ঈদের নতুন জামা পরা হলো না আবিরের
বুধবার বেলা ১২টা। গাজীপুর থাকা পোশাক শ্রমিক শরিফুল ইসলামের কাছে ফোন করে তার পাঁচ বছর বয়সী সন্তান আবির জানতে চায়, বাবা তুমি বাড়িতে কবে আসবে? উত্তরে তিনি বলেন, কাল আসব বাবা। নতুন কাপড়সহ বাবা আসছে জানতে পেরে আবিরের খুশি দেখে কে। বন্ধুদের জানিয়ে দেয়, নতুন কাপড় পড়ে সে ঈদের নামাজ পড়বে, ঘুরবে।
কিন্তু নতুন কাপড় আর পড়তে পারলো না আবির। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তার বাবার। বৃহস্পতিবার সকালে রডভর্তি ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছিল আবিরের বাবা শরিফুলসহ আরও ১৯ জন। গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে সেই ট্রাক উল্টে ১৩ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে শরিফুলও ছিলেন। আহত ছয়জন বর্তমানে গাইবান্ধার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পড়তে যেতে পারবে না আবির। তার মাও শোকে পাথর। কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের ছোট্ট বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। হৃদয়বিদারক এ দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ এলাকার মানুষ।
বুধবার চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ওই ট্রাকটি ওইদিন রাতে পৌঁছায় গাজীপুরে। সেখান থেকে তিন শিশুসহ ১৯জন ট্রাকের ছাদে ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা বিশেষ জায়গায় উঠে বসে। মূলত পুলিশের চোখ এড়াতেই ত্রিপল দিয়ে বিশেষ ওই জায়গা তৈরি করা হয়। তার পরই বাড়ির উদ্দেশে রওনা। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছাতে পারলেন না কেউই। গাইবান্ধার পলাশবাড়ি আসার পর গাড়িটি উল্টে গেলে সেখানেই মারা যান ১৩ জন। বাকি ছয়জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই ট্রাকটি (ঢাকা-মেট্রো-ট-১৩-৫৬৯৮) অবৈধভাবে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। ত্রিপল দিয়ে ঘিরে রাখার কারণে ট্রাকের ছাদে কেউ আছে কিনা তা বোঝার উপায় ছিল না। তবে একটি গাড়ি সকাল ৮টায় উল্টে গেছে জানতে পেরে পুলিশ যখন ট্রাকটি উদ্ধার করতে যায় তখন একে একে ১৩টি লাশ বেড়িয়ে আসে। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে তিন শিশুসহ ১০জন শ্রমিক ছিলেন। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে চিকিৎসা বাবদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
নিহত ১৩ জন হলেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ধারাকান্দা গ্রামের সামছুল আলম (৬৫), সোয়াইব মিয়া (৭), উপজেলার ডাসার পাড়া গ্রামের আবদুল হান্নান (১৮), মনিরুল ইসলাম (২০), শানেরহাট বড়পাহারপুর গ্রামের একই পরিবারের এরশাদ আলী (৩৫), তার দুই ছেলে আকাশ মিয়া (১৫) ও ওবায়দুল ইসলাম (৮), ধল্লাকান্দি গ্রামের আল আমিন (১৭), ইছাহাক খান (১৪), বড় আলমপুর ষোল ঘড়িয়া গ্রামের ইমরান (২২)।
এছাড়া রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম (২৫), কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার পরপুড়া গ্রামের মিজানুর রহমান ও গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ছোট ভগবানপুর গ্রামের আব্দুল মোত্তালিব (২৩)। নিহতের সকলেই বিভিন্ন গার্মেন্টস-কারখানা ও কৃষি শ্রমিক ছিলেন।
অন্যদিকে উপজেলার শানেরহাট বড়পাহারপুর গ্রামের এরশাদ আলী (৩৫) ও তার ছেলে ওবায়দুল ইসলাম (৮) ও ছোট ভাই আকাশ মিয়া (১৫) ছিলেন ওই ট্রাকটিতে। একদিন আগে আকাশ তার মাকে ফোন করছিলেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে। তারা বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়বেন বলে জানিয়েছিলেন।
রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানান, ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা হাইওয়ে থানায় মামলা হয়েছে। চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।