সুনামগঞ্জে সড়কের ক্ষতি ১২০ কোটি টাকা, কুড়িগ্রামে বন্যার পানি বাড়ার শঙ্কা
পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জে ২১১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় জেলাব্যাপী সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অংকে ১২০ কোটি টাকা। তবে নিকটবর্তী জেলা নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি।
এদিকে উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী অবস্থায় আছেন হাজারও মানুষ। এরই মাঝে শঙ্কার কথা শোনালেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, মাসের মাঝামাঝিতে আবারও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে নদীতে পানি বাড়ার রয়েছে শঙ্কা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট:
বন্যায় সুনামগঞ্জের সড়কের ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি
সাম্প্রতিক বন্যায় সুনামগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং সড়ক বিভাগের প্রায় ১২০ কোটি টাকার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় সড়কের ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে জরুরি সংস্কারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বন্যায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় তিনটি উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন।
২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে প্রবল বন্যা হয়। এতে বিভিন্ন অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক বিভাগ এবং গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এলজিইডি এবং সড়ক বিভাগের তথ্য সংশ্লিষ্টরা সংগ্রহ করলেও বন্যায় ভেঙে যাওয়া গ্রামীণ সড়কের কোনো তথ্য সংগ্রহ হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে তাদের প্রায় ২০০ কিলোমিটার সড়ক। এতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় তাদের বিশ্বম্ভরপুর-কাচিরগাতি, নিয়ামতপুর-তাহিরপুর, জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক ডুবে যাওয়ায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছে সড়ক বিভাগ।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, 'বন্যায় আমাদের রাস্তাঘাটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তাছাড়া বন্যার পানি কমে গেলে সড়কে আরও ভাঙ্গন ধরতে পারে। জরুরি সংস্কারের জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি।'
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সড়কের প্রায় ১১ কিলোমিটার তলিয়ে গিয়েছিল। এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ক্ষতির একটি প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়েছি।'
উত্তরাঞ্চলের হাজার মানুষ পানিবন্দী
ভারত থেকে বয়ে আসা প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলের ছোট-বড় সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের জেলা কুড়িগ্রাম আর গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা কমলেও এখনো বেশির ভাগ মানুষই রয়েছেন পানিবন্দী অবস্থায়।
অন্যদিকে, বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সকাল ৬টায় ২১ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অন্যান্য নদ-নদীর পাশাপাশি বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫.৩ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে।
নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর পানি নিমজ্জিত থাকায় গবাদিপশুর পাশাপাশি ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ গবাদিপশুর খাবার নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সাজেদা বেগম জানান, তার বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। নিজেরা কষ্ট করে থাকলেও গরু-ছাগল ও অন্যান্য প্রাণীর থাকা খুব কষ্টকর। উঁচু সামান্য একটি সড়ক আছে ঠিকই, সেটাও যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
বগুড়ার সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার পাশাপাশি সারিয়াকান্দি উপজেলাতেই প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। বেশির ভাগ পরিবার সংকটে আছে নগদ টাকা ও শুকনো খাবারের। চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। দুর্গম চরাঞ্চলে শিশুখাদ্য আর বয়স্ক মানুষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দী সব মানুষ।
এলাকাবাসীর দাবী, সরকারি সহযোগিতা কিছু পেলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, উজানে ব্রহ্মপুত্র ও ভাটিতে যমুনার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও এ মাসের মাঝামাঝিতে আবারও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে নদীতে পানি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
নেত্রকোনায় ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি
নেত্রকোনা সদর ও কলমাকান্দা উপজেলার বন্যাপ্লাবিত এলাকা থেকে পানি ধীরগতিতে কমছে। তবে দুই উপজেলার প্রায় ৭০টি গ্রাম এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি প্রবাহ রোববারের চেয়ে কিছুটা কমেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান সোমবার বিকেলে জানিয়েছেন, কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া একই নদীর পানি বিজয়পুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬০ সেন্টিমিটার এবং দুর্গাপুর পয়েন্টে ২৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, জারিয়ায় কংস নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার ও খালিয়াজুরীতে ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।