ভুয়া সার্টিফিকেটে নারী নির্যাতন মামলা, ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের লিগ্যাল নোটিশ
ভুয়া মেডিক্যাল সার্টিফিটেক নিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। গত বছরের ১৪ নভেম্বর সাতকানিয়ার বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম ও তার পরিবারের আরও তিনজনকে আসামি করে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটি দায়ের করেন তার স্ত্রী।
ভুয়া মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে মামলা করায় এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন বরাবর একটি আবেদন করেন শরীফুল ইসলাম। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জনের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করেন লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ।
সরেজমিন তদন্তে ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেট নিয়ে মামলা দায়েরের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সিভিল সার্জন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি।
তদন্তে উঠে আসে, আদালতে মিথ্যা মামলার কাজে ব্যবহারের জন্য জালিয়াতি করে প্রেসক্রিপশনও দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ কল্যাণ বৈলতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। সিভিল সার্জনের তদন্ত রিপোর্ট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার শরীফুল ইসলামের পক্ষে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে জালিয়াতি করে প্রেক্রিপশন দেওয়া ও চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, গ্রামীণ কল্যাণ বৈলতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জালিয়াতি করে দেওয়া প্রেসক্রিপশন দিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উক্ত মামলার বিবাদী শরীফুল ইসলাম গত বছরের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন বরাবর একটি আবেদন করেন। সে আবেদন তদন্তে উঠে আসে গ্রামীণ কল্যাণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নানা অনিয়মের তথ্য। গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, গ্রামীণ কল্যাণ বৈলতলী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেন্টার কো-অর্ডিনেটর হাসিবুর রহমান ও চন্দনাইশের বাসিন্দা শারমিন সুলতানা প্রমিকে নোটিশের 'প্রাপক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ৩০টি জেলায় ১২৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণ। এর মধ্যে গ্রামীণ কল্যাণ বৈলতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত একজন চিকিৎসা সহকারী 'ডা.' পরিচয় দিয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। এসব প্রেসক্রিপশনে এখতিয়ারের বাইরের ওষুধও লিখছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, নারী নির্যাতন মামলা করার সময় উপস্থাপন করা উক্ত প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন মো. হাসিবুর রহমান। অথচ সেদিন শুক্রবার (১ নভেম্বর) ছুটির দিন হওয়ায় গ্রামীণ কল্যাণ বৈলতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বাভাবিক নিয়মে বন্ধ ছিল। যার কারণে রোগী রেজিস্ট্রারে ১ নভেম্বর কারও নাম উল্লেখ নেই।
আরও উল্লেখ করা হয়, ডিএমএফ ডিগ্রিধারী চিকিৎসা সহকারী মো. হাসিবুর রহমান গ্রামীণ কল্যাণ বৈলতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেন্টার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে রয়েছেন। চিকিৎসা সহকারী হয়েও হাসিবুর রহমান নিজেকে 'ডা. (ডাক্তার)' উল্লেখ করে স্বাক্ষর-সিলসহ শরীফুলের স্ত্রী শারমিনকে উক্ত প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। এমনকি কথিত রোগী শারমিনকে না দেখেই হাসিবুর প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, যা দিয়ে পরে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়।