'আমরা দিন গুনছিলাম...' আল-কায়েদার হাতে বন্দীদশা নিয়ে সুফিউল আনাম
আগস্টের শুরুতে যখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) একেএম সুফিউল আনামকে তার অপহরণকারীরা জানালো, তিনি এবং তার সঙ্গীরা মুক্তি পেতে চলেছেন এবং তাদেরকে 'মধ্যস্ততাকারীর' বাড়িতে নেওয়া হবে তখন বিষয়টি তারা পুরোপুরি বিশ্বাস করেননি।
তার কারণ সুফিউল এবং জিম্মি থাকা তার চার ইয়েমেনি সহকর্মীকে একই কথা এর আগেও কয়েকবার বলেছিলেন অপহরণকারী আল কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখার কর্মীরা (একিউএপি)। ফলে তারা নিরাশ হয়ে পড়েছিলেন।
'তবে যখন তারা আমাদের জিনিসপত্র রেখে যেতে বলে তখন আশান্বিত হয়েছিলাম।' ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে নিজের বাসায় বসে দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকালে সুফিউল সেসময়ের কথা এভাবে স্মরণ করছিলেন।
সুফিউল ও তার সহকর্মীদের (মুক্তির সময়) একটি গাড়িতে ওঠানো হয়। এমন রাস্তা দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, যা তারা আগে দেখেননি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বাড়িতে নিয়ে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখানের এক লোক বলেন, 'তোমরা নিজেদের মুক্ত বলে ভাবতে পারো।'
সেই বাড়িতে গিয়ে আরো আশাবাদী হলেন সুফিউল। তবে একই সঙ্গে কিছু দ্বিধার মধ্যেও পড়েন। কারণ ১৮ মাস আগে একটি অস্থায়ী চেকপোস্ট থেকে অপহরণের পর অনেক কিছুই ঘটে গেছে।
তিনদিন পর তাদেরকে মধ্যস্ততাকারীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হস্তান্তর করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এর মাধ্যমেই শেষ হয় মুক্তির অপেক্ষা।
সুফিউলকে প্রথমে নিয়ে আসা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আবুধাবির একটি হোটেল রুমে প্রথমবার বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধি তার সঙ্গে দেখা করেন।
দিনটি ছিল ৮ আগস্ট। সুফিউল বলেন, সেই এসএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স) কর্মকর্তা আমাকে বাড়িতে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। আমি আমার স্ত্রীকে প্রথম কলটি করি।
সুফিউলের ছেলে সাকিফ বলেন, আমি পাশের ঘর থেকে একটি চিৎকার শুনতে পেলাম। মাকে একই সঙ্গে প্রলাপ বকা অবস্থায়, আনন্দ এবং স্বস্তির মধ্যে দেখতে পান সাকিফ। ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অপহরণের কথা জানার পর থেকে তিনি এই কলের অপেক্ষাতেই দিন কাটিয়েছেন।
অপহরণের পর প্রথমবার স্বামীর কণ্ঠস্বর শুনার প্রসঙ্গে কাজী নাসরিন আনাম বলেন, 'তখন আমি কী অনুভব করেছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।' সুফিউল বলেন, 'সে কাঁদছিল।'
অপহরণের সময় সুফিউল ইয়েমেনের এডেনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ফিল্ড সিকিউরিটি কো-অর্ডিনেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন সুফিউল। এরপর থেকে তিনি জাতিসংঘে কাজ করছেন।
২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া একটি 'বহুপাক্ষিক' গৃহযুদ্ধের ফলে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেনের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। উপজাতীয় নেতা, জোট বাহিনী, হুতি বিদ্রোহী এবং ইয়েমেনের সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে আল কায়েদা এবং আইএসআইএস পর্যন্ত যুদ্ধ করছে। সেখানে অপহরণ এবং উদ্ধার অভিযান একটি নিত্য ঘটনা হয়ে ওঠে।
