রমজানের জন্য প্রস্তুত খাতুনগঞ্জ, দামও কম
রোজায় চাহিদাসম্পন্ন নিত্যপণ্য ছোলা, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, ভোজ্য তেল ও খেজুর আসতে শুরু করেছে বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। গতবারের তুলনায় এসব পণ্যের দাম এবার কম। চাহিদার চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, আড়তগুলোতে রমজানের চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ আমাদানিকারকের পণ্য আড়তে ঢুকে গেছে।
আড়তদাররা জানিয়েছেন, ছোলা চাহিদার তুলনায় বেশি বেশি হয়েছে। অন্যান্য বছর ছোলার দামটা চড়া থাকলেও এবার রেট নাগালে থাকবে। ডাল, তেলও পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। আড়তে বেশিরভাগ ছোলা আমদানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। কিছু কিছু কানাডা, তিউনিশিয়া, মিয়ানমারের ছোলাও রয়েছে। বেশিরভাগ খেজুর আমদানি হয়েছে মিশর থেকে এবং আরব আমিরাত থেকে।
বাজারে মণপ্রতি অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা। চিনি মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। এ ছাড়া পাম তেল মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। মণপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৩১০০ থেকে ৩২০০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খেজুর মানভেদে প্রতি প্যাকেট (১ প্যাকেটে ১০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা।
গতবার ছোলা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা, পাম তেলের মণপ্রতি ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা, সয়াবিন তেল মণপ্রতি ৩২০০ থেকে ৩৩০০ টাকা, মানভেদে প্রতি প্যাকেট খেজুর বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা বিক্রি হয়।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারের দাম কম হওয়ায় এবার রোজার পণ্যগুলোর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এ ছাড়া ছোলাসহ কিছু পণ্যের দাম গতবারের তুলনায় কমবে। ভোগ্যপণ্যের দেশের বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বাশাল চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত পণ্য এসেছে। দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রমজান চাহিদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যগুলোর আমদানি ও মজুত ভালো হয়েছে। অস্বাভাবিক কারসাজি না হলে দাম কম থাকবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরে ছোলার চাহিদা ২ লাখ থেকে সোয়া ২ লাখ টন, এর মধ্যে কেবল রমজানেই ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টন। বছরে প্রায় ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। খেজুরের চাহিদা ২০ হাজার টন। এ ছাড়া চিনির চাহিদা রয়েছে ১৪ থেকে ১৬ লাখ টন। ভোজ্যতেলের চাহিদাও ১৮ থেকে ২০ লাখ টন।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের কর্ণধার ও খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চাহিদার দ্বিগুণ ছোলা আমদানি হয়েছে। দাম গতবছরের তুলনায় কম। তবে খেজুরের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা এসএম মহিউদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত রোজার চেয়ে এবারে মসুর ও মটর ডালের দাম কম।
একইভাবে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম এবার কম রয়েছে। খাতুনগঞ্জের বাদশা মার্কেটের আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহেদ উল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, চিনি ও তেলের দাম গত বছরের মতো। এবার পণ্য দুইটির পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে।
রোজায় মসলার জাতীয় পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ-আদার চাহিদা বেশি। এবার সেগুলোর দাম কম থাকবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিছ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রমজানে পেঁয়াজ এবং আদার দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এখন মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকলে সেটি অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম অনুযায়ী দেশের বাজারে রোজার পণ্যের দাম আরও কম হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, রমজানেও দেখা যায়, পাইকারি বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও খুচরা বাজারে কারসাজি করে কিংবা গুজব রটিয়ে দাম বাড়ানো হয়। তাই রমজানে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুচরা বাজারের ওপর মনিটরিং বেশি প্রয়োজন।
এদিকে, রমজানের আগে চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জ এসে ভোগ্যপণ্য কিনে নেন। তবে এবার বেচাকেনা নিয়ে হতাশ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বিক্রি কম।