চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় শনাক্ত দুইজনই ছাত্রলীগ কর্মী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত শনাক্ত দুইজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হাটহাজারী থানার ওসি মো. রুহুল আমিন সবুজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ছাত্রীর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পাঁচজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পেয়েছি।
এর মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এখন পর্যন্ত দুজনকে শনাক্ত করা গেছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।'
গত বুধবার বিকেলে এ ঘটনায় মামলা করেন যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় এই মামলায় অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর শহিদুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৫০ টির মত সিসিটিভি ক্যামেরা রাতের দৃশ্য ধারণ করতে পারে। সেই ক্যামেরা গুলোর চিত্র বিশ্লেষণ করেই অপরাধীদের শনাক্তের কাজ চলছে।
ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজে কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। সে সবের ভিত্তিতে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
এদিকে পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন এ ঘটনায় জড়িতরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। এদের মধ্যে একজন পুলিশ হেফাজতে আছে।
তিনি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, 'প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, সিসিটিভি ফুটেজ ও মোটর সাইকেলের নম্বর প্লেট বিশ্লেষণ করে পাঁচ অপরাধীর বিষয়ে জানা গেছে। এদের মধ্যে দুইজনের বিষয়ে পুরোপুরি শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে একজনকে ইতোমধ্যেই ডিবি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। জড়িতরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী।'
জড়িত আগামী দুই একদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হবে বলে আশা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তদন্ত কমিটি ও পুলিশ ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছে। আশা করছি আজ-কালের মধ্যে আমাদের মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে তারা গ্রেপ্তার হয়ে যাবে।'
রোববার (১৭ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন দুর্বৃত্তের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। ওই সময় তার সাথে থাকা তার বন্ধু বাধা দিলে তাকেসহ ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে হাটহাজারী থানায়। ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ব্যানারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনার পর ওই ছাত্রী প্রক্টর অফিসে অভিযোগ প্রদান করতে গেলে সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল তাকে বাধা দেন। এরপর এ ঘটনায় 'হস্তক্ষেপের' অভিযোগে 'শৃঙ্খলা পরিপন্থী' কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে রেজাউল হক রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এ বিষয়ে রেজাউল হক রুবেল বলেন, 'আমি এই অভিযোগ দিতে বাধা দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বিষয়টির সাথে আমাকে জড়িয়ে একটি মহল অপরাজনীতি করতেছে।'