গুমের নাটক সাজিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন মরিয়ম মান্নান ও তার পরিবার
বহুল আলোচিত রহিমা বেগম অপহরণের ঘটনায় মরিয়ম মান্নান, তার মা রহিমা বেগম ও বোন আদুরী আক্তারের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ (সোমবার) বেলা সাড়ে ১১টায় পিবিআই খুলনা শাখার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
মামলার তদন্ত শেষে আজ সকালে খুলনার মহানগর হাকিম আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, "তদন্তে রহিমা বেগমকে অপহরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং তদন্তে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে অপহরণের নাটক সাজানোর প্রমাণ মিলেছে। মূলত রহিমা বেগম অপহরণ হননি, তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন।"
পিবিআই কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রহিমা বেগম মোট ২৮ দিন আত্মগোপনে ছিলেন। এই ২৮ দিন তিনি বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করেছেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর দিবাগত রাতে নিজের মহেশ্বরপাশার বাসা থেকে আত্মগোপন করে তিনি ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর একটি ব্যাগে কিছু কাপড় ও ওষুধ দিয়ে মেয়ে মরিয়ম মান্নান তার মাকে বান্দরবান পাঠিয়ে দেন।
পুলিশ সুপার জানান, সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি চলে যান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলায় সৈয়দ গ্রামের জনৈক আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে। খবর পেয়ে ওই বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর প্রথমদিকে রহিমা বেগম কোনো কথা বলছিলেন না। অনেক চেষ্টার পর তিনি জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধিতার কারণ দেখিয়ে অপহরণের সাথে প্রতিবেশিরা যুক্ত ছিলেন বলে বিবৃতি দেন। পরবর্তীতে তাকে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দীর জন্য পাঠানো হলেও একই রকম বক্তব্য প্রদান করেন।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান আরও বলেন, "আমরা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছি। এক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ঘটনা ঘটার সাথে সাথে তাদেরকে ঘটনাস্থল মহেশ্বরপাশায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ শুধু জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে এই অপহরণ নাটক সাজানো হয়।"
গত বছরের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। সেদিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ আল সাদী। রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে পর দিন একই থানায় মামলা করেন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী আক্তার।
মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে পরিবারের পক্ষ থেকে সেই সময়ে বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীর নাম উল্লেখ করা হয়। তখন তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারও করেছিল। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। পরবর্তীতে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুর থেকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ।