আন্দোলনের মুখে উপাচার্য নাসিরের পদত্যাগ
অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে থাকা গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন পদত্যাগ করেছেন।
সোমবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
রোববার বিকেলে নাসিরউদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের পদ থেকে অব্যাহতি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। কমিশনের ৫ সদস্যের একটি দল তদন্ত শেষে নাসিরউদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়া এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। পরে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় ইউজিসি।
সুপারিশের পর ওই রাতেই কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসের বাসা ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ভিসি নাসির। তার কয়েকঘন্টার মধ্যে এই উপাচার্যের পদত্যাগের ঘোষণা আসলো।
গোপালগঞ্জের বাসিন্দা অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন ২০১৫ সালে নিজে জেলায় স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
ফেসবুকে লেখালেখিসহ বহু ঘটনায় শিক্ষার্থীরা এই উপাচার্যের তোপের মুখে পড়তেন।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি গণমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ-জোহরা জিনিয়াকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং উপাচার্য নাসিরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
এরমধ্যে ওই ছাত্রীর সাথে উপাচার্যের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ওই অডিওতে শোনা যায়, উপাচার্য নাসির ওই নারী শিক্ষার্থীকে বকাঝকা ও হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তার বাবাকে নিয়েও তীর্যক মন্তব্য করেছেন।
এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি মেনে নিলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়।
২১ সেপ্টেম্বর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে হল খালি করার নির্দেশ দিলে শিক্ষার্থীরা ইস্তফা না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়। আন্দোলনের মধ্যে ওইদিন স্থানীয় বহিরাগত লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে ২০ শিক্ষার্থীকে আহত করে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেন। এরপর শুরু হয় উপাচার্য নাসিরের পদত্যাগের দাবিতে একদফা আন্দোলন।
পুরো ঘটনা আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি রোববার তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার একদিন পর সোমবার উপাচার্যের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ভিসি নাসিরউদ্দিন।