মৌলভীবাজারে পর্যটন ব্যবসার ধস, ঋণে আটকা ব্যবসায়ীরা
সারাবছর পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও শীত মৌসুমে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ এবং প্রতি ঈদের ছুটিতে রীতিমত ঢল নামে।
ঈদের ১০/১৫ দিন আগে থেকেই বুকড হয়ে যায় জেলার প্রতিটি হোটেল রিসোর্ট। জেলার অন্য এলাকার পাশাপাশি পর্যটকদের সব চেয়ে বেশী ভিড় থাকে শ্রীমঙ্গল –কমলগঞ্জে।
এ সব এলাকার প্রায় ৭০টি হোটেল রিসোর্টের মৌসুম ঈদের সময় । কিন্তু চলমান করোনাসংকটের কারণে সারাদেশে কার্যত লকডাউন থাকায় এই বছর নেই সেই আমেজ বরং দীর্ঘদিন পর্যটকের আগমন বন্ধ থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে এই এলাকার পর্যটন শিল্প।
ফলে কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। ট্যুর গাইডরা অপেক্ষা করছেন সুদিনের।
প্রতি ঈদে বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মৌলভীবাজারে সব চেয়ে বেশী পর্যটক দেখা যায় কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মনিপুরী পাড়ায় এবং শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চাবাগান ও বাইক্কাবিল, কুলাউড়ার কালাপাহাড়, হাকালুকি হাওরে। এই পর্যটকদের ৯৫% থাকার জন্য বেছে নেন কমলগঞ্জ- শ্রীমঙ্গলের প্রায় ৭০টি হোটেল রিসোর্টকে।
এ সব হোটেল-রিসোর্ট প্রতি বছর ঈদের সময় কয়েক হাজার পর্যটক আগাম বুকিং দিয়ে রাখেন । কিন্তু এই বছর পর্যটকের সংখ্যা শূন্য শতাংশ। সেই সাথে দীর্ঘদীন বন্ধ থাকায় পুঁজি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মচারী রাখতে হচ্ছে। যেহেতু কোন আয় নেই তাই পুঁজি ভেঙ্গে বেতন দিতে হচ্ছে ।
এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের পরিচালক সজল দাশ বলেন, "আমার ব্যংক লোন আছে ২ কোটি ২০ টাকা। মার্চের ১১ তারিখ থেকে আমার রিসোর্ট বন্ধ। কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছি কিন্তু তাদের বেতন তো দিতে হচ্ছে । এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিলের জন্য চাপ আসছে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের ঋণের জালে যেভাবে আটকে যাচ্ছি সরকারের সহযোগিতা ছাড়া বের হতে পারবনা। উল্টা পুঁজি হারানোর ভয়ে আছি।"
শ্রীমঙ্গল শহরের গ্রীন লিফ রিসোর্টের পরিচালক এস কে দাস সুমন জানান, গত বছর তার রিসোর্টের ঈদের ১ মাস আগেই সব বুকড হয়ে যায়। তার রিসোর্টের বেশীরভাগ বিদেশীরা আসেন । ঈদের সময়টাকে ব্যবসার উল্লেখযোগ্য সময় হিসেবে সারা বছরের প্রস্তুতি থাকে কিন্তু এই বছর করোনা সংকটের কারণে সেই সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, "উল্টো ঝুকিতে পড়েছে আমার ব্যবসা। পরিবারের অন্য খাত থেকে টাকা এনে কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা বছরে কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ট্যাক্স দেই । কিন্তু বিপদের এই সময় আমরা সরকারের কোন সাহায্য পাচ্ছিনা।
হোটেল মেরিনার পরিচালক নাজমুল হাসান মিরাজ বলেন, "আমার হোটেলটি ভাড়া নিয়ে করেছি। মাসিক ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কর্মচারীদের বেতনসহ মাসিক খরচ আড়াই লাখ টাকা। বর্তমান অবস্থায় ঋণে জড়িয়ে পড়েছি। সরকারের সাহায্য ছড়া এই অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারবনা।"
পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটান ট্যুরগাইডরা কিন্তু এ বছর তাদের ফোনে কল আসছেনা ।
লাউয়াছড়ার ট্যুর গাইড সাজু মারচিয়াং জানান, ঈদের ২ মাস আগে থেকেই অনেকে ফোন দেন । কেউ কেউ বিকাশে অগ্রিম দিয়ে রাখেন। সব কাভার দেওয়া যায়না বলে তখন আমরা মৌসুমী মানুষ রাখি, কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত কোন ফোন আসেনি।
পর্যটন সেবা সংস্থা শ্রীমঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক জানান, আমার রিসোর্টগুলাতে গত বছর ২ মাস আগেও অনেকে বুকড করেছেন। পরিচিত অনেককে শেষ মুহুর্তে দিতে পারিনি বলে তাদের মন খারাপ হয়। কিন্তু এই বছর উল্টা চিত্র। শুনেছিলান প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা থেকে আমাদেরকেও দেওয়া হবে কিন্তু কবে হবে বা হবে কিনা নিশ্চিত নই। যেভাবে আমরা লসের মুখে পড়েছি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে প্রণোদনা দরকার।