চট্টগ্রামের ১৩ সাংবাদিক করোনা আক্রান্ত, দ্রুত বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা
চট্টগ্রামে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীরাও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
আজ বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৩ জন সাংবাদিক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মঙ্গলবারই আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ সাংবাদিক। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন।
আক্রান্তদের বেশিরভাগই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক। এদের মধ্যে যমুনা টিভি, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, সময় টিভি, চ্যানেল আইয়ের সংবাদকর্মী রয়েছেন। এছাড়া প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে দেশ রূপান্তর পত্রিকা, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক কর্ণফুলী, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিভয়েসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে শুধু একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা বাসায় ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চট্টগ্রামে আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে বেশিরভাগই উপসর্গহীন। ফলে সংবাদকর্মীরা করোনাভাইরাস বহন করলেও সেটি জানছেন না।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান অনুপম শীল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমাদের চারজন সহকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তারমধ্যে তিনজন উপসর্গহীন। আমরা যারা সুস্থ আছি, তারা ব্যুরো অফিসের পরিবর্তে অন্য একটি টিভি চ্যানেলের অফিস থেকে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আক্রান্তরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন। তবে সামাজিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। আক্রান্ত হওয়ার পর লোকজন নানাভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার বার্তা বিভাগের একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, আমাদের একজন সহকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন ঈদুল ফিতরের ছুটি চলছে। তাই লকডাউনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এরআগে গত ১২ মে চট্টগ্রামের এক সংবাদকর্মী করোনভাইরাসে আক্রান্ত হন। তিনি সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সংবাদদাতা।
গত ১৯ মে থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) উদ্যোগে সাংবাদিকদের করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রেসক্লাবে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এরপর থেকে মূলত সংবাদকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এপর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৩ জন সংবাদকর্মী করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক। উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত সাংবাদিকের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া দিন দিন নগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে আমরা চিন্তিত।
ইতোমধ্যেই সাংবাদিকদের জন্য আলাদাভাবে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি আলাদাভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্যেও চেষ্টা চলছে, বলে জানান তিনি।
ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় জনবহুল শহর চট্টগ্রাম। প্রায় ৬০ লাখ মানুষ এই নগরে বসবাস করেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের পর করোনার নতুন হটস্পট এখন তাই চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম একটি ঘিঞ্জি শহর। তাই আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে সাংবাদিকদের কাজ করতে হচ্ছে। বিপজ্জনক এলাকায় কাজ করলেও সাংবাদিকদের সেইভাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক বলছেন চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এরমধ্যে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রেসক্লাবে আলাদাভাবে সংবাদকর্মীদের জন্য নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা হয়েছে।