ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাবনত জাতি
মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে যারা পুলিশের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন বাংলা মায়ের সেই সব সাহসী সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করছে বাংলাদেশ।
আজ থেকে ৬৮ বছর আগের এই দিনে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে আসে ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ। বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তারা বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তোলে, 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'।
মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তাদের রক্তের স্রোতধারায় এর চার বছরের ব্যবধানে বাংলা স্বীকৃতি পায় পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার।
একুশের শহীদদের এই আত্মদান নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিম তার 'বায়ান্নরও আগে' প্রবন্ধে লিখেছেন 'বরকত, সালামকে আমরা ভালবাসি। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা বরকত সালাম আমাদের ভালবাসে। ওরা আমাদের ভালবাসে বলেই ওদের জীবন দিয়ে আমাদের জীবন রক্ষা করেছে। ওরা আমাদের জীবনে অমৃতরসের স্পর্শ দিয়ে গেছে। সে রসে আমরা জনে জনে, প্রতিজনে এবং সমগ্রজনে সিক্ত'।
৫২'র এই আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এরপর ১৯ বছর বাঙালীরা লড়াই করেছে পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের নয় মাসের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে সারা বিশ্বেই পালিত হচ্ছে দিবসটি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় বাজছিল অমর সেই গান 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি.."
এরপর স্পিকার, আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলীয় নেত্রী, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান, ঢাকাস্থ বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনার এলাকার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিনটি জাতীয় ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।