সুফিউল এবং তার দল নিরাপত্তা মূল্যায়নের জন্য আবিয়ানে যায়। যাতে সেই প্রদেশে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়।
সুফিউল বলেন, আমিই প্রথম অপহরণের শিকার হয়েছি।
আল কায়েদার হাতে বন্দী
১৮ মাসের বন্দীদশায়, সুফিউল এবং তার চার সহকর্মীকে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সুফিউল ব্যাখ্যা করে বলেন, আমরা সেগুলোকে শেল্টার রুম বা আশ্রয় কক্ষ বলতাম। আলাদা আলাদা বৈশিষ্টের ভিত্তিতে আমরা সেগুলোর পৃথক পৃথক নামকরণ করেছিলাম।
প্রথম শেল্টার রুমের নাম তারা দিয়েছিলেন রুস্টার। বাকি নামগুলো ছিল, টোকিও (প্রতিদিন সকালে সেখানে একটি পাখি ডাকত। শুনে মনে হতো পাখিটি বলছে, লেটস গো টোকিও। স্করপিয়ন তথা বিচ্ছু (সেখানের বিছানায় বিচ্ছু পাওয়া গিয়েছিল)। কোবরা (কোবরা সাপের দেখা মেলে)। একই কারণে আরেক শেল্টার হোমের নাম দেওয়া হয় লিজার্ড। টেন্ট তথা তাঁবু (যখন তাদের মরুভূমিতে রাখা হয়েছিল)। শেরাটন (সবচেয়ে বিলাসবহুল সাই, কারো বাড়ি) এবং সর্বশেষ রিগ (মধ্যস্ততাকারীর বাড়ি)।
জিম্মিদের এক শেল্টার রুম থেকে আরেকটিতে নিয়ে যাওয়া হত। কোনো কোনটিতে তারা দীর্ঘ সময়ও কাটিয়েছে। রুস্টারে তাদের রাখা হায় সাড়ে তিন মাসের মতো। যে কক্ষে কেবল ছোট একটি ছিদ্র ছিল। যেটা দিয়ে আলো আসতো। প্রথমে এক তাঁবুতে রাখা হয় প্রায় ৭ সপ্তাহ, তারপর আবার আরেক তাঁবুতে রাখা হয় প্রায় ৮-৯ মাস। শেরাটনে তারা ছিলেন প্রায় দুই মাস এবং দেড় মাস ছিলেন লিজার্ডে।
পুরো যাত্রায় তাঁবুতে থাকাই জিম্মিদের কাছে সবচেয়ে কষ্টকর ছিল বলে জানান সুফিউল। আর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় তাদের চোখ বেঁধে রাখা হতো।
গত বছরের ঈদুল আজহার সময় সুফিউলদের প্রথম তাঁবুতে অর্থাৎ মরুভূমিতে নিয়ে আসা হয়। ততদিনে জিম্মিদের রাখার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংকট দেখা দেয় অপহরণকারীদের। সুফিউল সে সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের তিনজনের জন্যি একটি ডিম, পোড়া রুটি এবং এক টুকরো মাংস দেওয়া হয়েছিল।
তাও এমন সময় খাদ্য ঘাটতি চলছিল যখন তারা মরুভূমির তাঁবুতে বন্দী। সুফিউল বলেন, বালিঝড় ছিল সেখানে থাকাকালীন সবচেয়ে কষ্টকর মুহুর্ত। প্রতিদিন প্রায় ২-৩ বার ঝড় হতো। একটি পানির কল পুরো গতিতে ছেড়ে রাখলে যেমন অবস্থা হয়, বালঝড়েও তেমনটা লাগে।
তিনি আরো বলেন, প্রচণ্ড গরম পড়ত, জায়গা ছিল ছোট। আমরা পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে থাকতাম। বুকে কাপড় থাকতো না। আর কেবল প্রার্থনা করতে থাকতাম।
তবে এর আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। সুফিউল বলেন, অপহরকারীরা জিম্মিদের প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করছিল। আমরা যা চাইতাম যেমন দাবাবোর্ড, জায়নামাজ, ইলেকট্রনিক ট্যাব (ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া), ফল, চা ইত্যাদি সবই দেওয়া হতো। তারা জানায়, তহবিল যতদিন থাকবে ততদিন এসব সরবরাহ চলতে থাকবে।
সুফিউল বলেন, তারা ভাল আচরণ করেছিল। তারা আমাদের বলেছিল যে তারা আমাদের হত্যা করবে না। তারা আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে বলতো। জানাতো যে, আমাদের মুক্তির জন্য আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, আমরা দিন গুনতাম। সব সময় তালাবদ্ধ থাকলেও বলা যায় স্বাভাবিক অবস্থাতেই ছিলাম।
