হয় এক অপূর্ব দৃশ্যের। আলোকসজ্জা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্থপতি বলেন, 'অনেকেই ভবনের লাইটিংটাকে ছোট করে দেখে। কিন্তু আমি আমার সব স্থাপনাতেই এই বিষয়টা প্রাধান্য দেই। কারণ লাইটিং ভালো না হলে ভবন তার প্রাণ হারাবে। ইউল্যাব কর্তৃপক্ষও শুরুতে লাইটিং-এ খুব একটা নজর দিতে চাননি। কিন্তু আমিই জোর দিয়ে জায়গাভেদে উপযোগী লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি। সন্ধ্যার পরও যখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সময় কাটাবে, তখন যেন তাদের উদ্দীপনা নষ্ট না হয় সে খেয়াল রেখেছি।'
স্থপতির প্রিয়
জানতে চেয়েছিলাম ইউল্যাবের নতুন ভবনের নকশায় স্থপতি কাশেফ চৌধুরীর প্রিয় অংশ কোনটি। তিনি বললেন, 'বিল্ডিংটা যে একটা দৈত্য-দানবের মতো এসে শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে না, এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় অংশ। বিল্ডিংটা একটা ব্লকে বানানো না। অনেকগুলো ব্লকে টুকরো টুকরো করে সাজানো। ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আছে এটা। যার জন্য এটা একটা আমন্ত্রণের মতো। ছাত্রদের আহ্বান করে ভেতরে আসার। আমাদের দেশের সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় বিল্ডিংগুলো আমি বেশি পছন্দ করি না। সেগুলো হয় বেশি উঁচু, নাহয় বেশি লম্বা। দেখে মনে হয় নির্ভেদ, দেওয়ালের মতো বাধা দেয় কাছে যেতে। ইউল্যাবের এই বিল্ডিংটা কিন্তু খুব উঁচুও না। একটা সাধারণ গাছের লেভেলে রেখেছি এটাকে আমরা। যেন বাইরে থেকে দেখে কোনো দানবের মতো মনে না হয়।'
ভবনটিতে একটি মাত্র লিফট আছে বয়স্ক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য। এর নির্মাণ স্থাপত্য ব্যবহারকারীদের উদ্বুদ্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামায়।
ইউল্যাব ক্যাম্পাসের নতুন বিল্ডিংয়ের পুরো নকশাটিই ছিল শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। কাশেফ মাহবুব চৌধুরী চেয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবেই ভবনটিকে গড়ে তুলতে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা যত বেশি হবে, তাদের সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হবে তত বেশি। ভবনের নকশা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টি থেকে ধরে নেয়া যায় স্থপতি হিসেবে কাশেফ চৌধুরীর পরিকল্পনা বেশ কার্যকরীই ছিল।