গ্রামীণ অর্থনীতিতে করোনার থাবা
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বগুড়ার উপজেলা সদরের পাশাপাশি গ্রামে হাল্কা যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতি বড় ধরনের সঙ্কটে পড়েছে।
আর্থিক সঙ্কটের কারণে কর্মজীবী অনেক নারী-পুরুষই এখন সরকারি সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অনেকেই সারাদিন দোকান খুলে রেখে হাত খরচের টাকাও সংগ্রহ করতে পারছেন না।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি বাজারে মোটর সাইকেল মেকানিকের কাজ করেন ইয়াকুব আলী। কয়েকদিন আগেও তিনি দিনে রোজগার করতেন কমপক্ষে ২০০ টাকা। গত দুই সপ্তাহ তার তেমন কোনো রোজগার নেই। বললেন, 'গত এক সপ্তাহ কোনো রোজগারই হয়নি, হাত খরচের টাকাও নেই।'
একই উপজেলার চরপাড়া গ্রামের রিকশা চালক শাহিন জানান, তিনি দিনে গড়ে আয় করতেন ২৫০ টাকা। গত এক সপ্তাহ তিনি করোনার ভয়ে রিকশা চালাতে পারেননি।
তিনি বলেন, 'এখন সংসার চালাতে হচ্ছে ধার দেনা করে। আর ধুনট পৌরসভা থেকে যে ১০ কেজি চাল পেয়েছি, তা-ই দিয়ে চালাতে হবে কয়েক দিন।'
ধুনট উপজেলা সদরে রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন ফরিদা খাতুন। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে মালিক প্রায় এক সপ্তাহ আগে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘরে খাবার না থাকায় ফরিদা এখন পুরোপুরি সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
ধনুট পৌরসভা থেকে সরকারি সহযোগিতার ১০ কেজি চাল নিতে এসে অশ্রুসজল চোখে তিনি জানালেন, এ সহযোগিতা অব্যাহত না থাকলে টিকে থাকা কঠিন হবে তার।
দুই সন্তান আর স্বামী সুশান্তকে নিয়ে খাদ্য সঙ্কটে আছেন ধনুট উপজেলা সদরের বাসিন্দা রিতা। স্বামী কর্মহীন হয়েছেন কয়েকদিন আগে। খাবারের সংস্থান করতে তিনি পৌরসভায় আসেন সরকারি সাহায্যের ১০ কেজি চাল নিতে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর গ্রামে রিকশা ভ্যান চালক মোয়াজ্জেম হোসেন দুই সপ্তাহ আগেও দিনে গড়ে রোজগার করতেন ৪০০ টাকা। আর এখন তিনি দিনে আয় করেন গড়ে দেড়শ টাকা।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ বাজারে সবজির ক্রেতা নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা। এ বাজারে বটবটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা দরে। আর শিম প্রতি কেজি ৮ টাকা।
এ বাজার থেকে ঢাকায় সবজি পাঠান পাইকারি বিক্রেতা আলতাফ হোসেন। তিনি জানান, ঢাকায় সবজির চাহিদা না থাকায় বিক্রি নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়।
তিনি বলেন, 'ঢাকা পাঠানোর জন্য যেসব সবজি কিনেছি, লোকসান কমাতে সেসব সবজি বিক্রি করছি কেনা দামেই।'
ধুনট পৌর মেয়র এ জি এম বাদশা জানান, তার এলাকায় দশ হাজার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু আজ থেকে ৫০০ জনকে সহযোগিতা দেওয়া শুরু হয়েছে।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দুস্থ ও দরিদ্রদের সহযোগিতা করা হবে।