সুফিউল ও তার সহকর্মীরা অপহরণকারীদের বিভিন্ন নাম দিয়েছিলেন। যেমন মিস্টার নাইস, সিআইডি (যিনি তাদের প্রশ্ন করেছিলেন), সিকিউরিটি, রোমিও (যে যুবক তাদের খাবার পরিবেশন করেছিল), মিস্টার নাইস ২, ড্রাইভার, মিস্টার স্মার্ট (যে বৈদ্যুতিক বাতি ঠিক করত)। সেখানে একজন অভদ্র ড্রাইভারও ছিল, যার নাম তারা রেখেছিল আরডি।
সুফিউল লক্ষ্য করেছিলেন, কিছু কিছু সময় অপহরণকারীরা হতাশ হয়ে পড়তো। আলাপ- আলোচনা তাদের মন মতো এগুতো না। এ কারণে তারা পর্যায়ক্রমে তহবিল সংকটে পড়ে আর জিম্মিদের মাঝারি স্বাস্থ্যে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে।
সুফিউল জানান, আল-কায়েদা কর্তৃক প্রকাশিত তাদের প্রথম ভিডিও শুট করা হয় গত বছরের আগস্টে। তাদেরকে একটি স্ক্রিপ্ট দিয়ে পড়তে বলা হয়। সুফিউল বলেন, আমরা জানতাম না এই ভিডিওগুলি কাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম ভিডিওটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল। এসআইটিএ ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ তা যাচাই করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে টিবিএস একই মাসে সুফিউলকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
শেরাটনে পায় দুই মাস অবস্থান করেন সুফিউলরা। এসময়টা ছিল তাদের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক। তিনি বলেন, আমার মনে আছে টেলিভিশনে রাণীর মৃত্যু, ঋষি সুনাকের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবর এবং বিশ্বকাপ ফুটবলের খবর দেখেছি। আমি বাংলাদেশের খবর খুঁজছিলাম কিন্তু কোনো খবর পাইনি। আমার সহকর্মীরা ইয়েমেনের খবর দেখেছে।
গত বছরের নভেম্বরে তাদেরকে আবারো চিত্রায়িত করা হয়। অপহরণকারীরা তখন জানায়, বেঁচে থাকার প্রমাণ স্বরুপ এটি পাঠানো হবে। এভাবে কয়েকবারই তাদের ভিডিও নেওয়া হয়। আর প্রতিবারই সুফিউলের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হতো। কারণ তিনি জানতেন, জিম্মিদের মুক্তির ক্ষেত্রে আলোচনায় বারবার বেঁচে থাকার প্রমাণ চায় জাতিসংঘ।
২০২২ সালের ১৪ নভেস্বর সুফিউল ও তার সহকর্মীদের আবার তাঁবুতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমরা আবার একত্রিত হই (অপহরণকারীরা পাঁচ জিম্মিকে কয়েকবার আলাদা করে আবার একসাথ করে)।
সুফিউল বলেন, আমি দেখেছি আমার সহকর্মীদের পায়ের গোড়ালি বেঁধে রাখা হয়েছিল। সেগুলো যুক্ত ছিল বিস্ফোরকের সাথে। দূর থেকে সেগুলো বিস্ফোরিত করা যায়।
সুফিউলকেও পরে এভাবে গোড়ালিতে চেইন লাগানো হয়। সেখানে তাদের ৮-৯ মাস রাখা হয়। এক জায়গায় এরচেয়ে বেশিদিন তারা কোথাও অবস্থান করেননি।
সুফিউল বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল রমজানের আগে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর বলা হলো ঈদের আগে। তারপর বলা হলো ঈদুল আজহার আগে। কিন্তু মুক্তি আর আসেনি।
তারা একই সাথে উত্তেজনা আর হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। অপহরণকারীরাই এক সময় তাদের ধৈর্য্য ধরার কথা বলে যাচ্ছিল।
সুফিউল বলেন, আমরা ভয় পেয়েছিলাম।
১৮ মাস অপহরণকারীরা মুখোশ পরে ছিলেন। সুফিউল বলেন, আমরা কেবল তাদের চোখ দেখতে পেতাম।
অপহরণ
সুফিউল বলেন, আমার মনে আছে আমাদের কনভয় একটি অস্থায়ী চেকপোস্টে থামে। আমরা আবিয়ান থেকে ফিরছিলাম। আমার ড্রাইভার বলেছিল সামনে কিছু হচ্ছে। আমি আমার ফোনে জিপিএস দেখছিলাম। তারপর আমি আমাদের লোকদের গাড়ি থেকে নামতে দেখলাম (কনভয়ের নেতৃত্বে থাকা সামনের গাড়ি থেকে)। এট ছিল একটি সাঁজোয়া যান। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী হচ্ছে। কেন তারা নিচে নামবে?
