চট্টগ্রামের শেখ রাসেল পানি শোধনাগার উদ্বোধন
চট্টগ্রামের মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের গেইটের সামনে গেলে চোখে পড়বে নানা রঙের ফলদ ও ফুলগাছ। একটু এগিয়ে ভেতরে ঢুকলে আপনি প্রবেশ করবেন সবুজের রাজ্যে। যেখানে লাগানো রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ৩৫ হাজার গাছ। প্ল্যান্টকে পরিবেশবান্ধন রাখতে সোলারসহ খোলা স্পেস এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে সেখানে।
নগরবাসীর খাবার পানি সংকট দূর করতে আজ রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর পাড়ে মদুনাঘাট এলাকায় ১৪ একর জায়গা জুড়ে এ প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধান গেইটের সামনে রাস্তা দুপাশ থেকে শুরু হয়েছে এ সবুজায়ন। এর গেইট দিয়ে প্রবেশ পথে পশ্চিম পাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফুল গাছ। পূর্বপাশে ক্লোরিন চেম্বারের সামনেও রয়েছে বিশাল ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছ। এছাড়া পানির ফিল্টারিং ভবনের সামনেও রাখা হয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুলের গাছ। প্ল্যান্টের শেষ প্রান্তে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দীর্ঘমেয়াদী ফলদ গাছও।
নদীর পানি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানিতে পরিণত করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় আবার পানি থেকে বের হচ্ছে বিভিন্ন বর্জ্য ও কাদামাটি। এসব বর্জ্য যাতে নদীকে দূষণ করতে না পারে তার জন্য রাখা হয়েছে স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।
দৈনিক ৯ কোটি লিটার ধারণ ক্ষমতার এ প্ল্যান্টের প্রতিটি ভবনের সামনে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। এছাড়াও পুরো প্ল্যান্টে লাগানো হয়েছে সোলার প্ল্যানসহ ৫৬টি এলইডি বাতি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এ প্ল্যান্টের কাজ করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রতিষ্ঠানটির সময় লাগে তিন বছর।
প্ল্যান্টে দীর্ঘমেয়াদী প্রায় ১২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে আম, আমড়া, জলপাই, পেয়ারা, ডালিম, ক্রিসমাস ট্রি, দ্বেবদারু এবং বিদেশি পাম ট্রি ইত্যাদি। সৌন্দর্য্যবর্ধকসহ বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজারের মতো। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২ হাজার ফুলের গাছ। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে রঙ্গন, গাদা, গোলাপসহ বিদেশি বিভিন্ন ফুল।
সাতজন মালি নিয়মিতভাবে এসব গাছের দেখভাল করছেন। গাছ ও ফুলে নিড়ানী দিয়ে কাজ করা জহিরুর আলম বলেন, আমাদের কাজই হচ্ছে এসব দেখাশোনা করা। তাই নিয়মিত পানি দিয়ে ও আগাছা পরিষ্কার করে বাগান সাজিয়ে রাখি। একাজ করতে ভালোও লাগে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবুজ অবকাঠামো বলতে এক ভবন থেকে অন্য ভবনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রাখা। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সোলার প্ল্যানের এলইডি বাতি ব্যবহার করা এবং গাছ-গাছালির মাধ্যমে সবুজায়ন করা। এছাড়া গ্রিন ডেভেলপমেন্ট বলতে যে কোনো উন্নয়নে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব না পড়াকে বোঝায়। যেখানে থাকে উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং শব্দ দূষণমুক্ত এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছুই না থাকা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি রেজাউল করিম বলেন, সবুজ উন্নয়ন বলতে যেখানে সবকিছুই পরিবেশবান্ধন। যেখানে থাকবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন বনায়নও। এছাড়াও উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম ও ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গমনমুক্ত এবং কার্বন নিঃস্বরণ কমানোর জন্য বায়ু এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। বড় প্রকল্পগুলোকে সবুজ ও টেকসই প্রকল্প হিসেবে নেওয়া উচিত। কারণ পরিবেশ ঠিক না থাকলে আমাদের সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়বে।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্পের উপ-পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, এটি একটি পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প। কারণ এ প্রকল্পের পাশে রয়েছে হালদা নদী। তাই সবকিছুই পরিবেশসম্মতভাবে রাখা হয়েছে এ প্ল্যান্টে। এ জন্য আমরা অনেক খোলা জায়গা রেখেছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্ল্যান্টে সবুজায়ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই অনুয়ায়ী তারা সবুজায়নও করেছে। আমরা এখন এগুলো নিয়মিত পরিচর্যার জন্য প্ল্যান্টের লোকবলকে নির্দেশ দিয়েছি।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড সেনিটেশন প্রজেক্ট এর অধীনে চট্টগ্রাম ওয়াসার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এক হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এক হাজার ৪৯৪ কোটি ৯০ লাখ, বাংলাদেশ সরকার ৩৭০ কোটি ৩৭ লাখ ও চট্টগ্রাম ওয়াসা ২২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দিয়েছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে প্ল্যান্টটি চালু করা হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। পরে প্রকল্পটি নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শেখ রাসেল পানি শোধনাগার।