একাত্তরে কারাজীবনের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার কথা বাবা কোনোদিন বলেননি: শেখ হাসিনা
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু তাঁর কারাজীবনের দুঃখ-কষ্টের কথা সন্তানদের কাছে কখনো বলতেন না বলে তাঁর বড় মেয়ের কন্ঠে উঠে এসেছে।
বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "তাঁর সে সময়ের কারাজীবনের কোন কষ্ট, কোন দুঃখ, কোন যন্ত্রণার কথা কখনই তিনি বলেননি। যতটুকু জেনেছি তাঁর লেখা পড়ে, এর বাইরে আর কোন কিছু জানতে পারিনি।"
বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে (বাজেট) নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, "রেহানা ছোট ছিল বিধায় এসব বিষয়ে সে বাবাকে অনেক সময় জিজ্ঞেস করতো, যা আমরা সাহস পেতাম না। এই কয়েকদিন আগেও তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি, তুই কিছু শুনিস নাই?"
ছোটবোন শেখ রেহানার বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "আব্বাকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি বলেন তোর শোনা লাগবে না, শুনলে তোরা সহ্য করতে পারবি না। কাজেই আমি (বঙ্গবন্ধু) বলব না।"
তিনি বলেন, "সে সময়ের শুধুমাত্র একটা লাইন পাওয়া যায় আইযুব খানের একটি ডায়েরিতে, যেটা অক্সফোর্ড থেকে বের হয় সেখানে বলা হয়- 'বঙ্গবন্ধুকে যখন আদালতে আনা হতো তিনি আসতেন, তাঁকে বসতে দিলে বসতেন এবং তিনি কোর্টে এসে দাঁড়িয়েই নাকি জয় বাংলাদেশ বলতেন এবং বলতেন আমাকে যা কিছু করার করো, কিন্তু আমার যেটা করার আমি করে ফেলেছি-বাংলাদেশের স্বাধীনতা, এখন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "কারাগারের রোজনামচা ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা গ্রেপ্তার হবার পর কারাগারে বসে লেখা। যেটা ছিল '৬৮ সাল পর্যন্ত। যার একটি ছোট অংশ সে সময় ক্যান্টনমেন্টে বন্দি অবস্থায় তিনি লিখেছিলেন। তবে, একাত্তর সালের কোন লেখা নেই, পাইনি। '৭১ সালে তিনি যে কারাগারে ছিলেন তার আমরা কিছু জানি না।"
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী', 'কারাগারের দিনলিপি' এবং 'আমার দেখা নয়া চীন' বই এবং লেখনি থেকে জাতির পিতার জীবনের অনেক তথ্য পাওয়া গেলেও একাত্তর সালের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
সরকারপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডিক্লাসিফাইয়েড রিপোর্টস পুরোটা তিনি সংগ্রহ করেছেন। যেখানে বাংলাদেশের বিষয়টা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ঘরে থাকার সুবাদে সেগুলো কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে বের করে প্রিন্ট আউট করছেন এবং সেখানেও পাকিস্তানের কারাগারের কিছু রয়েছে কিনা তিনি দেখছেন।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, "ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না, কোনও না কোনভাবে সেটা সামনে আসবেই। আজকে সেই নামটা (বঙ্গবন্ধু) আবারও ফিরে এসেছে।"