গয়াল সংরক্ষণে ১০২ কোটি টাকার প্রকল্প
দেশের পাবর্ত্য অঞ্চলের গভীর বনের প্রাণী গয়াল সংরক্ষণ ও উন্নয়নে ১০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। পাঁচ জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট।
অনেকটা গরুর মতো দেখতে মাংসাশী প্রাণি গয়াল। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাবলাখালী, সাজেক উপত্যকা ও মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন পাহাড়ি বনে এর বিচরণ রয়েছে। ইদানীং অনেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গয়াল পালন করছেন।
বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে প্রাণীগুলোকে ধরে শিকারিরা। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ওরশ ও মেজবানিতে বেশি মাংসের জন্য গরু, মহিষের বদলে জবাই করা হয় গয়াল।
প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে গয়াল সংরক্ষণের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
ঢাকার সাভার, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, কক্সবাজারের রামু, রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়ি এবং চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাব থেকে জানা যায়, বিশুদ্ধ জাতের গয়াল সংগ্রহ করে পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে অনস্টেশনে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে। কমিউনিটি পর্যায়ে গয়ালের কৃত্রিম প্রজনন ও বাচ্চা উৎপাদন করা হবে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক খামারে বেশি মাংস উৎপাদনকারী গয়ালের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক খাদ্য, পুষ্টি, বাসস্থান ও পালনবিষয়ক বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়, দুর্গম এলাকায় থাকা গয়ালের রোগ নির্ণয়ে ডিজিটাল সেন্সরিং অ্যাপ তৈরি করা হবে। প্রতিটি উপজেলার কমিউনিটি পর্যায়ে দুই থেকে তিনটি ব্রিডিং কুল সোসাইটি গঠন করা হবে।
প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা ও প্রকল্প কর্মকতা ড. রেজিয়া খাতুন বলেন, “গয়াল বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। এটি খুবই কম প্রজনন করে। বনে থাকে বলে এদের খনিজে ঘাটতির কারণে কম প্রজনন করে থাকে। তাই প্রাথমিকভাবে ৬০টি গয়াল সংগ্রহের মাধ্যমে এ প্রকল্প শুরু হবে। আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ জেলার ১১টি এলাকায় খামারিদের গয়ালের রোগ, খাদ্য ও প্রজনন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, গরু, মহিষ ও গয়াল একই প্রজাতির প্রাণী; মাংসের স্বাদও প্রায় একই। কিন্তু গয়াল বন-জঙ্গলে দৌঁড়ায় বলে তাদের মাংসে চর্বিও খুবই কম।
তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে কতটি গয়াল আছে, তার কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আট থেকে ১০ জন খামারি বাণিজ্যিকভাবে গয়াল পালন করছেন।”