এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ চট্টগ্রামের ৫টি পত্রিকা
পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনের জেরে চট্টগ্রামের ৫টি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা গত ৩০ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে। এক সপ্তাহ পার হলেও এসব পত্রিকা চালুর কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীরা অনিশ্চিতায় পড়ে গেছেন। প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে দৈনিক আজাদী ছাড়া অন্য চারটি পত্রিকার সাংবাদিকরা ঈদুল আজহার কোনো বোনাস পাননি।
পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে এর আগে গত ২৯ জুলাই নগরের ঘাটফরহাদাবাদে দৈনিক আজাদীর মালিক ও সম্পাদক এমএ মালেকের বাসার সামনে কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ, দৈনিক পূর্বদেশ ও বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় স্থানীয় পত্রিকা-সম্পাদকদের সংগঠন 'চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স'।
পত্রিকাগুলোয় কর্মরত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে লোকসানের অজুহাতে পত্রিকার মালিকরা ঈদুল ফিতরের পূর্ণাঙ্গ বোনাস দেয়নি। ঈদুল আজহায়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তাই সাংবাদিকদের সংগঠন সিইউজে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। আর এর জেরেই মালিকরা পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছেন।
দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার একজন সাংবাদিক জানান, ''ঈদুল ফিতরের ৫০ শতাংশ বোনাস কেটে রাখা হয়েছে। আন্দোলনের কারণে ঈদুল আজহার বোনাসও মেলেনি। পত্রিকার প্রকাশনাও বন্ধ। ভেবেছিলাম ঈদের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কিন্তু পত্রিকা প্রকাশের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। সব মিলিয়ে অনিশ্চিতার মধ্যে দিন কাটছে।''
সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন, আন্দোলনের আগে পূর্ণাঙ্গ বোনাসের দাবিতে পত্রিকাগুলোর মালিকদের কাছে বার বার চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি।
সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম জানান, ঈদুল ফিতরে এসব পত্রিকার সাংবাদিকদের অর্ধেক বোনাস দেওয়া হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সম্পাদকদের সংগঠন- চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা আলোচনায় বসেনি।
''ফের ঈদুল আজহায়ও অর্ধেক বোনাস দেওয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। এরপর আবারও চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স বরাবর চিঠি দেওয়া হয়, এতে কোনো সমাধান মেলেনি। পরে সংগঠনটির আহ্বায়ক দৈনিক আজাদীর মালিক ও সম্পাদক এমএ মালেকের সঙ্গে সিইউজের পক্ষ থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে পরে আলাপ করবেন বলে জানান। কিন্তু পরে তিনি আর কিছু জানাননি। তাই গত ২৬ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এবং ২৯ জুলাই আজাদীর মালিক ও সম্পাদক এমএ মালেকের বাসার সামনে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে'' বলেন ম শামসুল ইসলাম।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স আহ্বায়ক ও দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ''যারা আপনার অধীনে চাকরি করে, তারা যদি আপনার বাসার সামনে এসে অশালীন আচরণ করে, তাহলে আপনি প্রতিষ্ঠান চালু রাখবেন? আমি দোষ করলে আলোচনার টেবিল রয়েছে। কিন্তু বাসার সামনে এসে এভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারকে নিয়ে কথা বলার কোনো অর্থ নেই।''
পত্রিকা চালুর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পত্রিকা প্রকাশের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া পত্রিকা চালু করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।'
এদিকে আজ বুধবার (৫ আগস্ট) সকালে সাংবাদিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেছেন।
সিইউজের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইফতেখার ফয়সাল বলেন, ''বৈঠক চলছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।''