আর তখনই দুই যুবক আমার গাড়ির জানালায় উঠে আসে। ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি পরা একজন যুবক আমাকে নামতে বলেছিল। আমি দৃঢ়ভাবে বললাম, না। তখনই সে আমাকে একটি গ্রেনেড দেখাল এবং আমার চোখের সামনে তা ঝুলিয়ে রাখল- আমি না মানলে সে আমাদের গাড়ির ভিতরে ছুঁড়ে ফেলবে।
সুফিউল লক্ষ্য করলেন, প্রায় ১২ জনের একটি দল তাদের ঘিরে রেখেছে। ৩-৪ জন কনভয়ের গাড়ি থেকে লোক নামাচ্ছে। মোট পাঁচজনকে শেষ পর্যন্ত বন্দী করা হয়। সুফিউলকে প্রথমে একটি পিক-আপে তোলা হয়।
সুফিউল বলেন, একটি ফাঁকা গুলি চালানো হয়েছিল, যাতে তার অন্যান্য সহকর্মীরা মনে করে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
অল্প সময় চলার পর সুফিউলকে তার বাকি জিম্মি সহকর্মীদের কাছে নিয়ে যাওয়া। এসময় তাদের চোখ বেঁধে ফেলা হয়। এরপর সুফিউলকে রুস্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর গত বছরের ঈদুল আজহার পরে রুস্টারে ফেরানো হয় তার সহকর্মীদের। যাদেরকে এতদিন তাঁবুতে রাখা হয়েছিল।
২০২২ সালের আগস্টের আগে সুফিউল জানতেন না যে কে তাকে অপহরণ করেছে। ভিডিও স্ক্রিপ্টের মাধ্যমে প্রথমে জানতে পারেন তিনি একিউএপির হাতের বন্দী আছেন।
নিরাপত্তার কারণে তার বন্দীদশা এবং উদ্ধার সম্পর্কে আরও বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হবে না।
অবশেষে পরিবারের সাথে দেখা
চলতি আগস্টের শুরুতে জাতিসংঘের কাছ থেকে একটি কল আসে সাকিফের কাছে। তাকে জানানো হয়, নতুন খবর আছে। সাকিফ তখন জানতে চান, এটি কি ইতিবাচক খবর? তখন কোন মন্তব্য করা হয়নি।
ফোন কলের অপর প্রান্তে সাকিফ তার বাবার কণ্ঠ শোনার তিন ঘন্টার মধ্যে, সে তার মায়ের সাথে টরন্টো থেকে ঢাকার একটি ফ্লাইটে ওঠেন। সাকিফের স্ত্রী ও শিশুপুত্র আগে থেকেই ঢাকায় ছিলেন।
সুফিউলের মেয়ে দুর্ভাগ্যবশত ফ্লাইটে ধরতে পারেননি এবং পাসপোর্টের কাগজপত্রের কারণে টরন্টোতে থেকে যায়।
সুফিউল ৯ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকায় আসেন, যেখানে তাকে এনএসআই এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এনএসআই পরিচালক এমরুল মাহমুদ বলেন, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর আমাদের উদ্ধার প্রচেষ্টা সফল হয়। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবি করেছিল, কিন্তু আমরা কোনো টাকা দেইনি।
এরপর সুফিউল তার বাসার দিকে রওনা হন। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি আবার বিমানবন্দরে ফেরেন স্ত্রী আর ছেলের সাথে দেখা করতে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাকে এস্কর্ট করে। নাসরিন আনাম বলেন, 'আমি ফ্লাইটে মোটেও ঘুমাতে পারিনি।
পরের দিনগুলিতে, সুফিউলের পরিবার প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করে। সাকিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত ছিলেন।
সুফিউল বলেন, বন্দীকালে আমি তাদের (স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি) কথা ভাবতাম।
তাকে মুক্ত করার জন্য নিজের দেশে কি চলছে সে সম্পর্কে কোন জ্ঞান ছিল সুফিউলের। তিনি বলেন, কূটনীতিক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনএসআই, সেনাবাহিনী, জাতিসংঘ এবং আরও অনেক মিলিয়ে এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ছিল।
সুফিউলের ঘটনাটি অনেক দিক থেকেই ছিল অনন্য । কারণ তারাই আল-কায়েদার হাতে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় বন্দী থাকা ব্যক্তি।
সুফিউল বলেন, আমি জানতে পেরেছিলাম সর্বশেষ অপহরণে তিন-চার মাস বন্দী রাখা হয় জিম্মিদের। আমি এটাকেই সাধারণ হিসেবে ধরে নেই এবং অপেক্ষা করতে থাকি। তারপর কয়েক মাস কেটে যায়। মুক্তি পাওয়ার খবর নেই। তারপর আমি জানলাম সর্বোচ্চ ১৩ মাস কোন জিম্মিকে বন্দী রাখা হয়েছিল। তাই আমি আবার অপেক্ষা করতে থাকলাম। আমাদেরটা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
সুফিউল বলেন, 'মানুষের মৃত্যুতে শোক করা এক জিনিস। কিন্তু আপনার প্রিয়জনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে জিম্মি করে রাখা হয়েছে তা জানাটা সম্পূর্ণ অন্য জিনিস।
আপনারা কি তার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভয় পেয়েছিলেন? সাকিফ বলেন, আমার মনে আছে অপহরণের শুরুর দিকে জাতিসংঘের একজন আমাকে বলেছিলেন 'আমরা উদ্বিগ্ন নই কারণ এটি সুফিউল। কেউ যদি এই পরিস্থিতি সামলাতে পারে, সেটা তিনিই।